মার্কিন সাংবাদিক কেন ইউক্রেনের কারাগারে বন্দি?: ইলন মাস্ক
একজন মার্কিন সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাকে দীর্ঘদিন থেকে ইউক্রেনে আটকে রাখা হয়েছে। ওই সাংবাদিকের নাম গঞ্জালো লিরা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইউক্রেনের সমালোচক। ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযানকে সমর্থন দিয়েছেন তিনি। খারকিভে এখন বিচারের অপেক্ষায় লিরা।
লিরার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মহাকাশ ভ্রমণ সংস্থা স্পেসএক্স-এর প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। সাবেক টুইটারে (বর্তমানে এক্স) একটি পোস্ট করেন মাস্ক। যেখানে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে লিরার বিষয়ে জানতে চান। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কিয়েভের পাশে থাকার পরও, যুক্তরাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিককে কীভাবে কিভেয়ে আটকে রাখা হয়!
লিরা একজন সাংবাদিক, ব্লগার, লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় তিনি বেশ কয়েকটি উপন্যাস লিখেছেন। এর মধ্যে স্পাই থ্রিলার অ্যাক্রোব্যাট অন্যতম। এছাড়া অনলাইনে তিনি কোচ রেড পিল নামে পরিচিত। পুরুষ দর্শকের কাছে লাইফস্টাইল বিষয়ে কনটেন্ট বানিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন লিরা।
২০১০ সালে তিনি ইউক্রেনে যান। সেখানে স্থানীয় এক নারীকে বিয়ে করে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কারকিভে বসবাস শুরু করেন। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে লিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধের খবরগুলো নিয়ে লাইভ করতেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলার চেষ্টা করেছেন যে, তিনি ইউক্রেনকে ও এর মানুষকে খুব ভালোবাসেন।
কিন্তু তাদের ওপর এই যুদ্ধের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এই যুদ্ধে উসকানি দেয়ার জন্য জেলেনস্কি সরকার এবং পশ্চিমাদের দায়ী করেন লিরা। ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা করেন লিরা। জেলেনস্কি সরকারের বিরোধী কয়েকজনের তালিকা তিনি ছেপেছিলেন যাদের ইউক্রেন সরকার তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে তাকে যখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে শিরোনাম করেছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, ইউক্রেন সরকারের সমালোচনা করায় তাকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে।
এর সপ্তাখানেক পর তিনি আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফিরে আসেন এবং দাবি করেন, এতদিন ইউক্রেনের গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা তাকে আটকে রেখেছিলেন। সে সময় সাংবাদিকরা জানান, কোন লিখিত অভিযোগ ছাড়াই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু কাগজে কলমে এমন কিছুই ঘটেনি। বরং তাকে খারকিভ ছেড়ে না যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে তাকে আবারও আটক করে ইউক্রেন সরকার। সে সময় তার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা হয় এবং তাকে মারধর করা হয় বলে দাবি করেন লিরা।
জূলাইতে আবার আটক হন গঞ্জালো। একটা মোটরবাইকে করে হাঙ্গেরির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার সময় তাকে আটক করা হয়। সে সময় ইউক্রেনের আইন প্রযোগকারী সংস্থা দাবি করে, লিরা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছে। তখন থেকেই ইউক্রেনের হেফাজতে আটক আছেন গঞ্জালো।
গঞ্জালো লিরাকে আটকের বিষয়ে বরাবরই চুপ থেকেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগস্টে লিরার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান। লিরার বিষয়ে কিছুই বলেননি ম্যাথু। তবে প্রতিটি মার্কিন নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের কাছে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পায় বলে দাবি করেন ম্যাথু।