ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী বৈঠক: জিএসপি সুবিধা ও পর্যটন শিল্প চাঙ্গায় জোর শ্রীলংকার
মহামারীর প্রভাব তো আছেই, পাশাপাশি নিজের দেশের ভেতরে নানা দ্বন্দ্ব-অসন্তোষের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকা এখন বেশ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। কমতে শুরু করেছে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এরই মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করতে কলম্বোতে পৌঁছেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচ সদস্যের একটি দল, যার ওপর শ্রীলংকার রফতানি খাতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। খবর নিক্কেই এশিয়া।
শ্রীলংকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর ডেনিস চাইবি বলেন, দলটি বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলবে। তারা এটা জানার চেষ্টা করবে যে, মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও পরিবেশের বিষয়ে সরকার যে প্রতিশ্রুতিগুলো করেছিল সেগুলো ঠিকমতো পালন করা হচ্ছে কিনা।
আগামী শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিনিধি দলটি শ্রীলংকায় অবস্থান করবে এবং এ সময়ের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা, বিরোধী দল, শিল্প খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক করবে। শ্রীলংকা তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মানবাধিকার আইন মেনে চলছে কিনা, শ্রম আইন ও পরিবেশ সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি মানছে কিনা এবং সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনের প্রয়োগ যথাযথভাবে করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
১৯৭৯ সালে দেশটিতে সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদবিরোধী আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, ভিন্নমত দমনে এ আইনের ব্যবহার করা হয়। এ কারণেই সব খতিয়ে দেখতে চায় ইইউ।
এখন প্রশ্ন হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ তদন্ত শ্রীলংকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন। কারণ হলো, দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করবে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাবে কিনা। পাশাপাশি রফতানি খাতে শ্রীলংকা জিএসপি সুবিধা পাবে কিনা। জিএসপি প্লাস সুবিধাটি দেয়া হয় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে। এ সুবিধার আওতায় যারা ২৭টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন মেনে চলছে তারা ইইউভুক্ত দেশগুলোতে রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। সবমিলিয়ে এমনিতেই এখন সময়টা খারাপ যাচ্ছে শ্রীলংকার। তার ওপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমছে। পর্যটন শিল্পও দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরবে বলে মনে হচ্ছে না।
ডেনিস চাইবি বলেন, পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে শ্রীলংকার জন্য বেশ নাজুক। কারণ ২০১৭ সালে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, জিএসপি প্লাস সুবিধা ফিরে পাওয়ার পর তারা সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনটি পর্যালোচনা করবে। কিন্তু সেটি এখনো পর্যালোচনা করা হয়নি। এমনকি এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতিও দেখা যাচ্ছে না। আর এ বিষয়ই ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের মূল বিষয় হতে যাচ্ছে। আগামী বছরের প্রথম দিকে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে শ্রীলংকাকে বাণিজ্যিক সুবিধা দেয়া হবে কিনা। এরপর ২০১৭ সালে যখন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ক্ষমতায় ছিলেন তখন মানবাধিকার, শ্রম আইন, পরিবেশ সুরক্ষা ও সুশাসনসহ ২৭টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে জিএসপি প্লাস সুবিধা পুনর্বহাল করা হয়। এর দুই বছর পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন মাহিন্দার ভাই গোতাবায়া রাজাপাকসে। তখন থেকে মানবাধিকার রক্ষায় শ্রীলংকা আবার উল্টো পথে চলতে শুরু করে।
শ্রীলংকার সবচেয়ে বড় রফতানি পণ্যের বাজার হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০২০ সালে দেশটির রফতানি আয়ের ৩০ শতাংশই এসেছে ইইউ ব্লক থেকে। এখন জিএসপি সুবিধা না পেলে শ্রীলংকার রফতানিতে ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। সে কারণে ইইউ প্রতিনিধি দলের এ সফরের দিকে দৃষ্টি সবার।