নীল প্যান্টের বিক্ষোভকারীদের দখলে মস্কো
রাশিয়াতেই এখন পুতিনের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমেছে। প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের দমাতে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও গণগ্রেপ্তারের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। তবু বিক্ষোভ থামছে না।
বিক্ষোভের শুরুটা হয় মূলত গত বছর ডিসেম্বর থেকেই। রাশিয়ার কারাবন্দি নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে ঘিরেই বিক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। বিক্ষোভের শুরুতে মস্কো প্রশাসন একে অতটা আমলে নেয় নি। নাভালনির মুক্তিকে ঘিরে আন্দোলন যে এভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠবে তা বুঝতে কিছুটা সময় চলে যায়।
নাভালনির সমর্থনে পরিকল্পিত সমাবেশের আগে মস্কোর বিভিন্ন মেট্রো স্ট্রেশন বন্ধ ও চলাচল সীমিত করে দিচ্ছে কর্র্তৃপক্ষ। শহরের কেন্দ্রস্থলে অসংখ্য দোকান ও রেস্তোরাঁ বন্ধ এবং মাটির ওপর দিয়ে চলাচল করা যানবাহনকে অন্যপথে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এসব সত্ত্বেও দেশটির অন্যান্য অংশে সরকারবিরোধীদের পরিকল্পিত কর্মসূচি শুরু হয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে রাশিয়াজুড়ে নাভালনি সমর্থকদের বিক্ষোভ থেকে চার হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছিল। নার্ভ এজেন্ট ‘নভিচক’ দিয়ে হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর জার্মানিতে কয়েক মাসের চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেই আটক হন নাভালনি।
স্থগিত এক দণ্ডের নির্দেশনা অমান্য করার অপরাধে ১৭ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেদিনই তিনি বার্লিন থেকে রাশিয়ায় ফিরেছিলেন। রাশিয়ার কর্র্তৃপক্ষ বলছে, অর্থ আত্মসাতের এক মামলার স্থগিত দণ্ড চলাকালে নাভালনির নিয়মিত পুলিশের কাছে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল।
গত ডিসেম্বর থেকে মস্কোর রাজপথে আন্দোলনকারীদের নীল প্যান্ট, বাথরুম পরিষ্কার করার ব্রাশ নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে। বিশাল সব র্যালির পুরোটা জুড়েই যেন শুধু নীল প্যান্টের সমারোহ। বিক্ষোভের প্রতীক হিসেবে নীল প্যান্টের প্রচলন মূলত পুতিনের মাধ্যমেই। সম্প্রতি পুতিন অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন নীল রঙের সাঁতারের পোশাক পরে। তখন নাভালনির মিত্ররা ব্যঙ্গ করে বলেছিল, ‘পুতিন তার শীর্ষ প্রতিপক্ষের অন্তর্বাস নিয়ে খেলাধুলা করছিলেন।’
জার্মানি থেকে রাশিয়ায় ফিরে গ্রেপ্তার হওয়া নাভালনি তার ৩০ দিনের আটকাদেশকে ‘পুরোপুরি অবৈধ’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি যে জার্মানিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন, কর্র্তৃপক্ষ তা জানত বলেও ভাষ্য তার। আটক হওয়ার পর সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোরও ডাক দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত এ রাজনীতিক। তারই ধারাবাহিকতা গত সপ্তাহে একাধিক সমাবেশ হয়েছে রাশিয়াজুড়ে।
জমায়েত হওয়ার ব্যাপারে পুলিশের সতর্কতা জারি এবং তাপমাত্রা মাইনাস ৫২ সেলসিয়াসে নেমে গেলেও ইতিমধ্যে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলের শহরগুলোতে নাভালনির সমর্থনে সমাবেশ শুরু হয়েছে। পুলিশ আড়াইশজনেরও বেশি লোককে আটক করেছে বলে প্রতিবাদ পর্যবেক্ষণকারী গোষ্ঠী ওভিডি-ইনফো জানিয়েছে। মস্কোতে আরও পরে সমাবেশ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
গত সপ্তাহ থেকে নাভালনির ঘনিষ্ঠ অনেককে আটক করা হয়েছে। তার ভাই, নারীবাদী গোষ্ঠী পুসি রায়টের সদস্য মারিয়া আলিয়োখিনাসহ অনেককে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে। মানবাধিকারবিষয়ক একটি রুশ ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক সের্গেই স্মিরনভকেও শনিবার তার বাড়ির বাইরে থেকে আটক করা হয়েছে।❐