ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসে বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন
ব্রাসিলিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস যথাযোগ্য মর্যাদায় উৎসবমুখর প্রাণবন্ত পরিবেশে বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী- মুজিববর্ষের সমাপনী পালন করে।
বিজয়ের ৫০তম বার্ষিকী বিশাল পরিসরে উদযাপনের পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি থাকলেও বৈশ্বিক করোনা মহামারীর প্রেক্ষিতে পরিমিত পরিসরে যথাযথ শ্রদ্ধা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান বিজয় দিবস ২০২১ উদযাপন করা হয়। এ আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্রাজিলিয়ান নাগরিক উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সঙ্গীতের সাথে শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সূচিত মহান বিজয় দিবস অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর তিনি সমাগত অতিথিবৃন্দ এবং দূতাবাস পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
অনুষ্ঠানের পরবর্তী অংশের শুরুতে পবিত্র কোরান থেকে পাঠ এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, মহান ভাষা আন্দোলনসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদ এবং বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগষ্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডে নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদ-এর আত্মার মাগফেরাত এবং বাংলাদেশের ক্রমঅগ্রসরমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অব্যাহত অগ্রযাত্রা কামনা করে এবং বিদ্যমান করোনা ভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীর মানুষকে রক্ষার আহবান জানিয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়।
দুতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রদত্ত বিশেষ বাণী পাঠ করেন। এরপর, বিজয় দিবসের তাৎপর্যকে প্রতিপাদ্য করে আয়োজিত মুক্ত আলোচনা পর্বে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিগণ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী ত্রিশ লক্ষ শহিদ এবং ৭১-এ দেশজুড়ে গণহত্যা ও পাশবিক নির্যাতনের বেদনাময় ঘটনাপ্রবাহ স্মরণ করেন। পাশাপাশি বিশ্বসভায় বাংলাদেশের এই রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরনীয় অবদানের উপর আলোকপাত করেন। বক্তারা আর্থ- সামাজিক ক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্জনের উপর বিশেষ আলোকপাত করেন। দক্ষিণ আমেরিকার জনগণের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করতে এবং বৈশ্বিক নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। আলোচনা সভায় অন্যতম প্রধান আলোচক হিসেবে দূতাবাসের সামরিক উপদেষ্টা বঙ্গবন্ধুর জীবন, স্বাধীনতা অর্জনে তাঁর অসামান্য ভূমিকা এবং যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন যে, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন সত্ত্বা। আধুনিক সামরিক বাহিনী গঠনে জাতির জনকের দূরদর্শী নেতৃত্ত্বের অবদানের কথাও তিনি শ্রদ্ধাবনত চিত্ত্বে স্মরণ করেন।
শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তাঁর বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিসংগ্রামের ঘটনাক্রমে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ত্বের অবদান সবিস্তারে বর্ণনা করে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দেবার জন্য তাঁকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষাধিক নারী মুক্তিযোদ্ধা ও চার জাতীয় নেতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে তিনি সমবেত অতিথিবর্গকে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে জাতির জনকের নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রে জাতির জনকের শাহাদৎ বরণ ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কীভাবে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে বিশদ আলোকপাত করেন।
শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণ ও বৈষম্যহীন ‘সোনার বাংলা’ গঠনে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিক অবদান রাখার আহ্বান জানান। উপস্থিত সকল বাংলাদেশী পিতা মাতাকে তাঁদের সন্তানদের বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স উপস্থিত সকলকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পরিচালিত শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। পরিশেষে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে উপস্থিত সকলকে আপ্যায়িত করার মধ্য দিয়ে আনন্দঘন এ অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।