ভ্যাকসিন প্রদানে ইউরোপ উদাসীন
ইউরোপে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনা রোগী। সংক্রমণ রুখতে অঞ্চলটির অনেক দেশই ইতিমধ্যে নিয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। তবে যুক্তরাজ্য ছাড়া কোনো দেশেই টিকাদানে খুব একটা অগ্রগতি নেই। উল্টো অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে ‘বিভ্রান্তিকর’ তথ্য ছড়াচ্ছে কয়েকটি দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে যতটা না ঝুঁকি তার চাইতে বেশি আছে রাজনীতি। এই অবস্থায় অঞ্চলটিতে টিকাদানের গতি নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুসারে, টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো সময়মতো টিকা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপের বহু দেশ কার্যকর টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে। এর পাশাপাশি রয়েছে টিকার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। গত বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অঞ্চলটিতে টিকাদানের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। তাতে হতাশা প্রকাশের পাশাপাশি সংস্থাটি জানিয়েছে, এই অঞ্চলটি মাত্র ১০ শতাংশ মানুষকে এক ডোজ টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে।
ইউরোপে ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক ড. হ্যান্স হেনরি পি. ক্লুজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মহামারী অবসান ঘটানোর সবচেয়ে ভালো উপায় টিকাদান। এটি কেবল তাদের কাজই করছে না বরং সংক্রমণ ঠেকাতেও খুব কার্যকর। তারপরও এসব টিকাদানের পরিমাণ অগ্রহণযোগ্য রকম ধীর।’ তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত টিকাদানের আওতা সীমিত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত অতীতের মতোই জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত এবং সামজিক পদক্ষেপ মেনে চলা দরকার। স্পষ্ট করে বলতে চাই, উৎপাদন বাড়িয়ে, টিকাদানের বাধা অপসারণ করে এবং মজুদ থাকা প্রতিটি ডোজ ব্যবহার করে আমাদের অবশ্যই টিকাদান প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে।’
ডব্লিউএইচওর ইউরোপের আঞ্চলিক জরুরি পরিচালক ডোরিট নিটজান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, মাত্র পাঁচ সপ্তাহ আগে এই অঞ্চলে সংক্রমণের পরিমাণ ১০ লাখের নিচে নেমে আসে। কিন্তু অতিরিক্ত ভ্রমণ, ধর্মীয় ছুটির দিনে জমায়েত এবং যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হওয়া বি.১.১.৭ ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতির কারণে ইউরোপের মানুষ বর্তমানে আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। গত সপ্তাহে অঞ্চলটিতে নতুন করে ১৬ লাখ আক্রান্ত শনাক্ত হয় আর মারা যায় প্রায় ২৪ হাজার। নিটজান বলেন, ‘এই ভ্যারিয়েন্টটি বেশি সংক্রামক এবং হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। আর জনস্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব অনেক বেশি। সেই কারণে এটি নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি পদক্ষেপ দরকার।’
সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বি.১.১.৭ ধরনটি প্রথম যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়। এটি এই ভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর চেয়ে আরও বেশি সংক্রামক। এটি আরও বেশি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে এবং দ্রুত তরুণ জনগোষ্ঠীকে সংক্রমিত করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহামারী বিশেষজ্ঞ মাইকেল অস্টারহোম বলেন, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটি আরও বেশি মারাত্মক। তবে আমরা যদি আরও কিছুদিন সতর্ক থাকি, গ্রীষ্মের আগে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে পারি, তাহলে এই ধরনটি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।’
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশে এর আগেও সতর্কতামূলক কারণে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু তার কিছু দিন পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্র্তৃপক্ষ উভয়েই এই টিকা নিরাপদ ও কার্যকর বলে মত দেওয়ার পর আবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া শুরু হয়। তবে তাতেও নেই যথেষ্ট গতি।❐