গণবিয়ে মঞ্চে পাত্রীদের প্রেগনেন্সি টেস্টের লজ্জা! পজিটিভ আসায় ৫ বিয়ে ভণ্ডুল
সমাজের দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের জন্য সরকারি উদ্যোগে গণবিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু পাত্রীদের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয় তারা অন্তঃসত্ত্বা কিনা। বেশ কয়েকজনের পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ রিপোর্ট আসার পরে তাদের বিয়েও বাতিল করা হয়। ভারতের মধ্যপ্রদেশে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গণবিয়ের আয়োজনটি করা হয়।
কে প্রেগনেন্সি টেস্ট করানোর নির্দেশ দিল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের ‘মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বিবাহ/নিকা যোজনা’র অধীনে শনিবার দিন্দোরির গাদসারাই এলাকায় বসেছিল বিবাহ বাসর। এ খবর দিয়েছে ভারতের এনডিটিভি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসহ অনেক গণমাধ্যম।
এনডিটিভি জানায়, ২১৫ জন তরুণীর বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে। সূত্রের খবর, পাত্রীরা অন্তঃসত্ত্বা কিনা তা বোঝার জন্য সেখানেই তাদের প্রেগনেন্সি টেস্ট করানো শুরু হয়। তাতে ৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসাতেই তাদের বিয়ে বাতিল করা হয়।
বিয়ের আগে মেয়েদের প্রেগনেন্সি টেস্ট করানোর কোনো নিয়ম নেই বলে ঘটনা জানাজানি হতেই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলা হচ্ছে, বিতর্কিত এই ঘটনায় কয়েকটি মেয়ে ও তাদের পরিবারকে সামাজিকভাবেই মুখে চুনকালি মাখা হলো।
যে পাঁচ কনের টেস্ট পজিটিভ আসে তাদের একজন গণমাধ্যমকে বলেছেন তিনি একজনের বাগদত্তা। কিছুদিন ধরে তারা একসঙ্গেই বসবাস করছিলেন এবং গণবিয়ে অনুষ্ঠানে দুজনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ এই পাত্রী বলেন, টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ আসায় আমাদের বিয়েটা ভণ্ডুল হয়ে গেলো।
ওই এলাকায় বচ্চরগাঁও গ্রামের সরপাঞ্চ মেদানি মারাওয়ি জানিয়েছেন, এর আগে কখনও এমন কোনো পরীক্ষা করা হয়নি। এটা মেয়েদের জন্য অপমানজনক, পরিবারের কাছেও ছোট করে দেওয়া হল তাদের। এই বিতর্কিত পরীক্ষা যে করানো হয়েছে তা স্বীকার করেছেন দিনদোরি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রমেশ মারাওয়ি। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সাধারণত বয়স বোঝা, রক্তশুন্যতার সিকল সেল অসুখ এবং শারীরিক সক্ষমতা বোঝার জন্য কিছু মেডিকেল টেস্ট করা হয়।
তিনি বলেন, ‘কয়েকজন মেয়ের ক্ষেত্রে সন্দেহ হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাদের প্রেগনেন্সি টেস্ট করানো হয়েছিল। আমরা শুধু পরীক্ষা করিয়ে তার রিপোর্ট জমা দিয়ে দিই।’ অন্তঃসত্ত্বা বলে চিহ্নিত হওয়ায় ৫ পাত্রীকে গণবিবাহ থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি সোশ্যাল জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট নিয়েছে বলেও তিনি তথ্য দেন।
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে প্রেগনেন্সি টেস্ট করানোর মাধ্যমে মেয়েদের অপমান করতে চেয়েছে।
এই বিষয়ে টুইট করে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ লিখেছেন, ‘আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই এই ঘটনাটা কি সত্যি? যদি সত্যিই এমনটা হয়ে থাকে তাহলে কার নির্দেশে মধ্যপ্রদেশের মেয়েদের এমন জঘন্য অপমান করা হল? মুখ্যমন্ত্রীর চোখে কি গরীব এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়েদের কোন সম্ভ্রম নেই? এমনিতেই নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ঘটনায় দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সরকার।’ ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করে দোষীদের যথোপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী কন্যা বিবাহ/নিকা যোজনা। এই যোজনার অধীরে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের মেয়েদের বিয়ের জন্য ৫৬ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করে সরকার।
সূত্র : এনডিটিভি