কোলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক ও রাজনীতিবিদ তাপস পাল মারা গেছেন
কোলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক ও পশ্চিমবঙ্গের বিতর্কিত রাজনীতিবিদ তাপস পাল মঙ্গলবার ভোররাতে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।
মাধুরী দীক্ষিতের প্রথম চলচ্চিত্র ‘অবোধ’-এর নায়ক ছিলেন তাপস পাল।
অভিনয় ছাড়াও তিনি ২০০১ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেস দলের দুবার বিধায়ক এবং দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তাপস পাল বিভিন্ন সময়ে বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছেন। ভারতে যাকে ‘চিট-ফান্ড কেলেঙ্কারি’ বলা হয়, সেরকমই একটি বেআইনি আমানত সংগ্রহ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো তাকে গ্রেপ্তার করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রে মেয়ের কাছে যাওয়ার জন্য তিনি মুম্বাই গিয়েছিলেন জানুয়ারির শেষে। তবে বিমানবন্দরেই বুকে ব্যথা অনুভব করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তাকে ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়। মাঝে চিকিৎসায় সাড়া দিলেও সোমবার থেকে শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে।
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই স্নায়ুরোগের সমস্যায় ভুগছিলেন।
চলচ্চিত্রে বিপুল জনপ্রিয়তা
তাপস পালের প্রথম চলচ্চিত্রের পোস্টার।
১৯৮০ সালে তরুণ মজুমদার পরিচালিত ‘দাদার কীর্তি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তাপস পালের ক্যারিয়ারের শুরু হয়। সে চলচ্চিত্রে তাপস পালের বিপরীতে অভিনয় করেন প্রয়াত নায়িকা মহুয়া রায়চৌধুরী এবং দেবশ্রী রায়। আরও ছিলেন সন্ধ্যা রায়। ঘটনাচক্রে তাপস পাল, দেবশ্রী রায় এবং সন্ধ্যা রায় – তিনজনেই পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক বা সংসদ সদস্য হয়েছেন। অন্যদিকে তার সঙ্গে অভিনয় করা নায়ক-নায়িকাদের মধ্যে শতাব্দী রায়, মুনমুন সেন, দেব, চিরঞ্জিত আর নুসরত জাহানও পরবর্তীকালে তৃণমূল কংগ্রেস দলেরই সংসদ সদস্য হয়েছেন।
মাধুরী দীক্ষিতের প্রথম চলচ্চিত্রের পোস্টার। এ চলচ্চিত্রের নায়ক তাপস পাল ছিলেন।
প্রথম চলচ্চিত্রে তাপস পালের চরিত্রটিই তাপস পালকে বাঙালি মধ্যবিত্তের একেবারে ঘরের ছেলে করে তোলে। তরুণ মজুমদার, তপন সিংহ, অঞ্জন চৌধুরী, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, হরনাথ চক্রবর্তী সহ অনেক নামী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। যে সময়টাতে তাপস পাল বা প্রসেনজিৎ নায়ক হিসেবে এসেছিলেন, সে সময় বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি একটা গভীর সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল।
বাংলা ছবি ছাড়াও তাপস পাল বলিউডেও তিনি অভিনয় করেছেন। ১৯৮৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অবোধ’ নামের হিন্দি সিনেমাতে তাপস পালের সঙ্গে অভিনয় দিয়েই নিজের ফিল্মি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মাধুরী দীক্ষিত।
সিনেমা জগতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করতে করতেই তাপস পাল রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০০১ সালে এবং ২০০৬ সালে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্য বিধানসভায় বিজয়ী হন। এরপর ২০০৯ আর ২০১৪ – দুবার কৃষ্ণনগর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে লোকসভার সদস্য হন তিনি।
সংসদ সদস্য থাকাকালে তাপস পাল একাধিকবার বিতর্কিত মন্তব্য করেন। একটি সভায় তিনি নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ বলে উল্লেখ করে বিরোধী দলীয় সদস্যদের ঘরে লোক ঢুকিয়ে ধর্ষণ করানোর হুমকি দিয়েছিলেন। পরে সে মন্তব্যের জন্য তিনি ক্ষমা চান।
এছাড়াও তার নাম জড়িয়ে যায় ‘চিট-ফান্ড’ বলে পরিচিতি বেআইনি আমানত সংগ্রহ সংস্থার সঙ্গে। সে অভিযোগে দীর্ঘদিন জেলেও ছিলেন।
তাপস পালের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন তার সহ-অভিনেতা অভিনেত্রী, এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।