মাহশা আমিনি হত্যার প্রতিবাদ, ইরানে আরও দু’জনের ফাঁসি কার্যকর
নিরাপত্তা হেফাজতে মাহশা আমিনির (২২) মৃত্যুর প্রতিবাদ-বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আধা সামরিক বাহিনী বাসিজের একজন সদস্যকে হত্যার অভিযোগে দু’ব্যক্তির মৃত্যুদ- কার্যকর করেছে ইরান। এ নিয়ে এ প্রতিবাদকে ঘিরে ইরানে কমপক্ষে চারজনের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হলো। শনিবার খুব ভোরে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে মোহাম্মদ মেহদি কারামি এবং মোহাম্মদ হোসেইনির। ইরানের সুপ্রিম কোর্ট তাদেরকে ‘করাপশন অন আর্থ’ অভিযোগে এই শাস্তি নিশ্চিত করে। এরপরই তাদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হলো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
ইরানের হাদিছ নাজাফিতে পুলিশি হেফাজতে থাকা কুর্দি যুবতী মাহশা আমিনি মারা যান। এরপরই শুরু হয় প্রতিবাদ বিক্ষোভ। মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর ৪০তম দিনে তেহরানের কাছে কারাজ শহরে বিশাল বিক্ষোভ হয় ৩রা নভেম্বর। সেই বিক্ষোভের সময় বাসিজ সদস্য রুহুল্লাহ আজামিয়ানকে হত্যা করা হয়। এর জন্য অভিযুক্ত করা হয় কারামি এবং হোসেইনিকে।
ওইদিনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, বিপুল জনতার ভিড়ের খুব কাছে বাসিজ বাহিনীর পোশাক পরা আজামিয়ান মাটিতে নিথর পড়ে আছেন।
বিচার বিভাগের তথ্যমতে, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬ জনকে। এক্ষেত্রে কারামি এবং হোসেইনিকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে দেখা হয়। বিচারকরা আদালতে শুনানির সময় ওইসব ভিডিও ক্লিপ দেখান। সেখানে কারামি স্বীকার করেন যে, তিনি একটি পাথর দিয়ে আজামিয়ানকে আঘাত করেছিলেন। অন্যদিকে আজামিয়ানকে কয়েকবার ছুরিকাঘাত করার কথা স্বীকার করেন হোসেইনি। এ ছাড়া বিচার বিভাগ থেকে ভিডিও ক্লিপ প্রচার করা হয়েছে। তাতে হামলার সময়কার ওই দু’ব্যক্তিকে দেখানো হয়েছে। এতে হোসেইনির একটি ছবি দেখানো হয়েছে, যেখানে তিনি বসে আছেন এবং তার দু’হাত পিছনে বাঁধা। তার সামনে রাখা কয়েক রকম ছুরি, যার মালিক তিনি বলে বলা হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে যে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে, তাতে শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে একটি অডিও ক্লিপ। এই অডিওটি ২২ বছর বয়সী কারিমির পিতার বলে বলা হচ্ছে। তিনি এতে তার ছেলেকে নির্দোষ দাবি করছেন। কিন্তু এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন বিচারকরা। তারা আজমিয়ানকে হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকারের ক্লিপও প্রকাশ করেছে। বিচার বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ঘটনার এক সপ্তাহ পরে এ মামলার প্রধান সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের কার্যক্রম শেষ করতে এক মাসের কম সময় লেগেছে। এই মামলায় অন্য তিনজনের আপিল গ্রহণ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে অন্য মামলায় অন্য বেশ কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছে আদালত। মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সতর্ক করেছে যে, কয়েক ডজন ইরানি মৃত্যুদণ্ডের ঝুঁকিতে আছেন।
মাহশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে ডিসেম্বরে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে দু’যুবক মোহসেন শেকারি (২৩) এবং মাজিদ রেজা রাহনাওয়ার্ড (২৩)কে। এর মধ্যে দ্বিতীয়জনের ফাঁসি মাশাদ শহরে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ক্রেন থেকে ঝুলিয়ে প্রকাশ্যে কার্যকর করা হয়। তাদেরকে ‘আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
ওদিকে ভিন্ন মতাবলম্বী সুন্নি সম্প্রদায়ের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা বিক্ষোভকারীদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায়ে শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন- নির্যাতন করে আটক বন্দিদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তিা আদায় করে অভিযুক্ত করা ইসলামসঙ্গত নয়। তিনি হলেন মৌলভী আবদুল হামিদ ইসমাইলজাহি। তার ওয়েবসাইট অনুযায়ী, শুক্রবার জুমার নামাজের বয়ানে তিনি বলেছেন, যদি কেউ অভিযোগ স্বীকার না করেন, তাহলে তারা (কর্তৃপক্ষ) তা স্বীকার করতে তাকে নির্যাতন করে। নির্যাতন করে অভিযোগ স্বীকার করিয়ে অভিযুক্ত করার কোনো স্থান ইসলামিক শরীয়াতে নেই এবং ইরানের সংবিধানেও নেই। মৌলভি ইমাইলজাহি’র অবস্থান দরিদ্র সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী জাহেদানে। এই প্রদেশটি ইরানের সংখ্যালঘু বেলুচদের। তার বিদেশ সফর নিষিদ্ধ করে এবং চলাচজল সীমাবদ্ধ করার মাধ্যমে তার ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোও বলছে, ইরানে ভিন্ন মতাবলম্বীদের জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিা আদায় করা হচ্ছে। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইরান। ওদিকে দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। কর্তৃপক্ষও তাদের বিরুদ্ধে দমন পীড়ন অব্যাহত রেখেছে। চলছে গ্রেপ্তার। এর মধ্যে একজন সেলিব্রেটি শেফ এবং প্রথম সারির একজন সাংবাদিক আছেন।