পরিবেশকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিচ্ছে অবৈধ পাথর উত্তোলন
পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ গোপন করে ৩ বছর ধরে জাফলংয়ের ডাউকি নদী থেকে পাথর উত্তোলন করছিল প্রভাবশালীরা। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবারও কৌশল বদল করে ইসিএ এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি চিহ্নিত চক্র। এ অপতৎপরতা রোধে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে প্রশাসনকে।
বস্তুত বেআইনি হলেও প্রভাবশালী ও দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু মানুষ প্রশাসনের নাকের ডগায় জাফলংয়ে পাথর উত্তোলনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায়ই সেখানে শ্রমিকের মৃত্যু এবং পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হলেও প্রশাসন ও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে।
অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ না হওয়ার কারণ, পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে লোকদেখানো অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের পরপর আবারও শুরু হয় পাথর উত্তোলন। আরও অভিযোগ রয়েছে, কোয়ারিতে অভিযান পরিচালনার আগেই অপরাধীরা গা ঢাকা দেয়।
প্রশ্ন হলো, অভিযান পরিচালনার আগেই যদি অপরাধীরা খবর পেয়ে যায়, তাহলে সেই অভিযানের অর্থ কী? তাহলে কি শর্ষের ভেতরেই রয়েছে ভূত? এই ভূত তাড়াতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আরও অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ পাথর উত্তোলনের কাজ নির্বিঘ্ন করতে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়।
বেশ কিছুদিন আগে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকের মৃত্যু ও তাদের লাশ গুম করার ঘটনার পর দুটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি পরিবেশ ধ্বংস, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট এবং শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী ব্যবসায়ীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানা যায় নি।
এর অনেক আগে ২০০৮ সালে সিলেটের উন্নয়নে ১২টি প্যাকেজ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, যেসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল এ অঞ্চলের পর্যটন স্থানগুলোর উন্নয়ন ও উৎকর্ষ বৃদ্ধি।
গৃহীত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে সুষম উন্নয়নের ধারণাটি যেমন বাস্তব ভিত্তি পেত, তেমনি এর ইতিবাচক প্রভাব স্থানীয় পর্যায়ে দৃশ্যমান হওয়ার পাশাপাশি তা অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধেও ভূমিকা রাখত। কিন্তু প্রকল্পগুলো এখনও বাস্তবায়িত হয় নি।
মনে রাখা দরকার, প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর বেআইনি খবরদারি কখনও সুফল বয়ে আনে না। জাফলংয়ের পাথর উত্তোলন শুধু পরিবেশের বিপর্যয়ই ঘটাচ্ছে না, কেড়ে নিচ্ছে অনেকের প্রাণ। এই অনাচার থেকে মুক্ত হতে হবে যে কোনও মূল্যে।