Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
March 28, 2024
Homeবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিশনির হারানো চাঁদ ও বলয় রহস্য

শনির হারানো চাঁদ ও বলয় রহস্য

শনির হারানো চাঁদ ও বলয় রহস্য

সৌরজগতের সংসারে একটু আলাদা মর্যাদা চাই তার। গলায় মস্ত এক হার পরে ঘুরে বেড়ায়। এ কারণেই কি শনিকে ঘিরে চক্কর খাচ্ছে ৮৩টি উপগ্রহ? বিজ্ঞানীরা বলছেন, সংখ্যাটা ৮৪ ছিল। কোনো একজনের আত্মত্যাগের কারণেই শনি পেয়েছে তার বরমাল্য।

একটা উপগ্রহ একটু বেশিই কাছে আসতে চেয়েছিল শনির। কিন্তু চাইলেই কি কাছে আসা যায়? মহাবিশ্ব-সংসারের নিয়ম মেনে পুড়ে অঙ্গার হলো সেই উপগ্রহ। জন্ম হলো শনির বলয়ের।

এমআইটির বিজ্ঞানীরা ওই হারানো চাঁদটাকে ডাকছেন ক্রাইসালিস নামে। প্রজাপতি ডানা মেলার ঠিক আগমুহূর্তে যে খোলসাবৃত দশায় থাকে, ওটারই আরেক নাম ক্রাইসালিস। আপাতত গবেষকরা তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করে ছেড়েছেন— শনির কাছে এসে পড়ায় ধ্বংস হয়ে যায় ক্রাইসালিস, যার বেশিরভাগ টুকরো গ্রহে আছড়ে পড়লেও কিছু ভাসতে থাকে কক্ষপথে। পরে সেগুলোই ক্রিস্টাল হয়ে তৈরি করে চকচকে সাত স্তরের বলয়।

‘ঠিক প্রজাপতির খোলসের মতোই শনির ওই উপগ্রহ অনেক দিন চুপচাপই ছিল। পরে একসময় হুট করে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং রিংটা তৈরি হতে থাকে।’ জানালেন গবেষণা দলের প্রধান এমআইটির প্ল্যানেটারি সায়েন্সেস-এর প্রফেসর জ্যাক উইসডম।

উইসডম ও তার দলের মতে, ক্রাইসালিসের ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয় ১৬ কোটি বছর আগে। অর্থাৎ, ডায়নোসরের কাছে যদি টেলিস্কোপ থাকতো, তবে তারা একটি বলয়হীন শনির দেখা পেত।

বলয় দেখে এত কিছু ধারণা করা যায়নি। মূলত ধারণাটা জেঁকে বসে শনির হেলে থাকার অসামঞ্জস্যতা থেকে। নিজের অক্ষে সাড়ে ২৭ ডিগ্রিরও বেশি হেলে আছে শনি। গ্যাস জায়ান্ট হিসেবে শনির এতটা ‘টিল্ট’ থাকার কথা ছিল না মোটেও।

২০০০ সালের পর পর গবেষকদের ধারণা ছিল, নেপচুনের টানেই শনি এমন করে হেলে আছে। কিন্তু ২০০৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত শনিকে নিয়ে গবেষণা করা নাসার ক্যাসিনি স্পেসক্রাফট দেখতে পেল, শনি থেকে বছরে ১১ সেন্টিমিটার করে সরে যাচ্ছে এর নামজাদা উপগ্রহ টাইটান। টাইটানের দ্রুত পলায়নের কারণেই শনি হেলে পড়েছে, এ ধারণা তখন পেয়ে গেল দারুণ সমর্থন। তবে টিকল না সেটাও।

উইসডম ও তার সহকর্মীরা ক্যাসিনির সাহায্যে মাপলেন শনির জড়তার ভ্রামক (মোমেন্ট অব ইনারশিয়া), যা থেকে বোঝা যায় যে শনিকে ঘোরাতে কী পরিমাণ বলের প্রয়োজন। গবেষকরা মেপে দেখলেন—শনির নিজ অক্ষে ঘূর্ণনটা যদি নেপচুনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলত, তবে মোমেন্ট অব ইনারশিয়ার মান যতটা হতো, এখনকার মান তার কাছাকাছি গেলেও একেবারে এক নয়। মানে, কোনো এক সময় এমন একটা কিছু ঘটেছে, যার জন্য শনি একটা পর্যায়ে নেপচুনের বলয় থেকে বের হতে পেরেছিল। আর মহাবিশ্বের সেই ‘একটা কিছু’ মানে কিন্তু উপগ্রহ ধ্বংসের মতোই বিরাট ঘটনা।

সুপার কম্পিউটারের সিমুলেশনেও নানান সম্ভাব্যতার মধ্যে বেশ কয়েকবার দেখা গেল ক্রাইসালিস ধ্বংস হয়েই তৈরি হচ্ছে শনির বলয়। পরে শনির কাছাকাছি থাকা উপগ্রহগুলোর অনিয়মিত মাধ্যাকর্ষণের টানাহেঁচড়ায় ওই বলয়ের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিশাল বিশাল গ্যাপ।

সব শেষে গবেষকরা এ রায় দিলেন যে, শনির আজকের হেলে থাকার নেপথ্যে রয়েছে নেপচুনের সঙ্গে রিজোনেন্স (মাধ্যাকর্ষণজনিত তাল মেলানোর প্রক্রিয়া) ও ক্রাইসালিসের হারিয়ে যাওয়া। যে ক্রাইসালিসের আকার ছিল লাপেটাস নামের শনির তৃতীয় বৃহত্তম চাঁদের সমান।

মোটকথা, ক্রাইসালিস না থাকলে শনি এতটা হেলে থাকতো না, আবার তৈরি হতো না বলয়ও।

পেছনে আরেকটা শক্ত যুক্তি হলো, শনির বলয়ের বয়স। যা ১৫-১৬ কোটি বছর বলেই নিশ্চিত গবেষকরা। মহাজগতের ক্যালেন্ডারে যা অতি তুচ্ছ একটি সময়। ক্রাইসালিসের উবে যাওয়ার মতো সুবিশাল ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া এত অল্প সময় আগে এমন চমৎকার বলয় তৈরি হওয়ার আর কোনো সহজপাচ্য ব্যাখ্যাও আপাতত নেই গবেষকদের হাতে।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment