Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
April 18, 2024
Homeআঞ্চলিকফেনীতে প্রতি মাসে ১০ জন ধর্ষণের শিকার

ফেনীতে প্রতি মাসে ১০ জন ধর্ষণের শিকার

ফেনীতে প্রতি মাসে ১০ জন ধর্ষণের শিকার

যতন মজুমদার, ফেনী


ফেনী জেলাজুড়ে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণ-গণধর্ষণের ঘটনা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৩৩১ দিনে ফেনীতে ১১৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সেই হিসাবে চলতি বছর প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা তিনগুণেরও বেশী। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ১১৬ জন নারী-শিশু ধর্ষণের আলামত পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১১, ফেব্রুয়ারিতে ৫, মার্চে ১২, এপ্রিলে ৪, মে মাসে ৮ জন, জুনে ৭, জুলাইয়ে ১০, আগস্টে ১৩, সেপ্টেম্বরে ৯, অক্টোবরে ২২ ও নভেম্বরে এ পর্যন্ত ১৪ জন নমুনা দিয়েছেন।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৩ জন, সোনাগাজীতে ২৩ জন, দাগনভূঞায় ৮ জন, ছাগলনাইয়ায় ১৫ জন, পরশুরামে ৫ জন, ফুলগাজীতে ১১ জন রয়েছেন।

এছাড়া আদালতে অভিযোগ করে নমুনা দিয়েছেন ৭ জন, পিবিআইতে অভিযোগ করে নমুনা দিয়েছেন ১ জন।

২০১৯ সালে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলার যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। এ ঘটনায় তার মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা তুলে না নেওয়ায় একই বছরের ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার ছাদে নুসরাতের শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় জড়িত ১৬ জনকে একই বছরের অক্টোবর মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করেন। জেলায় এমন ঘটনার বিচারের রায় দিলেও থেমে নেই নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা। ২০১৯ সালের রেকর্ড ছাপিয়ে তিনগুণ পরিমাণ বেশী সংঘটিত হয়েছে।

সর্বশেষ ২৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ফুলগাজীর বদরপুরে এক প্রতিবন্ধী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রতিবন্ধী ধর্ষণের ঘটনা যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করা না হয়, সেজন্য রাতে স্থানীয় সমাজপতিদের নিয়ে বাজারে বৈঠক করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার প্রবাসী চাচা।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১১ মাসে জেলার ৬ থানায় ৫১টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৬৮। ইতোমধ্যে পুলিশ ৩১টি মামলার প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে ফেনী মডেল থানায় ১৬, সোনাগাজী মডেল থানায় ১৩, ছাগলনাইয়া থানায় ১০, ফুলগাজী থানায় ৭, দাগনভূঞা থানায় ৩, পরশুরাম মডেল থানায় ২টি মামলা হয়েছে।

গত বছর জেলায় ৬৪টি যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনায় ৩৭টি ও যৌন নিপীড়নে ২৬টি মামলা হয়েছে। আর যৌতুকের জন্য খুনের মামলা হয়েছে একটি।

যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জেলার ছাগলনাইয়া থানায় ৬টি, ফেনী মডেল থানায় ৫টি, দাগনভূঞা থানায় ৪টি, সোনাগাজী থানায় ৫টি, পরশুরাম থানায় ৩টি ও ফুলগাজী থানায় ৩টি মামলা হয়েছে।

নারী নির্যাতন ও যৌতুকের ঘটনায় জেলার ফুলগাজী থানায় ৮টি, ফেনী মডেল থানায় ৬টি, দাগনভূঞা থানায় ৪টি, সোনাগাজী থানায় ৪টি, ছাগলনাইয়া থানায় ৪টি এবং পরশুরাম থানায় ২টি মামলা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১২৯টি মামলায় ৩০৫ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ২২২ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে।

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব জান্নাতুল ফেরদৌস মিতা জানান, ধর্ষণের ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড পার করেছে। ধর্মীয় ও সামাজিক অবক্ষয়, মানবিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দায়ী। যখন কোনও ঘটনা ঘটে যায় তখন সরকারদলীয় লোক হওয়ায় তারা বহিষ্কার করে। বিচারহীনতার ফলে এটি বেড়েই চলেছে।

জাতীয় মহিলা সংস্থা ফেনী শাখার চেয়ারম্যান খাদিজা আক্তার খানম রুনা জানান, ধর্ষণ শুধু জৈবিক চাহিদা নয়, এটি একটি ভঙ্গুর সামাজিক সংস্কৃতির প্রতিকৃতি। যথাযথ সামাজিক শিক্ষা বিশেষত মানবিক গুণাবলী চর্চার অভাব থেকেই ধর্ষণের সূত্রপাত। অপসংস্কৃতির চর্চাও এর বড় কারণ। তবে ধর্ষণের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও বিচার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে হবে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহম্মদ জানান, ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটে তার একটি অংশ সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে দেরীতে নমুনা দেওয়ায় প্রমাণও মিলে না।

জেলা পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী বিপিএম, পিপিএম এ বিষয়ে জানান, ফেনীতে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা কিংবা অভিযোগ পেলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসামিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসেন।

পুলিশ সব সময় এসব ঘটনা রোধে তৎপর রয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় হওয়া মামলার বেশীরভাগই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো স্বল্পসময়ের মধ্যে জমা দেওয়া হবে।❐

দৈনিক যুগান্তর

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment