বিভক্ত আমেরিকা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অভিষেকে ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি বক্তব্য দেন। সেদিন তিনি ‘আমেরিকান বধ্যভূমি’র ইতি টানার প্রতিশ্রুতি দেন।
কিন্তু চার বছর পর একই দিনে ট্রাম্প যখন বিদায় নিলেন, তার গোটা শাসনামলে দেশটিতে বিভক্তির কালো রেখা স্পষ্ট। এককভাবে জবরদস্তি করতে গিয়ে জাতিকেই কার্যত অকার্যকর করে তুলেছেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, চার বছর পর বিদায় নিলেন ট্রাম্প। কিন্তু তিনি আমেরিকার মেরুকরণের জন্ম দিয়ে গেছেন। এখন দেশটিতে দিনে করোনা মহামারীতে হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে, মারাত্মক বিপর্যয়ে অর্থনীতি এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে চলছে। আমেরিকান জীবনকে যার সংজ্ঞায়িত করেন, তাতে ট্রাম্প খুব একটা পরিবর্তন আনেন নি। কিন্তু ক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে এদের কব্জায় নেন তিনি।
ওয়াশিংটনের চোখে অবহেলিত গ্রামীণ সমাজ ও শ্রমিক শ্রেণির জীবনমান উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এরই ফলে গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের ‘বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার’ অভিযোগের পক্ষে তার ক্ষুব্ধ সমর্থক বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গরা ক্যাপিটল হিলে সহিংসতা চালায়। এ সংঘাত শেষ হয় এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের প্রাণহানি ও বহু আহত হওয়ার ঘটনায়, যা বিশ্বকেই নাড়িয়ে দেয়।
হোয়াইট হাউজ ছাড়ার সময় ট্রাম্প তার ক্ষমতার উত্তরাধিকারের বড় অংশ হিসেবে রেখে যাচ্ছেন পরস্পরের প্রতি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা। যদিও তার বিরোধী শিবির জাতির মধ্যকার বিভক্তিকে জাহির করছেন। বিগত চার বছরে শ্বেতাঙ্গরা চড়াও, বেড়েছে বর্ণবৈষম্য। শেষদিকে পুলিশের কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার মাধ্যমে যা পূর্ণতা পেয়েছে।
আমেরিকানদের সম্পর্কের ধরন ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত নাগরিক অধিকারকর্মী এবং ‘দি পুওর পিপলস ক্যাম্পেইন’র কো-চেয়ার রেভারেন্ড উইলিয়াম বারবার বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য তিনি (ট্রাম্প) বিভক্ত এবং বিজয়ী ইতিহাসের প্রাকৃতিক ফলাফল। ১৯৬০ সালে মার্টিন লুথার কিং দরিদ্র ও বর্ণবৈষ্যমের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন; ট্রাম্প সবগুলোকে পেছনে ঠেলে দিয়েছেন।’
যদিও বারবার ট্রাম্প তার বিরুদ্ধে আসা বর্ণবৈষ্যমের অভিযোগ নাকচ করেছেন। ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকরা তাকে উভয় দলের মধ্যে বিগত দশক ধরে নিগৃহীত শ্রমিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সঠিক প্রশাসক আখ্যায়িত করেন। আর এটাই ট্রাম্প যুগের অন্যতম উত্তরাধিকার।
নির্বাচনী ফলাফলের পর বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রক্ষণশীল সমর্থক অ্যালেক্স ব্রুয়িসিউটজ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শ্রমিক শ্রেণির ভোটারদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। অথচ তাদের মনে হয়েছিল তারা দেশের ভুলে যাওয়া নারীপুরুষ। প্রেসিডেন্টই দীর্ঘমেয়াদে নিজেদের ভুলে না যাওয়ার জন্য লড়াই করেছেন।’
ক্ষমতার পালাবদল হলেও মহামারীতে বিপর্যস্ত আমেরিকা। আর এর পেছনে অনেকাংশে দায়ী ট্রাম্প। ফলে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে মহামারী মোকাবিলার সঙ্গে লড়তে হবে মারাত্মক অর্থনৈতিক মন্দার বিরুদ্ধে। ক্যাপিটল হিলে ডানপন্থি উগ্রবাদের যে তাণ্ডব হয়েছে, ভবিষ্যতে বাইডেন প্রশাসনকে তাও বড় ভোগান্তি দেবে।
রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট প্রশাসনের অধীনে পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক উপদেষ্টা এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক দ্য কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের অ্যারন ডেভিড মিলার বলেন, ‘আধুনিক সময়ে এসে অকার্যকর আমেরিকার এমন পরিপূর্ণ প্রদর্শন আগে কোনো প্রেসিডেন্টের আমলে হয়নি।’ তবে তার মন্তব্য নাকচ করে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জুদ দিরে বলেন, ‘ট্রাম্প শাসনের উত্তরাধিকার বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।’❐