২০১৯-এর শীর্ষ দশ ঘটনা
আজকের শীর্ষ দশে ২০১৯ সালে ঘটে যাওয়া বিশ্বের ঘটনাগুলোর কথা বলতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে সেগুলো নির্ণয় করা সত্যিই খুব কঠিন। ওয়াশিংটনের বিশৃঙ্খলা থেকে উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ সম্মেলন, অথবা মধ্য প্রাচ্যে জুড়ে বিক্ষোভ পর্যন্ত সকল খবরই আসলে গুরুত্ব বহন করে। তবুও আমরা বাংলা চ্যানেলের পক্ষ থেকে গেল বছরে বিশ্বের সেরা ১০ আলোচিত ঘটনাগুলো দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করেছি আজকের এ আয়োজন।
১. চাঁদের অদেখা অংশে চীনের অভিযান
প্রচুর অর্থ ব্যয় করে প্রথম নভোচারী পাঠানোর মাত্র ১৫ বছরের মধ্যেই এ বছর চাঁদের দুরবর্তী অংশে প্রথম কোনও দেশ হিসেবে সফলভাবে মহাকাশযান পাঠিয়েছে চীন । বছরের শুরুতেই চীন চাঁদের দূরতম অংশে সফলভাবে ল্যান্ড করিয়েছে নিজেদের একটি স্পেসক্রাফট। এখানেই শেষ নয়। আসন্ন দশকে নতুন একটি মহাকাশ স্টেশন স্থাপন করার কথাও ভাবছে চীন। একই সঙ্গে চাঁদে একটি বেস ক্যাম্প স্থাপন এবং মঙ্গলে অভিযান চালানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছে দেশটি। প্রথমত, দেশটির সেনাবাহিনী এটি চেয়েছিল। কারণ এই কর্মসূচীতে যত অর্থ খরচ হয়েছে, তাদের আগ্রহ ছাড়া তার অর্ধেকও পাওয়া সম্ভব হতো না।
মহাকাশ গবেষণায় এতো অর্থ, সময় ও মনোযোগ খরচ করবার ব্যাখ্যা দিতে যুক্তরাজ্যের রয়্যাল অ্যারোনোটিকেল সোসাইটির ফেলো অধ্যাপক কেইথ হেওয়ার্ড বলেছেন, প্রথমত, দেশটির সেনাবাহিনী এটি চেয়েছিল। কারণ এই কর্মসূচীতে যত অর্থ খরচ হয়েছে, তাদের আগ্রহ ছাড়া তার অর্ধেকও পাওয়া সম্ভব হতো না। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতা ও সামর্থ্য প্রকাশের জন্য এটি একটি দারুণ উপায়। তৃতীয়ত, সন্ধান মেলেনি এমন অমূল্য বস্তু বা এনার্জি বা জ্বালানীর সন্ধান। মূলত এই তিন কারণেই মহাকাশ গবেষণায় এতো অর্থ, সময় ও মনোযোগ খরচ করছে চীন।
২. দক্ষিণ আফ্রিকার খরা
এ বছর আফ্রিকার খরা ছিল বিশ্বের অন্যতম আলোচিত। গেল ৩০ আফ্রিকায় এরকম খরা হয়নি৷ মাসের পর মাস বৃষ্টি নেই৷ জাতিসংঘ বলেছে, এক কোটি মানুষের জন্য অবিলম্বে খাদ্য চাহিদার আবেদন জানিয়েছে। তারা আরও জানায় ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করে৷ আফ্রিকার অন্যান্য অঞ্চলেও পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে৷ কোনও বৃষ্টি হয় নি৷ পানি নেই, মাঠে ঘাস নেই৷ মারা পড়ছিল জন্তু-জানোয়ার৷ নদী পুরোপুরি শুকিয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা নদীবক্ষে গর্ত খুঁড়ে চুঁইয়ে ওঠা পানি সংগ্রহ করছেন৷
এবারকার খরা যেন ১৯৮৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল। সেবার ইথিওপিয়ায় দশ লাখ মানুষ প্রাণ। এ বছরের খরা ৪৫ মিলিয়ন মানুষের জীবন হুমকিতে ফেলে দিয়েছিল।
৩. ইয়েমেন যুদ্ধ বিপর্যয় অবসানের চেষ্টা
ইয়েমেন যুদ্ধের বিপর্যয় অবসানে এ বছর সউদী আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মধ্যস্থতায় ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার ও দক্ষিণের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে একটি সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছে।
২০১৪ সালে রাজধানী সানা দখলের পর সউদী সমর্থিত ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট আবদু রাব্বু মনসুর আল হাদিকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। দেশের বাইরে থাকা হাদিকে দেশে ফেরাতে ২০১৫ সালের জুনে ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে সউদী আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট। সেই থেকে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত ছিল।
সউদী যুবরাজ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দেন। ‘রিয়াদ চুক্তি’ নামের এই চুক্তির স্বাক্ষরের ফলে ইয়েমেনের ক্ষমতা ভাগাভাগি করবে উভয় পক্ষ। এই চুক্তির ফলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও সউদী আরব সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আবেদ রাব্বু মনসুর হাদির সরকার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের দীর্ঘ এক মাসের পরোক্ষ আলোচনার অবসান ঘটলো।
ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ পাঁচ বছরের জন্য টানা গেছে, বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটকে জ্বালিয়ে দিয়েছে, লক্ষ লক্ষ লোক দুর্ভিক্ষের কবলে রয়েছে এবং প্রায় ৮০ শতাংশ লোক — ২৪ মিলিয়ন মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। সৌদি আরবের শাসক রাজপরিবার এক তরুণ সৌদি যুবরাজকে ইরান-সমর্থিত হাউথির বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রিয়াদ নেতৃত্বাধীন জোটের বিরোধের অবসানের জন্য আলোচনার চেষ্টা করার জন্য প্রেরণ করে।
৪. পোকামাকড় হত্যা আশঙ্কাজনক
পরিবেশের খবর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব পাবার কথা থাকলেও এবারে এসেছে চতুর্থ স্থানে। একদল বিজ্ঞানী বিভিন্ন প্রজাতির পোকার ওপর গবেষণা ও পর্যালোচনা করে জানিয়েছেন, আগামী একশ’ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে কীটপতঙ্গ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীতে যে হারে পোকামাকড় কমছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী এক শতকের মধ্যে পৃথিবী পোকামাকড় শূন্য হয়ে পড়বে। এই গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবী থেকে ইতোমধ্যে ৪১ শতাংশ পোকামাকড় বিলুপ্ত হওয়ার পথে রয়েছে। এ কারণে পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলেও মনে করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক দেখিয়েছেন যে, বছরে আড়াই শতাংশ হারে কীটপতঙ্গ কমছে। কীটপতঙ্গ কমার এই হার অব্যাহত থাকলে আগামী একশ’ বছরের মধ্যে এসব পোকামাকড় বিলুপ্তির তালিকায় চলে যেতে পারে। গবেষণায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, পোকামাকড় রক্ষায় আজ পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপই সফল ও টেকসই হয় নি। এছাড়া পোকামাকড়ের একটি বড় অংশ চলমান প্রাকৃতিক প্রবাহে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারছে না।
জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, কীটনাশক এবং ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের ফলে পৃথিবীতে এর প্রভাব বিপর্যয়কর হবে।
৫. ট্রাম্প এবং কিমের বৈঠক
নানা টানাপোড়েনের সম্পর্কের পরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়া নেতা কিম জং-উনের মধ্যে এ বছর বৈঠক হয়। তাও একবার নয়, দু দু বার।
ব্যক্তিত্ব, অতীত, ক্ষমতায় আসার পটভূমি – এগুলোর বিবেচনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কিম জং আনের মধ্যে বিস্তর ফারাক। দুজন দুই জগতের মানুষ। কোরিয়ার প্রেসীডেন্ট কিম ক্ষমতায় এসেছেন পরিবারের পরম্পরায়। লেখাপড়া করেছেন সুইজারল্যান্ডে। বয়সে যুবক এবং একনায়ক। নিজের ক্ষমতার বিরুদ্ধে যখনই কেউ বিন্দুমাত্র চ্যালেঞ্জ করেছে, তাকে তিনি অবলীলায় সরিয়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে ট্রাম্প ব্যবসায়ী থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। কোনও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এ ধরনের কেউ কখনও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন নি। তিনি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ অর্থাৎ তিনি কী বলবেন বা করবেন আগে থেকে ধারণা করা কঠিন।
তবে দুজনের বিষয়ে একটি মিল রয়েছে সেটি হলো নিজেদের প্রশাসনের ওপর তাদের কর্তৃত্ব প্রবল।
কিন্তু দুজনার মধ্যকার দু’দিনব্যাপী আলোচনা কোনও ফলাফল বয়ে আনতে পারে নি। কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই বৈঠক শেষ হয়। দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক শেষে ট্রাম্প এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে এবং এই মুহূর্তে আবার দু’দেশের শীর্ষ বৈঠকের কোনও পরিকল্পনা নেই।
৬. ভারত সরকারের কাশ্মির নিয়ন্ত্রণ
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫(এ) ধারা বাতিলের প্রসঙ্গটি এসেছে সেরা আলোচিতর ষষ্ঠ স্থানে। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ ব্রিটিশ শাসনের অধীন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের সাথে যোগ দেয়া একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য ছিল কাশ্মীর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু কাশ্মীরে গণভোটের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরে তিনি তার প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণ ভঙ্গ করে কাশ্মীরকে প্রকৃতপক্ষে ভারতের শাসনভুক্ত করেন। তবে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫(এ) ধারায় কাশ্মীরকে একটি আত্মনিয়ন্ত্রিত অঞ্চল হিসেবে যে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫(এ) ধারা বাতিলের কাশ্মির তাই ছিল। সংবিধানের এ অনুচ্ছেদটি রাজ্যটিকে বিশেষ ধরণের স্বায়ত্বশাসন ভোগ করার অধিকার দেয়, যা রাজ্যটিকে নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা এবং আইন তৈরি করার অনুমোদন দেয়। পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বিষয়ক ব্যাপারের নিয়ন্ত্রণ থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। কিন্তু ভারতের বর্তমান সরকার সংবিধান থেকে আলোচিত ধারা দুটি সরিয়ে দিয়ে কাশ্মীরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কার্যত নিজের হাতে তুলে নেয়।
৭. ভারতের নাগরিকত্ব বিল
বছরের প্রায় শেষ দিকে এসে আলোচিত হয়ে ওঠে ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব দেবার জন্যই এই বিল। অন্যভাবে বললে, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা।
২০১৫ ও ২০১৬ সালে সরকার ১৯৪৬ ও ১৯২০ সালের আইনানুসারে অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কিছু গোষ্ঠীকে ছাড় দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও তার আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টানদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ অবৈধ অভিবাসীদের ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে বাস করলেও তাঁদের জেলে বা নিজেদের দেশে পাঠানো হবে না।
কিন্তু সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যে সমতার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এ বিল তার পরিপন্থী। সমালোচকরা বলছেন, এখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করা হয়েছে। রাজ্যসভায় বিল পেশের আশঙ্কায় এ বছরের শুরুতে প্রায় পুরো উত্তরপূর্ব ভারত জুড়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ সংঘটিত হয়। সে বিক্ষোভ এখনও চলছে।
৮. আমাজন জঙ্গলে আগুন
বিশ্বের বৃহত্তম চিরহরিৎ বন আমাজনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। কারণ প্রাণীদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ২০ শতাংশই আসে এই বন থেকে। তাছাড়া প্রতি বছর ২০০ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এই বন। পৃথিবীর বেশিরভাগ নদীর উৎস আমাজন। রয়েছে ৪৫ লাখ প্রজাতির পোকামাকড়, বাস করে তিন শতাধিক উপজাতি মানুষ। এ বছর পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন পড়ে অস্তিত্ব সংকটে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আমাজন জঙ্গল। ব্যবসায়ী ও পুঁজিপতিদের স্বার্থের বলি হচ্ছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’। এবারের অগ্নিকাণ্ড দাবানলের প্রকোপে নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৯. ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট
সংবাদ মাধ্যমগুলো খুব গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের খবরাখবর।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের ঘটনা বিরল। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, যেখানে আইন তৈরি করা হয়, তারা দেশটির প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা আছে, বেশ কিছু অপরাধের জন্যে প্রেসিডেন্টকেও তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া অর্থাৎ তাকে ইমপিচ করা যেতে পারে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ঘুষ নেওয়া অথবা অন্য কোনও বড় ধরনের কিম্বা লঘু অপরাধ। প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিতে হলে এই সেনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সেনেটরকে ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোট দিতে হবে।
এখন পর্যন্ত ইমপিচমেন্টে শতভাগ কিছুই নিশ্চিত হয়নি। তবে শীতকালীন ছুটির পর জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সেনেট সম্ভবত এই বিচারের ব্যাপারে সাধারণ সম্মতি নেয়া শুরু করবে। সেনেটের সংখ্যালঘু ডেমোক্র্যাটিকদের নেতা চাক শুমার তেমনটাই অনুরোধ করেছেন। রিপাবলিকান সেনেট নেতা মিচ ম্যাককনেলও হয়তো এই প্রস্তাবে সায় দেবেন।
১০. বাংলাদেশে ক্যাসিনো কাণ্ড
বাংলাদেশের সরকার ক্যাসিনোবিরোধী জোরদার অভিযান চালায় বছর শেষ হওয়ার মাস কয় আগে। সেপ্টেম্বরে রাজধানীর ইয়ংমেনস ফকিরেরপুল ক্লাব দিয়ে শুরু হয়েছিল আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। টানা অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় অনেক ক্লাব। যার মাশুল গুণতে হয় খেলোয়ারদেরকে। এর ফলে খেলোয়াড় ও সংগঠকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে চরম হতাশা।
অন্যদিকে দুই মাসে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী ৫০ টি অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রধানমন্ত্রীর সারা দেশে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে তছনছ হয়ে যায় ক্যাসিনো ডনদের গোপন সাম্রাজ্য। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে দুর্নীতিবাজদের মধ্যে। ৫০ টি অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় ২৭৫ জনকে। এদের ২২৩ জন ঢাকায়। বাকি ৫৩ জন বিভিন্ন জেলা থেকে। গ্রেপ্তার হওয়াদের মধ্যে অধিকাংশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।