Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
June 15, 2025
হেডলাইন
Homeমতামতযুদ্ধজয় আর মানবতার পরাজয়

যুদ্ধজয় আর মানবতার পরাজয়

যুদ্ধজয় আর মানবতার পরাজয়


শাহ্‌ জে. চৌধুরী


ভূমিকা

যুদ্ধ কখনোই কেবল সীমান্তের গোলাগুলি নয়; এটি রাজনীতি, ক্ষমতা আর জাতীয়তাবাদের মুখোশে লুকিয়ে থাকা মানবিক বিপর্যয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দশকের দ্বন্দ্ব ও তিনটি বড় যুদ্ধ আমাদের এমন এক ইতিহাসের দিকে নিয়ে যায়, যেখানে ‘জয়’ মানে শুধু পতাকা উড়ানো নয়, বরং হাজারো লাশের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বিজয় মঞ্চ।

ইতিহাসের ছায়া

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সালে, দেশভাগের পরপরই। এরপর ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালে আবার সংঘর্ষ হয়। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধ ছিল সীমিত সময়ের হলেও, তার কূটনৈতিক ও সামরিক প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। প্রতিটি যুদ্ধেই মারা গিয়েছে হাজার হাজার সৈনিক, ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য পরিবার, এবং রাজনৈতিক শক্তিগুলো দাবি করেছে ‘জাতীয় গৌরব’।

লাভ

যারা যুদ্ধ চায়। যুদ্ধের সরাসরি লাভ যারা পায়, তারা বেশিরভাগ সময় মাঠে থাকে না।
• রাজনৈতিক শক্তি: যুদ্ধের উত্তেজনা ব্যবহার করে তারা জনমত নিজেদের পক্ষে ঘুরিয়ে নেয়। জাতীয়তাবাদের ঢেউ তুলে সমালোচনার মুখে তালা লাগিয়ে দেওয়া যায়।
• অস্ত্র নির্মাতা ও আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকরা: যুদ্ধ মানেই নতুন চুক্তি, নতুন বিক্রি। কোটি কোটি ডলারের অস্ত্রের বাণিজ্য গতি পায়।
• মিডিয়া: সেনাবাহিনীর গর্বগাথা, শত্রু রাষ্ট্রের নিন্দা—এসবই বাড়িয়ে তোলে ভিউ, ট্রাফিক, রেটিং।

লোকসান

যারা যুদ্ধের শিকার। যুদ্ধের আসল খরচটা দেয় সাধারণ মানুষ।
• সৈনিক ও তাদের পরিবার: যারা প্রাণ দেয়, তাদের মুখে দেশের জন্য গর্ব থাকলেও—পেছনে থেকে যায় অসংখ্য ভাঙা পরিবার, শোকগ্রস্ত মা, বিধবা স্ত্রী ও পিতৃহীন সন্তান।
• সীমান্ত এলাকার সাধারণ মানুষ: যুদ্ধ মানে তাদের জন্য বাস্তুচ্যুতি, অর্থনৈতিক ধ্বংস, এবং চিরস্থায়ী অনিশ্চয়তা।
• মানবিক সম্পর্ক: ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস—সব মিলিয়ে অনেক সম্পর্ক ছিল একসময় দুই দেশের মানুষের মাঝে। যুদ্ধ সেই সম্পর্কগুলিকে শত্রুতায় রূপ দেয়।

লাশের হিসাব কি শুধু সংখ্যা?

১৯৭১ সালের যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের ৯০ হাজার সৈন্য আত্মসমর্পণ করে। ভারত-পাকিস্তান উভয় পক্ষেই প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এই লাশগুলো কি শুধু সংখ্যা? প্রতিটি লাশের পেছনে থাকে একেকটি গল্প—স্বপ্ন, সম্পর্ক, ভবিষ্যৎ।

যুদ্ধ শেষ হয় একদিন, কিন্তু লাশের শোক দীর্ঘস্থায়ী হয়। বেঁচে থাকা মানুষগুলো প্রতিদিন যুদ্ধের ভার বহন করে চলে।

উপসংহার

আজও যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ে, কেউ কেউ যুদ্ধকে উৎসবের মতো দেখাতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো—যুদ্ধে কারও প্রকৃত বিজয় নেই, আছে কেবল পুড়ে যাওয়া ভবিষ্যৎ। যুদ্ধ যদি কিছু শেখায়, তা হলো—লাশের ওপর দাঁড়ানো কোনো ‘জয়’ আসলে পরাজয়েরই আরেক নাম।

প্রশ্ন থেকে যায়—আমরা কি সেই সত্য স্বীকারে প্রস্তুত?

ভালো থাকবেন, ভালোবাসবেন।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment