অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব ও যৌন হয়রানির অভিযোগ
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে একটি কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নিজ প্রতিষ্ঠানের এক ছাত্রীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন উপজেলার নিমসার জুনাব আলী কলেজে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মামুন মিয়া মজুমদারের পদত্যাগ দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন শতাধিক শিক্ষার্থী।
তারা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
তবে এই অভিযোগকে ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মামুন মিয়া।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ চলে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বুড়িচং থানার ওসি কলেজে এসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় ইউএনও কলেজের অন্যান্য শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। একপর্যায়ে ইউএনও ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মামুন মিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। ফেসবুক মেসেঞ্জারের এই কথোপকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে গেলে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে অধ্যক্ষের বিচার দাবিতে আন্দোলনে নামেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির অন্তত পাঁচজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের এক সহপাঠীকে অধ্যক্ষ স্যার ফেসবুকে অশ্লীল কথা বলে বাজে প্রস্তাব দিয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষ স্যারের স্ত্রীসহ অনেকেই ভুক্তভোগীকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। তাকে কলেজ থেকে টিসি দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি, অধ্যক্ষকে পদত্যাগ করতে হবে। আর দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাস বর্জন করছি। আমরা এমন শিক্ষকের বিচার চাই। ’
আমেনা আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের এক সহপাঠীকে বাজে কথা বলেছেন। আমরা ওনার পদত্যাগ চাই। আমাদের সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব স্যারের। কিন্তু উনিই যদি এমন করেন, তাহলে আমরা কিভাবে কলেজে আসব?’
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, ‘স্যার ফেসবুক মেসেঞ্জারে আমাকে খারাপ প্রস্তাব দেন। আমি স্যারকে বলি, আমি আপনার কলেজের শিক্ষার্থী। কিভাবে এমন কথা বলছেন আপনি। পরে তিনি বলেন, আমি যেন এসব কথা কাউকে না বলি। তিনি আমাকে উপবৃত্তি দেবেন, কলেজে ফ্রি পড়ানোসহ নানা প্রলোভন দেখান। এ ছাড়া উনি আমার কাছে বাজে ছবি চান এবং নিজের বাজে ছবিও আমাকে পাঠান। এরপর উনি আমাকে বলেন, এসব কাউকে বললে আমার কলেজে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। আমি স্যারের বিচার চাই। ’
বৃহস্পতিবার বিকেলে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মামুন মিয়া মজুমদার বলেন, ‘আমি কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার পর কলেজের সামনে বসা অবৈধ বাজার উচ্ছেদ করেছি। এর পর থেকে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রকারীরাই এখন এসব করাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ছাত্রীর সঙ্গে আমার এমন কোনো আলাপ হয়নি। মূলত আমাকে এই কলেজ থেকে সরাতেই এমন ষড়যন্ত্র। ’
একপর্যায়ে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলুন। আমার বিরুদ্ধে কেউ নিউজ করলে আমি কাউকে ছাড়ব না, আমার বাসা কুমিল্লা শহরে। সেটা যত বড় মিডিয়াই হোক না কেন!’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হালিমা খাতুন বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ছামিউল ইসলামকে প্রধান করে আট সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে কমিটি বিষয়টি তদন্ত ও শুনানি করে আমাকে প্রতিবেদন দেবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সুষ্ঠু সমাধানের কথা বলায় শিক্ষার্থীরা এখন আন্দোলন বন্ধ রেখেছে। ’