ফ্রান্সে সিটি হলে আগুন ধরিয়ে দিলেন বিক্ষোভকারীরা
ফ্রান্সে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ বেশ কয়েকটি শহরে এ সংঘর্ষ হয়। সরকারের প্রস্তাবিত অবসর নীতির বিরুদ্ধে তিন মাসের বিক্ষোভের মধ্যে এটি সহিংসতার সবচেয়ে বড় ঘটনা। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বেসামরিক কর্মচারীদের অবসরের বয়স বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। অবসরের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সংসদ কোনো ভোট ছাড়াই এই সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।
ফ্রান্সের রাজপথে তিন মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। দেশজুড়ে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয়া শুরু করে। এদিন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর বোর্দোতে পৌর ভবনের বারান্দায় আগুন লাগায় বিক্ষোভকারীরা।
ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের আগামী মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে। ব্রিটিশ রাজা হিসেবে এটাই চার্লসের প্রথম বিদেশ সফর। তবে, মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা নতুন প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করায় রাজা চার্লসের সফরে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয়। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন জানিয়েছেন, ফ্রান্সজুড়ে বিভিন্ন সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর ১৪৯ সদস্য আহত হয়েছেন। অন্তত ১৭২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে শুধু প্যারিস থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে ৭২ জনকে। প্যারিসে প্রায় ১৪০টি জায়গায় আগুন দেয়া হয়েছিল।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে ১০ লাখ ৮৯ হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। শুধুমাত্র প্যারিসেই এক লাখ ৯০ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। গত জানুয়ারিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল রাজধানী শহরে সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
তবে, ৭ মার্চের বিক্ষোভে সারাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ অংশ নেয়। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ওইদিন বিভিন্ন স্থানে মোট ১২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। প্যারিসে কালো পোশাক পরা শত শত উগ্রবাদী বিক্ষোভকারীরা ব্যাংক, দোকান ও ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টের জানালা ভেঙে ফেলে এবং রাস্তার সরঞ্জাম ধ্বংস করে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিলের স্থানীয় পুলিশ প্রধান থিয়েরি কর্টেকুইস বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে সামান্য আহত হয়েছেন। প্যারিসের গ্যারে দে লিয়ন স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা রেলপথ দখল করে রাখে। চার্লস ডি গল বিমানবন্দরও বন্ধ ছিল।
গত বুধবার (২২ মার্চ) ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পেনশন সংস্কার জরুরি হওয়ার আহ্বান জানানোর পর বিক্ষোভকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এদিন ম্যাক্রোঁ জানিয়েছিলেন, এই সংস্কার করতে গিয়ে তার জনপ্রিয়তা কমে গেলেও তিনি তা মেনে নিতে প্রস্তুত। এর আগে গত রোববার (১৯ মার্চ) এক জরিপে দেখা গেছে, ম্যাক্রোঁর জনপ্রিয়তা ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে।