মেয়েটি অনেকের সহযোগিতা চাইলেও কেউ এগিয়ে যায় নি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্যাতিতা মেয়েটি ক্যাম্পাস থেকে বান্ধবীর বাসা শেওড়ায় যাচ্ছিলেন। সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রোববার বিকেলে চড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই বাসে। তবে ভুলবশত শেওড়ার বদলে নেমে পড়েন বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের কাছে।
এরপরই এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি অকস্মাৎ তার মুখ চেপে ধরে হাসপাতালের অদূরে গলফ ক্লাব সীমানার শেষ প্রান্তে ঝোপের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে ধর্ষণের মতো ভয়ংকর ঘটনার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী সেই শিক্ষার্থী।
প্রায় দুই ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরলে সেই রাতেই সাড়ে ৯টার দিকে নিজেই সাহস ও দৃঢ়তা নিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় বান্ধবীর বাসায় যান ধর্ষণের শিকার সেই ছাত্রী। বিমানবন্দর সড়কের মতো ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সংঘটিত এমন ঘটনার পর এরই মধ্যে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন তার স্বজনরা। এ ছাড়া চিকিৎসক, শিক্ষক, পুলিশের কাছে ভীতিকর ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। সোয়া ৭টার দিকে বাস থেকে কুর্মিটোলায় নামার পর আলো-আঁধারি পরিবেশে কেউ একজন পাশ থেকে তার মুখ চেপে ধরে। ওই লোকটির পরনে ছিল নোংরা জিন্স প্যান্ট ও শার্ট। এরপর তাকে জোর করে পাশের জঙ্গলে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তার গলা টিপে ধরে ওই লোকটি। এতে প্রায় অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে জ্ঞান ফেরার পর তিনি দেখেন, জঙ্গলে পড়ে রয়েছেন। তার পাশে তখনও ওই ব্যক্তিকে দেখতে পান তিনি। ধর্ষক ওই ব্যক্তি তার কাছে নাম, পরিচয় ও কোথায় পড়াশোনা করছে- এসব জানতে চায়। একপর্যায়ে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর ব্যাগ খুলে লোকটি টাকা-পয়সা ও জিনিসপত্র দেখতে থাকে। এই সুযোগে পালিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন ওই ছাত্রী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম জানান, ঘটনাটি জানার পরপরই ছোট্ট ওই মেয়েটিকে দেখতে ছুটে যাই। তাকে মানসিকভাবে শক্তি ও সাহস জোগানোর চেষ্টা করি। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তার পাশে রয়েছে। তবে ওই খারাপ লোকটি দ্রুত গ্রেপ্তার হোক- এটা দেখতে চাই। রাষ্ট্রকে তার দায়িত্ব নিতে হবে। নির্ভয়ে চলার নিশ্চয়তা সবাই চায়।
সাদেকা হালিম বলেন, ছোট্ট একটি মেয়েকে কী ভয়ঙ্কর ঘটনার শিকার হতে হলো। তার কাছ থেকে বর্ণনা শুনে মনে হয়েছে ওই ধর্ষক এ ধরনের কাজ আগেও করেছে। ঠাণ্ডা মাথায় ধর্ষণ করা হয়েছে। চেতনা ফিরে পাওয়ার পর মেয়েটি অনেকের সহযোগিতা চাইলেও কেউ এগিয়ে যায় নি। ছোট্ট এই মেয়েটি এ ধরনের ভয়ংকর পরিস্থিতি একাই মোকাবিলা করে আবার সিএনজি অটোরিকশায় বান্ধবীর বাসায় গিয়েছে- এটা তার অসম্ভব মানসিক দৃঢ়তার পরিচায়ক।
সাদেকা হালিম আরও জানান, ওই ছাত্রী অত্যন্ত মেধাবী। পরীক্ষায় রেজাল্টের দিক থেকে নিজ বিভাগে শীর্ষ চারে রয়েছে সে। সামনে তার পরীক্ষা। গ্রুপ স্টাডির জন্য বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিল সে। সে ভালো আবৃত্তিকারও।