অনিশ্চিত সু চি’র ভবিষ্যৎ
গণতান্ত্রিক সরকারের প্রথম সংসদ অধিবেশনের দিনেই মায়ানমারের সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। এরপর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই সেনাশক্তি দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চিকে বন্দি করে। সু চি’র মুক্তি ও সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে মায়ানমারের ইয়াঙ্গুনে গত কয়েক দিন ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ করছে মানুষ। কিন্তু কোনো বিক্ষোভেই কাজ হচ্ছে না।
সু চিকে ইতোমধ্যেই রপ্তানি নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ দিয়ে করা একটি মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনায় গণতন্ত্রপন্থি এই নেত্রীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে পুরো বিশ্বে তোলপাড়, তারই মধ্যে ২০১৮ সালে সু চি তার মন্ত্রণালয়ে জেনারেলদের থাকার বিষয়টি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা ভালো বিষয়।’ এর তিন বছর পর সামরিক অভ্যুত্থানে বন্দি হলেন তিনি। এখন মনে হতে পারে সেনাবাহিনীর পক্ষে তার সেই বক্তব্য ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক কিংবা দেশপ্রেম যে কারণেই হোক না কেন, খুব খারাপ ছিল।
সু চি’র সমর্থকরা বলতে পারেন, তখন তিনি খুব কঠিন পরিস্থিতিতে ছিলেন এবং কঠোর ব্যবস্থা নিলে তাকে আরও আগেই জেলে যেতে হতো। কিন্তু সমালোচকরা মনে করেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক রোহিঙ্গাদের প্রতি তিনি সহানুভূতি দেখাতে পারতেন। তবে সবকিছু বিবেচনায় সু চি এবং মায়ানমারের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন বলেই প্রতীয়মান হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মায়ানমারের নেত্রীর বলয় হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু মায়ানমারের লাখ লাখ মানুষ এখনো তাকে ভালোবাসেন। তার এই জনপ্রিয়তা অতিরঞ্জিত কিছু নয়।
গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সু চি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। সু চি’র বাবা জেনারেল অং সান মায়ানমারে এখনো একজন শ্রদ্ধেয় নেতা হিসেবে বিবেচিত। তৎকালীন বার্মাকে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত করতে গিয়ে ১৯৪৭ সালে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। আধুনিক বর্মী সেনাবাহিনীরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। এই বাহিনী ‘তাতমাদো’ নামে পরিচিত ছিল। সেই একই বাহিনী এখন তার মেয়েকে স্বাধীনতা থেকে এবং তার দেশকে তাদের নেতা থেকে আবারও বঞ্চিত করেছে।
মায়ানমারে এর আগে ১৯৮৮ ও ২০০৭ সালে যে আন্দোলন হয়েছে (জাফরান বিপ্লব) তা ছিল মূলত রাজপথে। আর এবারের আন্দোলন হচ্ছে অনলাইনে। মূলত ফেইসবুকে, যা মায়ানমারের লাখ লাখ মানুষ সংবাদ ও তাদের মতামত আদান-প্রদানে ব্যবহার করে থাকে। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে সু চি যে খোলামেলা চিঠি লিখে গেছেন তাতেও অনেকে বিস্মিত হয়েছেন। কেউ কেউ ভয় পেয়েছেন যে এটা হয়তো প্রতিবাদকারীদের গ্রেপ্তার করার জন্য সামরিক বাহিনীরই পাতা কোনো ফাঁদ।
অং সান সু চি’র মুক্তি পাওয়ার সুযোগ এবং ক্ষমতায় ফিরে আসার সম্ভাবনা নির্ভর করছে ‘আন্তর্জাতিক সমাজ’ কী করে, তার ওপর। পশ্চিমা বিশ্বের কাছে সু চি ছিলেন আজীবনের প্রেসিডেন্ট। নির্বাচিত নেতারা যেসব মূল্যবোধের কথা বলে থাকেন তিনি যেন ছিলেন তাদের কাছে সে রকমই এক আলোকবর্তিকার মতো। তবে রোহিঙ্গাদের রক্ষা করা অথবা তাদেরকে সমর্থন দিতেও অস্বীকৃতি জানানোর কারণে পরে তিনি তাদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছেন।❐