দেবতা ভেবে ডাইনোসরের ডিমে পূজা
গোলাকার শিলার মতো দেখতে একটি বস্তুতে দীর্ঘদিন ধরে পূজা দিয়ে আসছিলেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের ধার জেলার একটি গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের বিশ্বাস ছিল শিলাটি জমি ও গবাদি পশু রক্ষা করে এবং দুর্দশা দূর করে। কিন্তু একদল বিজ্ঞানী গোলাকার শিলাটির মধ্যে ভিন্ন কিছু খুঁজে পেয়েছেন।
বিবিসি ও ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিলাটি আসলে ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম।
এটা টাইট্যানো-স্টর্ক প্রজাতির ডাইনোসরের ডিম। ডাইনোসর ফসিল পার্কের বৈজ্ঞানিক ও উন্নয়নমূলক কাজ পরীক্ষা করার জন্য তিন বিজ্ঞানী মহেশ ঠক্কর, বিবেক ভি কাপুর ও শিল্পা মিলে চলতি মাসে ধার জেলার পাড়ল্যা গ্রামে একটি কর্মশালা করেন। সেখানেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়।
কর্মশালার সময় স্থানীয় বাসিন্দা ভেস্তা প্যাটেল বিজ্ঞানীদের ‘কাকর ভৈরবের (দেবতা)’ সম্পর্কে অবহিত করেন।
ভেস্তা জানান, গোলাকার পাথরের পূজা করা এখানে একটি ঐতিহ্য। ‘কাকর’ নামক এই পাথরগুলোকে মাঠের সীমানায় পূজা করা হতো এবং এ ধরনের দুটি পাথর (আসলে ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম) ফসিল পার্কের প্রাঙ্গণে পাওয়া যায়।
ভেস্তা মান্দোলাই বিবিসিকে বলেছেন, ‘কিছুদিন আগ পর্যন্ত আমরা জানতামই না, ওই শিলা আসলে ডাইনোসরের ডিমের জীবাশ্ম। কত বছর ধরে আমরা কাকর ভৈরবের (দেবতা) পূজা করে আসছি সে ইয়ত্তা নেই।
’ তিনি জানান, গ্রামবাসীরা এই গোলাকার শিলাকে নারকেল নিবেদন করত। পাথরগুলো আসলে ডাইনোসরের ডিম, এটা আবিষ্কার হওয়ার পর সবাই অবাক হয়ে গেছেন।
ভারতের মধ্যপ্রদেশের ধার জেলা ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। নর্মদা ভ্যালি অঞ্চলে এর অবস্থান। জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে খননকাজ করছেন।
যেখানে মাঝেমধ্যে ডাইনোসরের ‘নেস্টিং সাইট’, ‘নেস্ট’, ডিমের জীবাশ্ম, হাঙরের দাঁতের জীবাশ্ম- আরো অনেক কিছু পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত ডাইনোসরের ২৫৬টি ডিমের জীবাশ্ম উদ্ধার হয়েছে।
পাড়ল্যা গ্রামের স্থানীয়দের বিশ্বাস, দীপাবলির সময় জমির একটা অংশে কাকর ভৈরব প্রতিষ্ঠা করে সন্তানসম্ভাবনা গবাদি পশু ওই শিলার ওপর দিয়ে লাফ দিয়ে পার করাতে হবে। এতে পশুর আগত সন্তান সুস্থ হবে, ফলে মালিকের ভবিষ্যৎও সুরক্ষিত হবে। একই সঙ্গে সব বিপদও কাটবে।
ডাইনোসরের জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞ বিশাল ভার্মা বলেন, এই জীবাশ্মগুলোর সংরক্ষণ এবং সম্পর্কিত ঐতিহ্যগুলো বিশ্বের কাছে প্রদর্শন করা যেতে পারে। ফলে পার্কের আকর্ষণ বেড়ে যাবে।
ভার্মা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘গোলাকার পাথরকে পারিবারিক দেবতা বলে বিশ্বাস করা হয় এখানে। শুধু ডিমই নয়, স্থানীয় পূজার রীতিতেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডুমুরগাছের নিচে রাখা এই পাথরগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পূজা হয়ে আসছে।’
সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে, বিবিসি