Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
March 28, 2024
Homeযুক্তরাষ্ট্রআজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: কার মাথায় শোভা পাবে বিজয় মুকুট?

আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: কার মাথায় শোভা পাবে বিজয় মুকুট?

আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন: কার মাথায় শোভা পাবে বিজয় মুকুট?

শিতাংশু গুহ


আজ মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০২০ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনের ফলাফল এতটাই অনিশ্চিত যে আধুনিক ইতিহাসে এর দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। উভয় পক্ষই বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। বিভিন্ন জরিপে বাইডেন এগিয়ে আছেন দেখানো হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাটেলগ্রাউন্ড ষ্টেটগুলো নির্ধারণ করবে বিজয়ের মুকুট কার মাথায় শোভা পাবে?

রবিবার ১  নভেম্বর সশরীরে আগাম ভোট শেষ হয়েছে। রেকর্ড ৯০ মিলিয়ন মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০১৬-তে যত ভোট পড়েছে, এবার তার ৬৫ ভাগ মানুষ আগেই ভোট দিয়েছেন। তাই নির্বাচনের দিন ভীড় কম হবার সম্ভবনা বেশী। তবে এবার ফলাফল নির্বাচনী রাতে নাও পাওয়া যেতে পারে, এবং ফলাফল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ানোর সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

ন্যাশনাল পর্যায় জরিপে দেখানো হচ্ছে, বাইডেন ৮ ভাগ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন (৫২-৪৪), যদিও এরাই আবার বলছেন, এরপরও ট্রাম্প জিততে পারেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হ’ন ইলেকটোরাল ভোটে, অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জাতীয় পর্যায়ে হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রাজ্য পর্যায়ে। ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোটের মধ্যে যিনি ২৭০টি পান, তিনিই লটারি হিট করেন।

শনিবার, রবিবার ট্রাম্প ও জো বাইডেন আমেরিকার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন। ট্রাম্পের জনসভায় করোনা উপেক্ষা করে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ যোগদান করেছে। বাইডেন তেমন বড় জনসভায় যোগ দিচ্ছেন না। এবারকার নির্বাচন হচ্ছে, ট্রাম্প ভার্সেস অ্যান্টি ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে, বাইডেন বড় কোনও ফ্যাক্টর নন?

নির্বাচনে উভয় পক্ষ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ডেমোক্রেটরা বলছেন, ট্রাম্প পরাজিত হলে ক্ষমতা ছাড়বেন না, তাই সংঘাত অনিবার্য। রিপাবলিকানরা বলছেন, বাইডেন জিতলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হবে। অনেকের অভিযোগ, রাশিয়া ও ইরান এবার মার্কিন নির্বাচনে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারে চেষ্টা করছে?

ফ্লোরিডা ও টেক্সাস এবার নির্বাচনে কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ফ্লোরিডা কে জিতবে তা কেউ নিশ্চিত নন, টেক্সাসও তাই। তবে ‘কুক পলিটিক্যাল রিপোর্ট এবং ‘ইনসাইড ইলেকশন’ বলেছে, টেক্সাস নীল বা বাইডেনের পক্ষে যাচ্ছে। ভার্জিনিয়া ইনভার্সিটির ল্যারি সাবাটা উল্টো বলছেন, টেক্সাস লাল হচ্ছে। টেক্সাসের ইলেকটোরাল ভোট ৩৮টি, বাইডেন টেক্সাস জিতলে হোয়াইট হাউস জিতবেন।

ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থাকতে হলে টেক্সাস ও ফ্লোরিডা জিততে হবে। আমার ধারণা তিনি জিতবেন। ২০১৬-তে যারা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, তারা এখনও ট্রাম্পের পেছনে একাট্টা। কালোদের ভোট এবার তিনি বেশি পাবেন। কোভিড ছাড়া তার বিরুদ্ধে বলার কিছু নেই। কোভিডের আগে বেকারত্ব ছিল সর্বনিন্ম ৩.৬ ভাগ, অর্থনীতি ছিল তেজী ঘোড়া। বহির্বিশ্বে ট্রাম্প জনপ্রিয় নন, কিন্তু তিনি সঠিক।

পেনসিলভানিয়ায় এক বিশাল সমাবেশে ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেন শুধু কোভিড, কোভিড করছেন, এছাড়া তার আর কিছু বলার নেই! তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন আসছে। তিনি আরও বলেন, আমরা পেনসিলভানিয়া জিতলে রেস ওভার, আমরা হোয়াইট হাউস জিতব। বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প যাই বলুক না কেন, জনগণকে আর ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না, মানুষ পরিবর্তন চায়।

বর্তমানে হাউস বা কংগ্রেস ডেমক্রেটদের দখলে, সিনেট রিপাবলিকানদের। দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর বয়স ৭০’র কোটায়, ট্রাম্প ৭৪, বাইডেন ৭৮। ১৮ বছরের মার্কিন নাগরিক ভোটার হতে পারেন। ভোট দিতে হলে বৈধ পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। এবার কংগ্রেসের পুরো ৪৩৫টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে, কিছু সিনেট, গভর্নর পদে লড়াই হচ্ছে। ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা আশা করছেন, তারা এবার হাউসে জিতবেন। বাইডেন বা ডেমোক্রেটরা আশা করছেন, হাউস, সিনেট, হোয়াইট হাউস তারা জিতবেন।

ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট
১২ থেকে ১৫টি স্টেট ব্যাতিত প্রায় সকল স্টেট মূলত ডেমোক্রেট (নীল) বা রিপাবলিকান (লাল) শিবিরভুক্ত। ওই স্টেটগুলোকে ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট’ বলা হয়ে থাকে এবং প্রার্থীরা ওসব স্টেটে প্রচার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। বলা হচ্ছে, এবার ১৩টি ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট? এগুলো হচ্ছে, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, অ্যারিজোনা, ওহাইয়ো, আইওয়া, মিনেসোটা, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনা। ২০১৬-তে ট্রাম্প অন্তত ১০টি স্টেটে জিতেছেন যেখানে ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র ২ শতাংশ। এইসব স্টেটে ১২৫টি ইলেক্ট্রোরাল ভোট আছে। ট্রাম্প আগেরবার জেতা ৬টি স্টেট যেমন অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন, ও নর্থ ক্যারোলিনা পুনরায় জয়ের জন্যে সর্বস্ব পণ করে মাঠে নেমেছেন। এসব স্টেটে ১০১টি ভোট আছে। একইভাবে বাইডেন ২০১৬-তে হিলারি ক্লিনটন জেতা ৪টি স্টেট, মেইন, মিনেসোটা, নিউ হ্যাম্পশায়ার ও নেভাদা ধরে রাখতে সচেষ্ট, যেখানে ২৪টি ইলেকটোরাল ভোট আছে।

ওহাইয়ো, না জিতে রিপাবলিকানরা কখনও প্রেসিডেন্ট হন নি। টেক্সাস নীল ষ্টেট নয়, বাইডেন টেক্সাস জিতলে তা হবে ট্রাম্পের জন্যে ব্লো-আউট। নর্থ ক্যারোলিনার ১৫টি ভোট ট্রাম্পকে জিততেই হবে। নেভাদা লাল থেকে নীল হয়েছে, বারাক ওবামা-বাইডেন জুটি এ কাজটি করেছেন। এবারও কি নীল থাকবে? পেনসিলভানিয়ায় জিতে ট্রাম্প ২০১৬-তে হোয়াইট হাউসে যাবার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ১৯৮৮-তে জর্জ এইচ, ডবলু বুশ জয়ী হবার পর ট্রাম্প প্রথম রিপাবলিকান যিনি পেনসিলভানিয়া জেতেন। উইসকনসিনে হিলারি হেরেছেন এবং ১৯৮৪’র পর ট্রাম্প একমাত্র রিপাবলিকান যিনি সেখানে জয় পেয়েছেন। মিশিগান ডেমোক্রেট ফেভারিটি, ২০১৬-তে ট্রাম্প জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। মিনেসোটা ২০১৬-তে ১.৫ ভাগ ভোটে হিলারিকে সমর্থন দিয়েছিল। ব্যবধান সামান্য, ভোট ১০টি। নিউ হ্যাম্পশায়ারের ৪টি ইলেকটোরাল ভোট আছে, ডেমোক্রেটরা গত চারটি নির্বাচনে জিতেছেন, এবার কি ট্রাম্প জিতবেন।

ইলেক্টোরাল ভোট
জনগণের সরাসরি ভোটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হ’ন না? তিনি নির্বাচিত হ’ন, ইলেক্টোরাল ভোটে। ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোট আছে, এরমধ্যে যিনি ২৭০টি ভোট পান, তিনি নির্বাচিত হন। এজন্যে ২৭০-কে ম্যাজিক নাম্বার বলা হয়! জনসংখ্যা অনুযায়ী প্রতিটি স্টেটের কিছু ইলেক্টোরাল ভোট থাকে। যেই প্রার্থী যেই ষ্টেটে জয়ী হন তিনি সেই স্টেটের সবগুলো ইলেক্টোরাল পান। তবে মেইন ও নেব্রাস্কায় ইলেক্টোরাল ভোট ভাগাভাগি হয়ে থাকে। মেইনে ৪টি এবং নেব্রাস্কায় ৫টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। ইলেকটোরাল ভোট-ব্যবস্থার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আল গোর এবং হিলারি ক্লিনটন পপুলার ভোটে জিতেও প্রেসিডেন্ট হতে পারেন নি। ছোট-বড় সকল স্টেটের সমান গুরুত্ব বহাল রাখতে মার্কিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতারা এ ব্যবস্থাটি করে গেছেন। একইভাবে এবং একই কারণে প্রতি ষ্টেট থেকে দুইজন সিনেটর নির্বাচিত হয়ে থাকেন।

আমেরিকান-ইন্ডিয়ান ও বাংলাদেশিদের অবস্থান
আমেরিকান-ইন্ডিয়ান ভোট এবার মিশিগান, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন-এ ফ্যাক্টর হতে পারে। শুধুমাত্র মিশিগানে ১ লক্ষ ২৫ হাজার ইন্ডিয়ান ভোট আছে। পেসিলভানিয়াতে ইন্ডিয়ান আমেরিকান ভোট ১ লক্ষ ৫৬ হাজার। ২০১৬-তে ট্রাম্প প্রায় ৪৩ হাজার ভোটে জিতেছেন। উইসকনসিনে ভারতীয় ভোট ৩৭হাজার, ট্রাম্প জিতেছিলেন ২১ হাজার ভোটে। ২০১৬-তে ভারতীয় এবং সামগ্রিকভাবে হিন্দুদের ভোট ট্রাম্প পেয়েছেন। জো বাইডেন হয়ত কালো এবং ভারতীয় ভোট ধরে রাখতে কমলা হ্যারিসকে তার রানিং মেট করেছেন। ভারতীয়দের জন্যে সুবিধা হচ্ছে, ট্রাম্প জিতলে ভালো, কমলা হ্যারিস জিতলে তাদের তেমন ক্ষতি নেই! কমলা হ্যারিস কিছু ভারতীয় ভোট টানবেন। বাংলাদেশিরা মূলত বাইডেন সমর্থক, ২০১৬-র তুলনায় এবার বাংলাদেশিদের মধ্যে ট্রাম্পের সমর্থন অনেক বেড়েছে। বেশীরভাগ বাংলাদেশী সংখ্যালঘু ট্রাম্পের সমর্থক।

ট্রাম্পের সাফল্য
পেনডেমিকের আগে মার্কিন অর্থনীতি ছিল যথেষ্ট চাঙ্গা, বেকারত্ব ছিলো সর্বনিন্ম ৩.৬ ভাগ, তিনি ৬৭ লক্ষ নুতন চাকরি সৃষ্টি করেছিলেন, জ্বালানি তেলে পরনির্ভরতা কমিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছেন, ডেমক্রেট রাজ্যে ক্রাইম বাড়লেও সামগ্রিকভাবে তিনি অপরাধ ১৫ ভাগ নামিয়ে এনেছেন। সীমান্ত রক্ষায় সফল ও অবৈধ অনুপ্রবেশ একরকম বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন, আরব-ইসরাইল চুক্তি, তালেবান-আফগান চুক্তি স্বাক্ষরে তাঁর অবদান অসীম। সবচেয়ে বড় কথা তিনি কোনও যুদ্ধে জড়ান নি। শান্তির পক্ষে তার এই অবদানের জন্যে তিনি দু বার নোবেল শান্তি পুরুস্কারের জন্যে মনোনীত হয়েছেন, যদিও পান নি। তার আমলে জিডিপি বছরে প্রায় ৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে, জাতীয় রাজস্ব ১৭.৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২১.৪৩ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিলো, যদিও করোনার কারণে এখন সেটি দেখা যাচ্ছে না।❐

নিউ ইয়র্ক থেকে

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment