Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
March 28, 2024
Homeসাহিত্যকবিতামাজহার জীবনের অনুবাদে ইন্দোনেশিয়ার কবি হানা ফ্রান্সিসকার কবিতা

মাজহার জীবনের অনুবাদে ইন্দোনেশিয়ার কবি হানা ফ্রান্সিসকার কবিতা

মাজহার জীবনের অনুবাদে ইন্দোনেশিয়ার কবি হানা ফ্রান্সিসকার কবিতা

[হানা ফ্রান্সিসকার জন্ম ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম কালিমাতানে ১৯৭৯ সালে। চীনা বংশোদ্ভুত কবি। কবিতার বই (Konde Panyair, (২০১০), Benih Kayu Dewa Dapur (২০১২), A Man Bathing & Other Poems (২০১৫)। ছোটগল্পের সংকলন Sulaiman Pergi ke Tanjung Cina (২০১২)। Tempo Magazine তাঁর প্রথম কবিতার বইকে ২০১১ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতার বই নির্বাচিত করে। তাঁর কবিতায় চীনা সাংস্কৃতিক রূপকের ব্যবহার লক্ষণীয়। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নারীর সংগ্রাম আর ইন্দোনেশিয়ায় চীনা মাইনোরিটি জনগোষ্ঠীর নিরন্তর সংগ্রাম তাঁর কবিতার উপজীব্য।]

 

 

নদীর মত লম্বা দড়ি দিয়ে
তোমার গলা এমনভাবে বাঁধা,
যেন তুমি তোমার পা আর পাখা দিয়ে
স্বাধীনভাবে নাচতে পার।
জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাও, প্রিয়!
ঝরিয়ে ফেলো দেহের মেদ
শুকিয়ে ফেলো ঘাম
শান্তিময় স্বর্গের দরজা
অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।
তোমার পায়ের নিচে বয়ে চলে প্রবল হাওয়া
ভয় পেয়ো না তবুও তুমি।
নদীর মোহনায় আর পারবে না যেতে
এ বাধন যে ছিঁড়বে না আর!
বড়ই শক্ত এ বাধন।
তবুও এগিয়ে যাও প্রিয়!
ঝাপটাও তোমার পাখা
ছড়িয়ে দাও তোমার দেহ
ঝরে যায় যেন দেহের মেদ
যেন দূর হয় দুর্গন্ধ শরীরের।
এভাবেই প্রমাণ হবে –
সত্যিকারের পুরুষ তুমি।
রান্নার মাটির হাড়িতে ভালবাসা তৈরির
দায়িত্ব হলো পুরুষ হাঁসের।
তবে তোমাকে বলি শোন:
যাকে ভালবাসো তার সাথে মিলনের
যদি সুযোগ হয়
শেষ রাত কাটিও তার সাথে
ঊষার আগেই
তোমার প্রিয়ার কাছ থেকে নিও বিদায়।
খুবই ধারালো ছুরি দিয়ে
যেন তোমার গলা কাটা হয়
এটাই হবে তোমার উদ্বিগ্ন প্রেমিকার শেষ প্রার্থনা।
আর তুমি তাকে বলো ” উদ্বিগ্ন হোয়ো না।
তোমার সুঢৌল জরায়ুতে আমি
করেছি বীজ বপন, করিনি কি?
তোমার দায়িত্ব হলো
সেই ডিমগুলো তা দিয়ে বাচ্চা ফোটানো।
তুমি তা জানো।
ভালবাসি তোমাকে আমি
স্বর্গে আবার মিলন হবে আমাদের।”
তুমি কি দেখোনি-
সরু সরু টুকরো করে কেটে
মশলা দিয়ে মাখানোর আগে
কুকুর শাবকের তীব্র যন্ত্রণা?
তাকে বস্তায় ভরে
পাথরের সাথে প্রচণ্ড আঘাতে
স্তব্ধ করে দেয়
যেন তার রক্ত দানা বাধে।
সুস্বাদু দানাদার রক্ত আমাদের
অন্যায়বোধ দুর করবে।
তোমার বেলায়ও এমন হোক –
তুমিও কি তাই চাও?
তুমি কি জানো না ঝলসানো
সেই শুকরের ভাগ্য
মৃত্যুর আগে যাকে
লম্বা লোহার শিকে গেঁথে মারা হলো যাকে?
প্রেমিক হিসেবে তোমার দায়িত্ব খুব সহজ ।
দড়িতে তুমি আষ্টেপৃষ্টে বাধা থাকলেও
সারারাত গাইতে পারো গান।
ওরা তোমাকে খেতে দেবে না আর
পেটভর্তি থাকলে হাঁসের মাংশের স্বাদ
কমে যেতে পারে;
বেগবান নদী ভালবাসা বয়ে নিয়ে যাবে,
আর দেখো! কী সুন্দর এই শীতল রাত!
গাও-
যতক্ষণ তীব্র আকাঙ্খায়
তুমি বাড়িয়ে রাখবে পা,
যতক্ষণ তীব্র আবেগে ঝাপটে যাবে ডানা।
গাও-
আমি ঊষালগ্নে অপেক্ষা করবো
তোমার ভাগ্য দেখবো বলে!
তোমার ক্ষুধা মিলিয়ে গেছে
তোমার মাংস শুকিয়ে গেছে,
তোমার গায়ের দুর্গন্ধও হয়েছে দূর।
এটাই তোমার কর্তব্য,
আর চূড়ান্ত সুখের শুরু
যখন তোমার দেহ ঠাঁই পাবে
মাটির হাড়ির তলায়।
যদি ছুরির শাণিত ধারে ভয় পাও,
তোমার উদরে ঢেলে দেয়া হবে এক চামচ জারক
তুমি ভয় ভুলে যাবে।
আমাকে বিশ্বাস করো-
ছুরির পোঁচের আগে
জারক তোমার উদরে ঢালা হলে
তোমার কোমল পালকগুলো ছোট শক্ত লোম হয়ে যাবে।
তোমার উদরের শিরাগুলো ছিন্ন হবে,
তোমার দেহ তীব্র যন্ত্রণায় এক মুহুর্ত আড়ষ্ট হয়ে যাবে,
যন্ত্রণায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে দৃষ্টি।
সেজন্যই তোমার পালকগুলো লোম হয়ে গেছে।
তবে ভয় পেয়ো না তুমি
হয়ত এসবের কিছুই দেখতে পাবে না তুমি।
তোমার শ্রবণ স্তব্ধ হলে
উঠো না কেঁপে।
ধারালো একটা ছুরি তোমার মৃত্যুর সাথী।
মৃত্যু কি যন্ত্রণাময়?
বলছি শোন:
ব্যথা যখন ছাড়িয়ে যায় ব্যথা
সে আর থাকে না ব্যথা হয়ে।
জানি, তুমি বস্তুত তীব্র যন্ত্রণায় কাতর হয়ে আছ।
তবে সবচে’ বড় কথা তুমি জেনে যাও:
কত সুন্দরভাবে ঝরে গেছে তোমার পালকগুলো!
যদি ঢেকে রাখতে পালক দিয়ে
কীভাবে তোমার ত্বক শিশুর মতো সুন্দর হতো?
সবাই কী আবার চায় না ফরে যেতে শৈশবে?
তারা সবাই তোমাকে ভালবাসে গভীরভাবে, প্রিয় বন্ধু!
তাই গ্রহণ করো তাদের স্ততি।
এ শুধু তোমার জন্য।
ভবিষ্যতে তারা হয়ত বলবে
“মাংশের স্বাদ অসাধারণ ছিল!
জিহ্বাতে লেগে থাকেনি একটুও
মোলায়েম, পালকহীন আর দুর্গন্ধমুক্ত।”
এসবই বয়ে আনে তোমার সুনাম।
যে দেশে ভাল কাজের কদর হয়
যেখানে ঈশ্বর আসীন তাঁর
সিংহাসনে
সেখানে হয়তো হাসছো তুমি বসে।
আশা করি সেখানে সুখে আছ তুমি।
আমীন।

 

 

 

চীনা এক গোরস্তানের কোণে বেড়ে উঠেছে পেপে গাছটি।
পেপেগুলো পাকা, খোসা সবুজাভ হলুদ – স্বপ্নের মত।
তার শেকড় মাটির গভীরে,
সুখের তালাশ করা কোন মৃতনারীর স্বপ্ন যেন –
তার প্রেমিক প্রগাঢ় ভালবাসা নিয়ে
সমাধিফলকে দৃষ্টি নিবন্ধ করবে কোন একদিন-
প্রবল বিস্ময়ে
বন্য দৃষ্টিতে
গোরস্তানের দেয়াল নতুন করে পরিপাটি করা।
মজবুত তার গাথুনী- পূর্ণ চাঁদের আলোয় জ্বলজ্বল করছে।
সেখানে ঈশ্বরের এক মূর্তি বসানো – যেন বিশ্বস্ত জিম্মাদার।
দর্শণার্থী এলে ফুল আর ধুপের গন্ধে ভরে যায়।
এখানে জন্মেছে পেপে গাছ – বাতাস অনর্গল খেলা করে তার সাথে।
এখানে তোমরাও এসো।
গৃহহীন নারী-পুরুষের জন্য এখানে জীবন বড় বিলাসী।
এমন নারী যার গৃহ প্রয়োজন
এমন পুরুষ যার গৃহ প্রয়োজন
যদি দুজনে একই সমাধিফলক ভাগাভাগি করতে চায় তবে
আত্মমর্যাদার জন্য গভীর প্রণয়ের প্রয়োজন।
গোরস্তান এমন স্থান
যেখানে কোনকিছু না হারিয়ে
সবকিছু ভাগাভাগি করা যায়।
পেপে গাছ জন্মায়, বড় হয়,
কমনীয় ফল নিয়ে, হলুদাভ সবুজ যার রঙ – যেন কপোল।
মানুষের চোখে স্বপ্নের মত মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়:
” একদা আমাদের শহরে দুর্যোগ দেখা দিয়েছিল।
ভাড়ার থেকে তারা লুট করেছিল সব।
এক বিরাট অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল আরেকবার
যখন বের করে দিয়েছিল হলুদাভ কপোল আর তীক্ষ চোখের যুবতীদের।
আ হা! সে ছিল এক স্বপ্নের মত!
এমন বিপর্যয় কি আবার হবে?
খাদ্য আর সবকিছু বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে
তার চেয়ে বড় – কাম-তৃষ্ঞা নিবারণ হবে বিনা খরচে!
আমি এক যুবতীকে একাকী কাঁদতে দেখেছিলাম।
ওর উরু ছিল শুভ্র আর উপাদেয়। ”
ও ভাইসব! এসো
এখানে ঘুমাও আমাদের সাথে।
এই খোলা আকাশের নীচে তোমার দেহ ছড়িয়ে দাও শুধু
দেখবে কেমন সতেজ লাগে।
এ এক অন্যরকম ভাললাগা।
যদি দুর্যোগকালীন সংগমের সুযোগ না পেয়ে থাকো
তবে ঐ সময় যারা মারা গিয়েছিল
তাদের সাথে এই গোরস্তানে সেরে ফেলো সংগম।
এর স্বাদ নিশ্চয় আগের মতোই হবে।
তার কপোল কল্পনা করো
তার উরু কল্পনা করো
তার পুরো শরীর কল্পনা করো- মৃত্যুর আগে ও কেমন ছিল।
পেপে গাছ জন্মায়, বড় হয়,
এর ফল কমনীয়, হলুদাভ সবুজ যার রঙ – যেন কপোল।
তার শেকড় মৃত সুখী মানুষের স্বপ্ন বোনে।
যখন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি নামে-
মৃতদের হাড়ের ভেতর দিয়ে চুঁইয়ে পড়ে জল
যে পচনশীল হাড় অল্পদিনে মাটির সাথে মিশে যাবে।
এক সময় নির্যাস হয়ে – উর্বরতা আর প্রাচুর্য বাড়ায়
আর গাছেরা বেড়ে উঠে।
আরো দীর্ঘতর হয়।
পাতারা সবুজ হয়।
মৃতরা সুর্যালো দেখতে চাইলে পাতাদের সরিয়ে দেয়।
তখনো আকাশ ছড়িয়ে থাকে আকাশে আকাশে।
মৃতদেহগুলো হিমেল বাতাসের জন্য আকুতি করলে
আমরা অনুভব করি সে আকুতি।
তাই এখানে কোন দুঃখের অনুমতি নেই
তাই এখানে কোন স্মৃতির অনুমতি নেই
তারপরও পেপে গাছ ফল দেয়
একজন উন্মাদ লোভাতুর তাকায় পাকা পেপের দিকে
গাছটাকে আদর করে, গাছে উঠে, গান গায়।
সুখী মৃত মানুষের স্বাদ সাথে নিয়ে কত মিষ্টি খেতে এই পেপে! নারীরা প্রশংশা করে।
এক উম্মাদ চিৎকার করে, ” আ হা কী মিষ্টি এই পেপে –
দুর্যোগকালে চীনা মেয়েকে ধর্ষণের মত মিষ্টি”।
পাতার ভেতর দিয়ে আমরা দিগন্ত দেখি – এখনও তা বহাল।
আকাশ সীমাহীন। কেউ জানে না তার সমাপ্তি কোথায়।

 

 

 

এক কবি কবিতা লিখতে চাইল পাহাড় নিয়ে
কিন্তু পাহাড়ে সুন্দর কিছু নেই
এরপর সে বৃষ্টির দিকে চোখ ফেরালো
কিন্তু বৃষ্টিকে সহজেই ভূলে যাওয়া যায়
তাই সে ভবিষ্যতের কবিতায়
এসব বিষয় বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
পলকা বুদ্ধির স্পন্দিত প্রগাঢ় আবেগে
স্মরণ করলো কাব্য দেবতাকে:
“বিশ্বজগত, আকাশ ও সমুদ্র থেকে
শব্দমালা আর কবিতা পাঠাও, হে কাব্য দেবতা।”
কিন্তু এসব দিয়ে কবিতা লেখা অতি সহজ।
তাই সে এবার গেল এক কফিসপে।
পার্টির মার্কা দেখল
প্রেসিডেন্টের ছবি দেখল
আর প্রথম পাতায় দেখল-
পুলিশ নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে।
“ভাইসব, দয়া করে আপনারা এখানে কবিতা আওড়াবেন না।
এ কারণে অন্তত আমার পাঁচজন খরিদ্দার আসেনি আজ। ”
কফিশপ মালিকের এ আচরণ তাকে অস্বস্থিতে ফেলে।
আজ দোকানীকে বন্ধুবাৎসল মনে হচ্ছে,
আজাইরা কবির নাম দ্বিতীয় পাতায় প্রকাশিত হয়নি।
আকাশ শান্ত। ব্রম্মাণ্ডকে বিশাল দেখাচ্ছে,
আর সর্বত্র দৃশ্যমান আকাশ।
পঞ্চম পাতার কোণায়:
দুর্যোগ, দু’জন দরিদ্র মানুষের ছবি,
আজাইরা মন্ত্রীগণ
ধর্মীয় কলাম,
জাতীয় বীরের বিধবা স্ত্রীকে ধর্ষণের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের খবর।
তার নজরে আসে-
৮০০ সাংসদের হাসোজ্জ্বল ছবি
যারা প্লেনের সামনে দাঁড়িয়ে পোজ দিচ্ছে
তারা ইউরোপ সফরে যাবে।
এসব দেখে সে অসহায় বোধ করে;
ভাবলো – এবার তবে ভালবাসার কবিতা লিখি।
সুখী কবি এখন এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর কথা ভাবে
যে অনেক দুরে এক শহরে থাকে।
তাকে এক বার্তা লেখে:
“তুমি যদি আজও আমার প্রতি বিশ্বস্থ থাকো
বৃষ্টি নামলে পর পাহাড়ে যেও ।
প্রেমের কবিতা লেখার এ এক মোক্ষম উপায়”।
সে এক বোতল বিয়ার নিতে ভোলে না।
কফিসপ থেকে বের হয়, বিদায় জানায়
এভাবে জীবন চলতে চলতে
সে জড়িয়ে পড়ে আকণ্ঠ ঋণে ।
সকালে নেশাগ্রস্থ হওয়া কবির জন্য দোষের কিছু নয়।
কবি জানালা খোলে, সিটি নিউজ পড়ে।
আর তার কাজের মাঝে কবিতা এসে হাজির হয়-
রাস্তা থেকে
দারিদ্র থেকে
দুষিত বায়ু থেকে।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment