মণিপুরে নারীদের ওপর সহিংসতা: মূল অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দিলেন বিক্ষুদ্ধরা
ভারতের মণিপুরে দুই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর নগ্ন করে ঘোরানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার প্রধান অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুদ্ধরা। হেমন্ত পান্ডে নামের স্থানীয় পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনা নিশ্চিত করে হেমন্ত পান্ডে জানান, শুক্রবার (২১ জুলাই) সকালে প্রধান অভিযুক্ত খুইরেম হেরোদের বাড়িতে একদল মানুষ হামলা চালায়। বিক্ষুদ্ধ দলটির অধিকাংশ ছিল নারী। তারা প্রথমে হেরোদের বাড়ির দিকে ইটপাটকেল ছোড়ে। পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে হেরোদের ঘরের কিছু অংশ পুড়ে যায়। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে বিক্ষুদ্ধ নারীদের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হয় বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
বুধবার (১৯ জুলাই) দুই মাস ধরে চলা মণিপুর সহিংসতার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ৪ মে ধারণ করা ভিডিওটিতে দেখা যায়, একটি মব বা উন্মত্ত জনতা দুজন নারীকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরাচ্ছেন। ওই দুই নারী রাজ্যটির সংখ্যালঘু আদিবাসী কুকি জনগোষ্ঠীর। ভিডিওটা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে পরের দিন বৃহস্পতিবার মোদি প্রথমবারের মতো মণিপুর সহিংসতা নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি ওই ঘটনা ক্ষমার অযোগ্য এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন।
মোদির ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মাথায় প্রধান অভিযুক্ত খুইরেম হেরোদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে একই ঘটনায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। নারীদের ধর্ষণ ও নগ্ন করে ঘোরানোর ঘটনার সঙ্গে আরও অন্তত ৩০ জন জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্ক্রলডটইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ মে মূলত কুকি জনগোষ্ঠীর তিনজন নারীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়। এরপর অভিযুক্তরা কিছু লোককে খেপিয়ে তিন নারীর মধ্যে দুজনকে নগ্নভাবে রাস্তায় ঘোরান।
আল-জাজিরা জানায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যটিতে স্থানীয় আদালতের একটি আদেশকে কেন্দ্র করে ৩ মে থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতিস ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কুকি-জোদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। আদালতের আদেশে কুকি-জোদের মধ্যে মেইতিসদেরও তফসিলি সম্প্রদায়ের মতো যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়।
কিন্তু কুকি-জোদের দাবি, মেইতিসরা তো সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা কেন বিশেষ সুবিধা পাবে।
সবচেয়ে বড় শঙ্কা ছিল, বিশেষ সুবিধা দেওয়া হলে কুকি-জো অধ্যুষিত অঞ্চলে মেইতিসরাও জায়গা কিনতে পারবে।
এই দ্বন্দ্ব থেকে শুরু হওয়া সংঘাত এখনও থামেনি। সংঘাতে সেখানে এখন পর্যন্ত ১৩০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। স্থানচ্যুত হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি।
সূত্র: আল-জাজিরা, স্ক্রলডটইন