চিপ কারখানা স্থাপন: তাইওয়ানের সঙ্গে ভারতের আলোচনায় অগ্রগতি
ভারতে চিপ কারখানা স্থাপন ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিতে তাইওয়ানের সঙ্গে আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। বিষয় সম্পর্কে অবগত সূত্রের বরাতে জানা গেছে, চলতি বছরের শেষের দিকেই প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হবে। ভারত এক্ষেত্রে শুল্ক অব্যাহতির ঘোষণাও দিয়েছে। এতে এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক যে আরো তিক্ত হবে তা স্পষ্ট। খবর জাপান টাইমস ও পিটিআই।
ভারতে ৭৫০ কোটি ডলারের চিপ কারখানা স্থাপনে গত কয়েক সপ্তাহে তাইপে ও নয়াদিল্লির মধ্যে আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ও শিল্প উপকরণ সরবরাহ থেকে শুরু করে ফাইভজি ডিভাইস ও বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণে একে অন্যকে সহায়তার ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে বলে জানায় সূত্রগুলো। কারখানার জন্য আদর্শ জমি, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিতে কাজ করছে ভারত। ২০২৩ সাল থেকে কারখানা কার্যক্রম শুরু হলে ভারত ৫০ শতাংশ মূলধন ব্যয় করবে এবং শুল্ক অব্যাহতিসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেবে বলে জানান তারা।
তাইপের কর্মকর্তারাও চিপ নির্মাণ কারখানা স্থাপন চুক্তিতে দ্রুত অগ্রগতির আশা করছেন। তারা সেমিকন্ডাক্টর তৈরির অন্যান্য উপকরণেও ভর্তুকি ও শুল্ক অব্যাহতি চাইছেন। বিষয়টির সংবেদনশীলতার কারণে সূত্রগুলো নাম প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেছে। তাইওয়ান ও ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে বসেছে।
তাইওয়ান বেশ আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এগিয়ে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিল। কিন্তু বেইজিংকে ক্ষুব্ধ করবে এমন আশঙ্কায় বারবার পিছু হটেছে নয়াদিল্লি। কিন্তু গত বছর সীমান্তে সংঘর্ষের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে অনাস্থা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন কোয়াডে যুক্ত হওয়ায় ভারতের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক টানাপড়েন ১৯৬০-এর দশক পরবর্তী সময়ে তুঙ্গে ঠেকেছে।
চিপ নির্মাণে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে দীর্ঘদিন ধরেই প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল ভারত। এজন্য বিশ্বের শীর্ষ চিপ নির্মাতা টিএসএমসির সঙ্গে বিনিয়োগ আলোচনা চালিয়েছে। অন্যদিকে বেইজিংয়ের অব্যাহত চাপ প্রশমনে বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে তাইওয়ান। দ্বীপাঞ্চলটিকে নিজেদের অখণ্ড অংশ বলে দাবি করে আসছে বেইজিং।
চিপ-স্বল্পতার ধাক্কা লেগেছে সব শিল্প খাতে। সম্প্রতি গুগলের সঙ্গে যৌথভাবে নির্মিত স্মার্টফোন উন্মোচন পিছিয়ে দিয়েছে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। ওই স্মার্টফোনটিকে ভারতের সবচেয়ে সাশ্রয়ী স্মার্টফোন দাবি করে আসছিল মুকেশ আম্বানি মালিকানাধীন কোম্পানিটি। বর্তমানে বার্ষিক ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার মূল্যের চিপের পুরোটাই আমদানি করে আসছে ভারত। ২০২৫ সালে ভারতের বাজারে চিপের চাহিদা ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টরা। এজন্য চিপে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ভারতে কারখানা স্থাপন সময়ের দাবি বলে মনে করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার।
সেমিকন্ডাক্টর ইস্যুতে উভয় পক্ষের সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়েছে তাইওয়ান। তবে ভারতে চিপ কারখানা স্থাপনে প্রয়োজনীয় ইকোসিস্টেমের ঘাটতি মাথায় নিয়ে প্রস্তাবনা এখনো পর্যালোচনা স্তরে রয়েছে বলে জানায় তাইওয়ানের একটি সূত্র। বিশেষ করে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে তাইওয়ান তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সহায়তার ব্যাপারে ২০১৮ সালে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল ভারত ও তাইওয়ান। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপাত্তে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চে শেষ হওয়া গত অর্থবছরে উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৫৬০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে করোনা মহামারীর কারণ দেখিয়ে হাজারো ভারতীয়কে চীনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে শি জিনপিং সরকার। চীনের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে নয়াদিল্লি। এ সিদ্ধান্তকে ‘অবৈজ্ঞানিক’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে।