উৎকট হাতিরঝিল, দুর্গন্ধে চলা দায়
রাজিয়া সুলতানা, ঢাকা থেকে: মনোরম হাতিরঝিলের পানির আবর্জনা আর উৎকট ও পচা গন্ধে মানুষ এখন আর বেড়াতে যায় আসে না। রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলের পানির ভয়াবহ উৎকট ও পচা গন্ধে এলাকাবাসীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একই সঙ্গে লোকসান গুনতে হচ্ছে এখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকারদেরকে।
পর্যাপ্ত পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকায় হাতিরঝিলের পানির গুণগত মান খারাপ হতে হতে প্রকট আকার ধারণ করেছে। পয়ঃনিস্কাশনের ময়লা, আবর্জনা ও নোংরা পানি ঢুকে বিবর্ণ হয়ে গেছে পানি। বাতাসে উৎকট গন্ধ। পানির পচা গন্ধ মাইলের পর মাইল ছড়িয়ে পড়েছে। আশপাশের মূল সড়কগুলোতেও এ দুর্গন্ধে চলা করা দায়। স্থানীয় লোকজন জানান, বর্ষার সময় ছাড়া বছরের প্রায় সব ঋতুতেই পানিতে গন্ধ থাকে। পর্যাপ্ত পানি পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমানে শ্রমিক লাগিয়ে সরানো হচ্ছে ময়লাযুক্ত শেওলার আস্তরণ।
হাতিরঝিল উদ্বোধনের পর এটি রাজধানীর ঘিঞ্জি থেকে মানুষের একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার, একটু হাঁটাহাঁটি করাবার, বেড়ানোর জায়গা হয়ে উঠেছিল। রাজধানীর নানা প্রান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসত এখানে। কিন্তু এখন হাতিরঝিল নামের এই প্রকল্পটির লেকের পানি মানুষের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাহানারা দোলন নিত্য মগবাজার-মহাখালী রাস্তায় যাতায়াত করেন। তিনি অসহ্য হয়ে ফেসবুকে লিখলেন, ‘শহরের অভ্যন্তরে সবচেয়ে উৎকট নর্দমা হাতির ঝিলের ‘ঝিল।’ শহরের যেকোন কার্গো ডাস্টবিন কিংবা ফ্লাইওভার ডাস্টবিন এই ঝিলের কাছে হার মেনে গেছে।’ |
হাতিরঝিল প্রকল্পের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, আশপাশের বাসাবাড়ির গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনা, দর্শনার্থীর ফেলা বিভিন্ন খাবারের উচ্ছিষ্ট, চানাচুর ও চিপসের প্যাকেট, পানির বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা লেকের পানিতে ভাসছে। চারপাশে গড়ে ওঠা দোকান ও রেস্তোরাঁর ময়লাও ফেলা হচ্ছে পানিতে। কয়েকটি ড্রেন দিয়ে আশপাশ এলাকার পচা আবর্জনা ঝিলে প্রবেশ করে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা। এ পানি অনেকদিন আবদ্ধ থাকার ফলে এর বর্ণ এখন কালো।
হাতিরঝিলের ভয়াবহরকম এই দুর্গন্ধ ভয়ানক আকার ধারণ করেছে মগবাজার অংশে। এই অংশের পানিতে আবর্জনা ও শেওলার পুরু আবরণ পুরু আস্তরণ জমে কোথাও কালচে, কোথাও নীলচে, আবার কোথাও সবুজ রং ধারণ করেছে। বর্তমানে এই পানি জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
জাহানারা দোলন নিত্য মগবাজার-মহাখালী রাস্তায় যাতায়াত করেন। তিনি অসহ্য হয়ে ফেসবুকে লিখলেন, ‘শহরের অভ্যন্তরে সবচেয়ে উৎকট নর্দমা হাতির ঝিলের ‘ঝিল।’ শহরের যেকোন কার্গো ডাস্টবিন কিংবা ফ্লাইওভার ডাস্টবিন এই ঝিলের কাছে হার মেনে গেছে।’
মগবাজার-মহাখালী পথটাতে চলাচল করা সত্যিই অসম্ভব একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পথচারী তো বটেই, যানবাহনের যাত্রীদের জন্যে ও পথে যাতায়াত এখন অভিশাপের মতো। দূষিত পানির ওপর দিয়ে চলাচল করছে ওয়াটার ট্যাক্সি। তার থেকে সৃষ্ট ঢেউয়ের কারণে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।
ঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সির অ্যাডমিন অফিসার রুবেল হোসাইন বললেন, প্রতিবছর শীতকালে যখন পানি কমে যায় তখন দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এই দুর্গন্ধ আরও প্রকট আকার ধারণ করে। অনেক যাত্রী দুর্গন্ধের কারণে ওয়াটার ট্যাক্সিতে উঠতে চায় না। এই সমস্যা সমাধানে তারা কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিতেও দেখেন নি কখনও। তবে ইদানীং শ্রমিকরা ঝিলের ময়লা-আবর্জনা নিয়মিত পরিস্কার করছে। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হচ্ছে না। দিন দিন ক্রমশ দুর্গন্ধ আরও আরও বেড়েই চলেছে।
সংশ্নিষ্টরা বলছেন এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পানি থেকে ময়লা সরানোর কাজও চলছে। এ বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী এবং হাতিরঝিলের সমন্বিত প্রকল্প পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস জানালেন, ময়লা সরানোর কাজ ইতোমধ্যে তারা শুরু করেছেন। পুরো কাজ শেষ হতে আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত লেগে যাবে।