উ. কোরিয়ায় ভালো নেই রাষ্ট্রদূতরাও
উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ নানা নিষেধাজ্ঞা এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণে দমবন্ধ অতিষ্ঠ জীবন অতিবাহিত করছেন বিদেশি দূতরা। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ক্ষোভ, হতাশাজনক অভিজ্ঞতা আর বাস্তবতা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে ফরেইনপলিসি ডটকম। উত্তর কোরিয়ায় রাশিয়ার তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ভ্যালেরি সুখিনিন ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পিয়ংইয়ংয়ের ওপর নানামুখী নিষেধাজ্ঞা এবং কূটনৈতিক জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো জানাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দূতদের নিয়ে একটি সমাবেশ আয়োজন করেছিলেন।
সে সময় তিনি প্রতিবাদী কণ্ঠে জানিয়েছিলেন, মস্কো এবং বেইজিং থেকে নগদ টাকার বস্তা নিয়ে আসতে হয়েছিল এখানকার খরচ মেটাতে এবং কর্মীদের বেতন দিতে। কারণ, দেশটিতে পশ্চিমা ব্যাংকগুলো তাদের সঙ্গে লেনদেন করবে না নিষেধাজ্ঞার কারণেই। টয়োটা এবং মিতসুবিশিসহ জাপানি গাড়ি নির্মাতারা একই কারণে দূতাবাসের বহরে পরিষেবা দিতে অপারগতা জানিয়েছেন।
এমনকি তারা গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশও বিক্রি করতে নারাজ। রাশিয়ান কনসুলেটের চলাচলের জন্য জিপ কেনার অনুমতিও দেয়নি উত্তর কোরিয় কর্তৃপক্ষ। কারণ, তাদের দৃষ্টিতে এটি ছিল একটি নিষিদ্ধ বিলাসবহুল আইটেম।
প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার পরপরই উত্তর কোরিয়া ২০০৬ সাল থেকে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। পরমাণু ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্য রোধ করার লক্ষ্যে পদক্ষেপগুলো বছরের পর বছর ধরে সম্প্রসারিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর কোরিয়া জ্বালানি ও কাঠ-কয়লার বাণিজ্য সীমিত করেছে এবং বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। উত্তর কোরিয়ানদের জীবনে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নিয়ে বচসা চলতে থাকে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে, বিশেষ করে দেশটির মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে। কোভিড-১৯ মহামারি পিয়ংইয়ংয়ের কূটনৈতিক জীবনকে ক্ষুণ্ন করেছে, কারণ অধিকাংশ প্রতিনিধি দল তাদের দূতাবাসে সীমাবদ্ধ ছিল। দেশটি ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তবে সীমান্ত বন্ধ এবং ভ্রমণ বিধিনিষেধ থাকায় সে প্রচেষ্টা জটিল হয়ে যায়।
সিরিয়ার সরকারের অভিযোগ, পিয়ংইয়ং তার দূতাবাসে কম্পিউটার এবং ফটোকপিয়ারসহ প্রাথমিক অফিস সরঞ্জাম কিনতে লড়াই করেছে। সিরিয়ার মিশন জাতিসংঘের কাছে একটি চিঠিতে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এসব চিত্র প্রমাণ করে উত্তর কোরিয়ায় প্রায় ৩০০ বিদেশি কূটনীতিক কতটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে জীবনযাপন করে চলেছেন। এবিসি ডটনেট থেকে ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সে সময় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য দূতাবাস এবং এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বাসস্থান থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত রাত ৯টার মধ্যেই। ওই অবস্থায়ই বছরের পর বছর কাটাতে হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার কনস্যুলেট স্টাফ এন্ড্রি ইউওনো।
পশ্চিমা কূটনীতিকদের উত্তর কোরিয়ার কর্মকর্তাদের কাছে অত্যন্ত সীমিত প্রবেশাধিকার রয়েছে। যাদের অধিকাংশেরই বিদেশিদের মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমারা দেখেছেন, ইরানিদের জন্য পিয়ংইয়ংয়ের জীবন অত্যন্ত সহজ ছিল। এ কারণে তারা ধারণা করছেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি শেয়ার করতে সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে বেশ সক্রিয় দেখা গেছে।