উদীচীর যাত্রাপালা মঞ্চায়িত বিয়াল্লিশের বিপ্লব
রাজিয়া সুলতানা, ঢাকা থেকে: বাংলাদেশের লোকনাট্যেরধারার জনপ্রিয় একটি শাখা যাত্রা। প্রাচীন লোকসাহিত্যের একটি ক্রমবিবর্তিত রূপই যাত্রা। খোলা আসরে সোচ্চার কণ্ঠে অতিরিক্ত অঙ্গসঞ্চালনের মাধ্যমে অভিনয়, সঙ্গীত ও বাদ্য সহযোগে যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এবারে খোলা আসরে নয়, শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টালের আবদ্ধ থিয়েটার মঞ্চে পরিবেশন করা হলো প্রাচীন ঐতিহ্যর এই আসর। পরিবেশন করল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
গেল ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় নাটক বিভাগ বিলুপ্তপ্রায় শিল্পমাধ্যম যাত্রাপালা ‘বিয়াল্লিশের বিপ্লব’ নিয়ে হাজির হয়েছিল।
স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৪২ সালটি বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষের রক্তক্ষয়ী এক অধ্যায়। সে অগ্নিযুগের বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে বাংলার মৃত্যুপাগল যৌবন সেদিন দাবানলের মতো জ্বলে উঠেছিল। নির্ভীক সৈনিকের মতো জীবনপণ করে আমৃত্যু যুদ্ধ করেছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতার লক্ষ্যে। নির্ভীক সৈনিকদেরই কিছু কাল্পনিক চরিত্রের সমাবেশ এ যাত্রায় চিত্রিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। চরিত্রগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে জন্মভূমি মায়ের মুক্তি সংগ্রামে নিবেদিত বীরসন্তানরা, তেমনি স্বার্থের মোহে অন্ধ ইংরেজের ক্রীতদাস রয়েছে, রয়েছে ঘরশত্রু বিভীষণের দল। যারা অব্যাহত রেখেছে দেশমায়ের মুক্তিসংগ্রামকে ব্যর্থ করে দেওয়ার কূটকৌশল। যাত্রাপালার এক পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী শাসকের প্রলোভনে মত্ত জমিদার তার স্নেহের নাতি, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূসহ স্বজনদের হারিয়ে উন্মাদ হয়ে যায়। ইংরেজের বিচারে এই আন্দোলনের মূল নায়ক জমিদারপুত্র মহেন্দ্র (প্রশান্ত) চৌধুরীর দ্বীপান্তর হয়। কিন্তু স্বাধীনতা পাওয়ার পর কালাপানির নির্বাসন থেকে সে আবার ফিরে আসে প্রিয় জন্মভূমির বুকে।
চারণকবি মুকুন্দদাস দেশপ্রেম ও ব্রিটিশবিরোধী বক্তব্য প্রচারে শুরু করেছিলেন ‘স্বদেশি যাত্রা। আর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ব্রিটিশ ভারতের স্বদেশি আন্দোলনেকেই আঁকড়ে ধরে নির্মাণ ও পরিবেশনা তাদের প্রথম যাত্রাপালা ‘বিয়াল্লিশের বিপ্লব।’ উদীচী মনে করে মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজ বিনির্মাণের লড়াইয়ে উদীচী পথ চলছে অবিরাম। সে চলায় নিশ্চয়ই তাদের এই প্রয়াস নতুন মাত্রা সংযোজন করবে। যদি আমাদের স্বাধীনতার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে বর্তমানের তরুণ বন্ধুরা সমাজের অভ্যন্তরে বিরাজমান স্বার্থপর সাম্রাজ্যবাদী দেশীয় দালাল, মজুতদার, মুনাফালোভী লুটেরাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে, তবেই সার্থক হবে বিয়াল্লিশের বিপ্লব, সার্থক হবে উদীচীর এ প্রয়াস।
যাত্রাপালাটি রচনা করেছেন প্রসাদকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য। নির্দেশনা দিয়েছেন প্রখ্যাত যাত্রাশিল্পী ও নির্দেশক ভিক্টর দানিয়েল, সহযোগী নির্দেশক ছিলেন মোফাখ্খারুল ইসলাম জাপান, মঞ্চ ব্যবস্থাপনা করেছেন, শেখ আনিসুর রহমান, আলোক প্রক্ষেপণে আসলাম অরণ্য।
বিভিন্ন চরিত্র রূপায়ন করেছেন- বিমল মজুমদার, মারুফ রহমান, সামিন আহমেদ, জামিল উদ্দিন খান রতন, রেখা রাণী গুণ, আশরাফুন নাহার মালা, শারমিন আক্তার রিনি, মহুয়া, আলম স্নিগ্ধা, ফারহিন আল মাসুদ দিঠি প্রমুখ।