শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় না দেওয়ার পক্ষে রূপা হক
বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহের ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারত যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই বিভিন্ন দেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, তিনি যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছিলেন। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
তবে শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জনের মধ্যেই দেশটির ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এমপি রূপা হক বলেছেন, তার সরকারের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সমীচীন হবে না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্যান্ডার্ডে এক নিবন্ধে যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় না দেওয়ার পক্ষে তার মত তুলে ধরেন তিনি।
লেবার পার্টির এমপি রূপা হকের লেখাটি ‘আমার সরকার স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দেবে না’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার দ্য স্ট্যাডার্ড প্রকাশ করেছে।
তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ কতটা ‘বিশৃঙ্খল’ ছিল তা নিয়ে গেয়েছিলেন জর্জ হ্যারিসন। গত সপ্তাহে তিনি আবার সঠিক প্রমাণিত হলেন। সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতাচ্যুতির মত ঘটনার প্রতিফলন দেখা গেল, জাতির পিতার ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো, কুশপুতুল পোড়ানো হলো, যা ঢাকা থেকে টাওয়ার হ্যামলেট (যুক্তরাজ্যের একটি পৌরসভা) পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
চীনের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের সঙ্গে হাসিনার পতনকে তুলনা করে রুপা বলেছেন, শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বাংলাদেশকে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে শাসন করেছেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। ক্রমে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
তিনি লিখেছেন, আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল যাতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত করা যায়। কীভাবে গুলি করে শত শত মানুষকে মেরে ফেলেছে হাসিনা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক পর্যায়ে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।
রুপা হক লিখেন, হাসিনার পতনের পর যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশিরা পূর্ব লন্ডনের রাস্তায় নেমে এসেছিল। তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পাওয়া একজন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাচ্যুতিতে উল্লাস করছিল। একজন বৃটিশ বাংলাদেশী এমপি হিসেবে বাংলাদেশের এই ইস্যুতে অনলাইনে অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানান রুপা।
তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তার মতো একজন অ-জনপ্রিয় এবং অভিবাসন নিয়ে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে এমন একজন হাই প্রোফাইল আশ্রয়প্রার্থীকে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দেয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এছাড়া অনেক বাংলাদেশি মনে করেন, তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এদিকে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে উত্তরণে দেশটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে এবং নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এরইমধ্যে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
তবে হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরোধীদেরকে ‘ইসলামিস্ট’ লেবেল দিয়ে কয়েকটি ভিডিওর সমালোচনা করেছেন রুপা। জয় উল্লেখ করেন, তার মা দেশে ফিরে আসবেন।
এ বিষয়ে রুপা হক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক দুই পরিবারের মধ্যে পুরনো শত্রুতার পরিবর্তে যখন প্রকৃত অবাধ নির্বাচন হবে তখনই গণতন্ত্র ফিরবে দেশটিতে। এখনই এর উপযুক্ত সময়।