Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
February 15, 2025
হেডলাইন
Homeআন্তর্জাতিকশান্তিতে নোবেল জয়ীর চরিত্র নিয়ে মানুষের প্রশ্ন, হতাশ পশ্চিমারা

শান্তিতে নোবেল জয়ীর চরিত্র নিয়ে মানুষের প্রশ্ন, হতাশ পশ্চিমারা

শান্তিতে নোবেল জয়ীর চরিত্র নিয়ে মানুষের প্রশ্ন, হতাশ পশ্চিমারা

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের ধারণা অনুসারে অং সান সু চি-র মতোই খুব কম লোকই এত ওপরের দিকে ওঠেছিল। ২০১৩ সালে সু চি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হওয়ার পর গৃহবন্দি থেকে মুক্তি পান এবং মিয়ানমারে সামরিক সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার চাপ কমে আসে। তখন তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে “একটি দেশের বিবেক এবং মানবতার নায়িকা” হিসাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন।

বিশেষত যখন কোন ব্যক্তি সাধু হিসাবে বিবেচিত হয় খুব কম লোকই তাদের প্রকাশ্য চিত্রের মতো নিখুঁত হন। পশ্চিমারা অং সান সু চিকে সাধুতে পরিণত করেছিল। কিন্ত তিনি সর্বদাই তাদের হতাশ করেছেন।

শান্তিতে নোবেল পাওয়া বাক্তির চরিত্রে এবং বিশ্বাসের মধ্যে যে শান্তি বিরাজমান থাকে তা নিয়ে পৃথিবীর মানুষের মনে এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে। আর এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করার পেছনে যে মানুষটির নাম এখন সবার মনে আসছে তিনি হলেন মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি।

তার মুক্তির দু’বছর পর ২০১৫ সালে কয়েক দশক বন্ধ থাকা মিয়ানমারের প্রথম অবাধ নির্বাচনে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) জয় উদযাপন করেছিলেন। ওই মুহূর্তটি ইতিহাসে তাকে এশিয়ার নেলসন ম্যান্ডেলা হিসাবে স্থান করে দেয়। তবে মিয়ানমারের স্বাধীনতার পর সামরিক বাহিনীর শাসনকালে দেশটি যে জাতিগত কলহ দেখা দেয় ২০১৫ সালের নির্বাচন পর হয়নি তার কোন পরিবর্তেতন।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। জাতিসংঘের অভিযোগ, ‘গণহত্যার উদ্দেশ্য’ নিয়ে এই অভিযান চালানো হয়েছিল।

মিয়ানমারের  উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা বন্ধের নির্দেশ দিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রতি আহ্বান জানায় গাম্বিয়া। গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে এই সপ্তাহে, “মানবতার নায়িকা” হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে তার দেশকে রক্ষার জন্য হাজির হয়েছিলেন।  আর সেই অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলার দ্বিতীয় দিনের শুরু হওয়া শুনানিতে মিয়ানমারে গণহত্যার অভিযোগ রিতিমত অস্বীকার করেছেন সু চি। তিনি তীব্রভাবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের হামলার জবাবেই তারা অভিযান চালিয়েছিল বলে সেনাবাহিনীর হয়ে সাফাই গান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে করা মামলাটি ‘অসম্পূর্ণ’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’।

এর প্রতিবাদে খুদ্ধ রোহিঙ্গারা সু চি কে  শান্তির নয়, গণহত্যার প্রতীক বলে আখ্যা। আর্ন্তজাতিক আদালতে সু চির উপস্থিতি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং একই সময় সু চিকে গণহত্যার প্রতীক আখ্যা দিয়ে এক সময়কার গণতন্ত্রপন্থী ওই নেত্রীর প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছেন তারা।

মোহাম্মদ জুবায়ের। ১৯ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা বলেন, আমরা ধর্ষণ, নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড দেখেছি। আমাদের চোখের সামনে অনেকে খুন হয়েছে। আমাদের সামনে পালানো ছাড়া কোনও পথ ছিল না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার আগে সু চিই বলেছিলেন সেনাবাহিনী ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। আর এখন তিনি নিজেই সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করছেন। কী লজ্জার!

নুর আলম (৬৫) নামের এক রোহিঙ্গা জানান, ২০১৭ সালের ওই অভিযানে ছেলেকে হারিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এক সময় অং সান সু চি শান্তির প্রতীক ছিলেন। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা ছিল যে, তিনি ক্ষমতায় আসলে অনেক পরিবর্তন আসবে। আমরা তার জন্য প্রার্থনা করেছি। আর এখন তিনি গণহত্যার প্রতীক। আমাদের রক্ষা না করে তিনি খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তিনি তাদের হয়ে লড়াই করবেন। আমরা তাকে ঘৃণা করি। তার লজ্জা হওয়া উচিত।’ নুর আলম বলেন, আমি অনেকদিন ধরেই এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। তাদের শাস্তি দেখতে পারলে আমার জীবনে আর কোনও অপ্রাপ্তি থাকবে না।
৩৫ বছর বয়সী রশিদ আহমেদ জানান, তার পরিবারের ১২ সদস্যকে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ন্যায়বিচারই আমাদের ক্ষত শুকাতে পারে। আমি জানি, যাদের হারিয়েছি তাদের কখনোই ফিরে পাবো না। কিন্তু খুনির সাজা পেলে তারা শান্তিতে থাকবে।

মমতাজ বেগম নামে এক রোহিঙ্গা জানান, তার স্বামীকে সেনা সদস্যরা হত্যা করেছেন। ৩১ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে। আমার বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। ছয় বছর বয়সী মেয়ের মাথায় ছুরিকাঘাত করে। আমি শুনলাম অং সান সু চি ও সেনাবাহিনীর বিচার হবে। আমাদের দাবি, সু চি ও সেনাবাহিনীর বিচার হোক। তারা কেন নিরপরাধ মানুষগুলোকে মারলো, আমাদের শিশুদের হত্যা করলো। তারা কেন আমাদের মেয়েদের ধর্ষণ ও নিপীড়ন করলো? আমরা বিচার চাই।

২৯ বছর বয়সী জামালিদা বেগম জানান, তাকে ২০১৬ সালে ধর্ষণ করা হয়েছিল। তার স্বামীকেও হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী আমাদের গ্রামে এসে আমার স্বামীকে হত্যা করে ও বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তিনজন সেনাসদস্য আমাকে টেনে নিয়ে যায় এবং বন্দুক ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে। একটা সময় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমি অং সান সু চি ও সেনাবাহিনীর বিচার চাই।

জামালিদা বলেন, আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাই। পরে আমার পোস্টার টাঙিয়ে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমাকে খুঁজতে থাকে সেনাবাহিনী। আমি শুধু বিচার চাই। আমি চাই যারা ধর্ষণ করেছে, হত্যা করেছে, বাড়িতে আগুন দিয়েছে, শিশুদের আগুনে নিক্ষেপ করেছে তাদের শাস্তি হোক।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment