স্বর্ণে বিনিয়োগ বেড়েছে ভারতের অতিধনীদের
সোনায় বিনিয়োগ বেড়েছে ভারতে। মুনাফাও মিলছে বেশি। সারা বিশ্বের অতিধনীদের মধ্যে সোনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের অবস্থান দ্বিতীয়। বেশি পরিমাণ লাভের আশায় ভারতের অতিধনীরা সোনা কেনায় বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। ২০১৮ সালে যেখানে সে দেশের অতিধনীরা তাঁদের নিট সম্পদের ৪ শতাংশ বিনিয়োগ করতেন সোনায়, সেখানে ২০২২ সালে করেছেন ৬ শতাংশ। রিয়েল এস্টেট কনসালটেন্সি বা আবাসন খাতবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নাইট ফ্রাঙ্কের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। আজ শুক্রবার এই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়।
নাইট ফ্রাঙ্কের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অতিধনীদের মধ্যে ভারতীয়দের অবস্থান সোনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ স্থানটি রয়েছে অস্ট্রিয়ার অতিধনীদের দখলে। তাঁরা নিট সম্পদের সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ বিনিয়োগ করেন সোনা মজুতে। ভারতের মতো চীনও রয়েছে ঠিক অস্ট্রিয়ার পেছনে। চীনা অতিধনীরা নিজেদের নিট সম্পদের ৬ শতাংশ দিয়ে সোনা কিনে রাখেন। তবে ব্যতিক্রমও দেখা গেছে। উন্নত ও পশ্চিমা কিছু দেশের অতিধনীরা সোনা কেনাকে সেভাবে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলোর অতিধনীরা ২০২২ সালে তাঁদের সম্পদের মাত্র ১ শতাংশ করে সোনা কেনার জন্য বিনিয়োগ করেন। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় এই হার ২ শতাংশ করে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নাইট ফ্রাঙ্কের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরে সোনা কিনে রাখলে বেশি লাভ হচ্ছে। সে জন্য অতিধনীরা দিন দিন সোনা কিনতে বেশি বিনিয়োগ করছেন। যেমন ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সোনার দাম ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ভারতের মুম্বাইতে ১০ গ্রাম সোনার দাম ২০১৮ সালে ছিল ২৯ হাজার ৩০৪ রুপি। সেই দাম চলতি ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে ৫২ হাজার ৭৬০ রুপি। করোনা মহামারি, নিম্ন সুদের হার ও বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ‘সহজ তারল্য কৌশল’ গ্রহণ প্রভৃতি কারণে সোনার দাম ব্যাপক বেড়েছে।
নাইট ফ্রাঙ্ক ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিশির বৈজাল বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তারা স্থিতিশীলতা প্রদান করে ও মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে মূল্যসংযোজন ঘটে, এমন সম্পদগুলোয়মূলধন বিনিয়োগে আগ্রহী হন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের তৈরি চলতি ২০২৩ সালের বৈশ্বিক অতিধনী তথা শতকোটিপতিদের (বিলিয়নিয়ার) তালিকায় দেশ বিবেচনায় তৃতীয় অবস্থান পেয়েছে ভারত। এই দেশের ১৬৯ জন শতকোটিপতি ঠাঁই পেয়েছেন ফোর্বসের তালিকায়, যাঁদের সম্পদের সমন্বিত পরিমাণ ৬৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। গত বছরের তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন ১৬৬ জন। তাঁদের মোট সম্পদের মূল্য ছিল ৭৫ হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরে ভারতীয় শতকোটিপতিদের সামগ্রিক সম্পদমূল্য ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বা ১০ শতাংশ কমেছে।
মূলত গৌতম আদানির সম্পদমূল্য কমার কারণে সার্বিকভাবে ভারতীয় ধনকুবেরদের সম্পদমূল্য বেশি কমেছে। ২৪ জানুয়ারি হিনডেনবার্গ রিসার্চের একটি প্রতিবেদনে গৌতম আদানির কোম্পানি আদানি গ্রুপের কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম বাড়ানোর তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর তাদের ব্যবসা ও শেয়ারের দরে ধস নামে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর গৌতম আদানির সম্পদমূল্য অর্ধেকের বেশি কমেছে। এর আগে ফোর্বসের রিয়েলটাইম তালিকায় তিনি একবার দ্বিতীয় ও আরেকবার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছিলেন। সেই সুবাদে তিনি ভারত ও এশিয়ার শীর্ষ ধনী হন।
সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ও ফোর্বস