১২ দিনে ৫ সেন্টিমিটার ধসে গেছে জোশী মঠ
ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশের জোশীমঠ শহরের একটা বড় অংশ সম্পূর্ণভাবে ধসে যেতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো। কার্টোস্যাট স্যাটেলােইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছে যে মাত্র ১২ দিনের মধ্যে হিমালয়ের ওই ছোট শহরটি পাঁচ সেন্টিমিটারেরও বেশি ধসে গেছে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ওই শহরটি নয় সেন্টিমিটার ডেবে গেছে বলেও জানিয়েছে ইসরোর অধীন ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার। ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে দ্রুত ধসে যাচ্ছে গোটা জোশীমঠ শহর আর তার আশপাশের এলাকা। খবর বিবিসির।
সেনাছাউনিতেও ফাটল, সরানো হচ্ছে বাহিনী
জোশীমঠের কাছেই রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটা বড় ছাউনি। চীন ও ভারতের মধ্যে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) আছে, সেখানে নজরদারি চালান এই ছাউনিতে থাকা সেনাসদস্যরাই।
সেনা ছাউনির ২৫ থেকে ২৮টি ভবনেও ফাটল ধরেছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ছাউনি থেকে সেনা সদস্যদের একটা অংশকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাহিনীর কতজনকে সরানো হয়েছে, তা জানাননি তিনি।
সংবাদ সংস্থা এএনআই মনোজ পাণ্ডেকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে প্রয়োজন হলে ওই ছাউনি থেকে সব সেনা সদস্যকেই আউলিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
‘মেরামতের আর কোনো সুযোগ নেই’
এতদিন মনে করা হচ্ছিল যে ফাটল ধরে যাওয়া বাড়িগুলি ভেঙে ফেললেই বোধহয় সমস্যার সমাধান হবে, কিন্তু ইসরোর সর্বশেষ বিশ্লেষণ দেখে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে আদৌ শহরটিকে রক্ষা করা কি সম্ভব হবে?
পরিবেশবিদ বিমলেন্দু ঝা বৃহস্পতিবার একের পর এক টুইট করে সেই আশঙ্কাই প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, মেরামতের কোনো সুযোগই আর নেই, কোনো রিভার্স গিয়ার দেয়াও সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে প্রকৌশলীদের ওপরেই সব দোষ চাপিয়ে তিনি লেখেন, প্রকৌশলীরা না বোঝেন ভূবিজ্ঞান, না জানেন ভূগোল। কোন মাটি খোঁড়া যেতে পারে, সেটাও তারা জানেন না কারণ তাদের পাঠ্যক্রমে এগুলো শেখানোই হয় না।
হোটেল ভাঙার কাজ শুরু হলো আজ
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে জোশী মঠের দুটি হোটেল ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। ওই দুটি হোটেল হেলে গিয়ে বিপজ্জনকভাবে একে অপরের খুব কাছে চলে এসেছে।
একটি হোটেলের মালিক ঠাকুর সিং রাণা বিবিসিকে বলেন, ২০১১ সালে হোটেলটা বানাতে আমার খরচ হয়েছিল সাত কোটি টাকা। মূল্যবৃদ্ধির পরে এখন কত দাম হতে পারে ভেবে দেখুন। আমি আরও অন্তত দশ বছর কাজ করতে পারতাম। সরকারের তো উচিত এইসব ভেবে আমাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া।
শহরের যে প্রায় ৭০০টি বাড়িতে ইতোমধ্যেই বড় বড় ফাটল দেখা গেছে, সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার কাজও চলছে বলে শুক্রবার মন্ত্রীসভার এক বৈঠকের পরে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। এখনো পর্যন্ত ৯৯টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান ধামি।
এরকমই একজন দুর্গা প্রসাদ সাকলানি। তিনি বলেন, কেউ ফোন করে খোঁজখবর নিলেই বিরক্তি লাগছে। আত্মীয়স্বজনরা ফোন করছে, কেমন আছি আমরা জিজ্ঞাসা করছে। কথা বলতেই ইচ্ছা করছে না আমার। সবাইকে বলছি আজ রাতটা যদি বেঁচে থাকি আগামীকাল জানাবো কেমন আছি।