প্রকৃতির কোলে অভিনব বাড়ি “আর্থ হাউস”
সুইজারল্যান্ডের স্থপতি পেটার ভেচ ৫০ বছর ধরেই প্রকৃতির মধ্যে বাড়ি তৈরি করে আসছেন। পুরো ইউরোপজুড়ে তিনি প্রায় এক শটি ‘আর্থ হাউস’ তৈরি করেছেন। এসব বাড়িতে পাবেন কাজের ভালো পরিবেশ এবং জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি সবুজের সমারোহ।
পেটার ভেচ বলেন, ‘এই নির্মাণ পদ্ধতিতে আমার অনেক কম উপাদান প্রয়োজন হয়। নিখুঁত পরিমাপেরও দরকার নেই। একেবারে সেন্টিমিটার ধরে কাজ করতে হয় না, বরং অনুভূতি অনুযায়ী লাগালেই চলে, শিশুরা যেমন বালুর স্তূপে দুর্গ বানায়।’
পেটার ভেচ কংক্রিট দিয়েই তার ‘আর্থ হাউস’ তৈরি করেছেন। অন্য স্থপতিরা সাধারণত প্রাকৃতিক উপাদানই বেশি ব্যবহার করেন। ভবন ও প্রকৃতির মধ্যে বিভাজন প্রায় চোখেই পড়ে না। সেগুলো প্রকৃতিরই অংশ হয়ে উঠেছে। পেটার বলেন, ‘যেমন এখানে ৫০ সেন্টিমিটার পুরু মাটির স্তর রয়েছে। ওপরের দিকে এক মিটার, ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ঢাকা রয়েছে। এর ফলে অনেক সবুজ জায়গা পাওয়া যায়। গাছপালার জন্যও প্রচুর জায়গা পাব।’
কংক্রিটের জঙ্গলের বদলে সবুজ ঢিবি কিন্তু বাইরেটা এমন হলেও মাটির নিচের ভবনের ভেতরে আলো, শীতাতপ ও উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ কতটা কার্যকর?
গেয়ার্ড হানসেনও প্রায় ৩০ বছর ধরে ‘আর্থ হাউস’ নির্মাণ করছেন। তিনি কংক্রিটের বদলে মাটির মোড়কে ঢাকা কাঠের মডিউল ব্যবহার করেন। গেয়ার্ড বলেন, “ভবনটি আসলে ‘প্যাসিভ হাউস’ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ খুব ভালো জানালা, খুব ভালো ইনসুলেশনও রয়েছে। তবে মাটিও ভবনটির তাপমাত্রার ওপর বড় প্রভাব রাখবে। নিচের দিকে চার মিটার ‘স্লোপ এমব্যাংকমেন্ট’ রয়েছে। ছাদের ওপর শুধু সবুজের স্তর নয়, বেশ পুরু মাটির স্তর রয়েছে। ফলে গ্রীষ্মে ভেতরে মনোরম শীতল পরিবেশ থাকে। শীতকালেও বেশি গরম রাখার প্রয়োজন হয় না। ঘর গরম রাখার জন্য নামমাত্র ব্যয় হয় এই বাড়িতে।’
আনা ক্নর ছয় বছর ধরে সপরিবারে এমন এক ‘আর্থ হাউস’-এ বাস করছেন। প্রথম দর্শনেই তিনি সেই ভবনের প্রেমে পড়েছিলেন। ভবনটি দশ মিটার চওড়া এবং মাটির নিচে শিকড় ও পানি নিরোধক বিশেষ মোড়ক দিয়ে ঢাকা। সামনে ও পেছন দিকে তিনটি করে কাচের স্তরের বিশাল জানালা রয়েছে।
‘আর্থ হাউস’-এর মালিক আনা ক্নর বলেন, ‘নির্মাণের সময় বাসাটি হয়তো কিছুটা অন্ধকার হবে বলে আমাদের মনে দুশ্চিন্তা ছিল। আমার মতে, ‘আর্থ হাউস’ শব্দটি শুনলে সবার আগে মানুষের মনে সেই বিষয়টি ভেসে ওঠে। মনে হয় অন্ধকার ও বদ্ধ জায়গা। কিন্তু এখানে যথেষ্ট আলো আছে এবং ভবনটি স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।’
হানসেন নামের নির্মাণ কম্পানি ভবনটির কাঠের মোড়ক সরবরাহ করেছে। কম্পানি সেটি বসানোর দায়িত্বও নিয়েছে। ক্নর পরিবার ভবনের ভেতরের কাজ নিজেরাই করেছে। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রথাগত পারিবারিক ভবনের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয় হয়েছে। ঢিবির মধ্যে এমন ইনসুলেটেড ভবন সাধারণ জ্বালানি ব্যয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সাশ্রয় করে। সেই সঙ্গে মাটির স্তর বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ভবনের কার্বন ফুটপ্রিন্টও কমিয়ে দেয়। খননের সময় যে মাটি তোলা হয়েছিল, সেগুলোই ছাদের ওপর ছড়িয়ে তার ওপরটা সবুজ করে তুলেছে কেউ কেউ। তবে এমন ভবনে একাধিক তলা রাখা সম্ভব নয়।
‘আর্থ হাউস’ জার্মানিতে এখনো অত্যন্ত বিরল। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, জ্বালানি সাশ্রয়, নির্মাণের ক্ষতিপূরণের মতো বিষয়ের কারণে ভবিষ্যতে মডেল হয়ে উঠতে পারে এটি।
সূত্র : ডয়চে ভেলে