Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
February 11, 2025
হেডলাইন
Homeবাংলাদেশ৫ হাজার কোটি টাকা পাচার

৫ হাজার কোটি টাকা পাচার

৫ হাজার কোটি টাকা পাচার

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে এবং এ কথা স্বীকার করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থাও। অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই আমদানি-রপ্তানিতে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে-কমিয়ে দেখানো হয়। সাধারণত উৎপাদনে থাকা কোম্পানিগুলো এমন পদ্ধতিতে অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কিন্তু এবার উৎপাদনে নেই এমন কোম্পানিও আমদানি-রপ্তানির আড়ালে বড় অঙ্কের অর্থ পাচার করেছে। সব মিলিয়ে ৮০৬টি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যের আড়ালে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক তদন্ত প্রতিবেদনে বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচারের এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রায় ছয় মাস থেকে যৌথভাবে তদন্ত পরিচালনা করেছে এনবিআরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, ভ্যাট নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত ১৭ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আর্থিক অনিয়মে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা চাওয়া হবে।

অর্থ পাচারে জড়িত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাকশিল্পসংশ্লিষ্ট। দেশের রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। একইভাবে আমদানি ব্যয়ের বড় অংশও ব্যয় হয় এ খাতের প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল জোগানে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানিতে মূল্য বাড়িয়ে দেখিয়ে অর্থ পাচার করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, একসময় উৎপাদনে থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে ৮০৬ প্রতিষ্ঠানের একটিও উৎপাদনে নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহর করে ব্যবসায়ী নামধারী কিছু অসাধু ব্যক্তি ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা পাচার করেছেন।

Pause

Unmute
Remaining Time -8:05

Fullscreen

Close PlayerUnibots.in
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুর রউফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক অনিয়ম করলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আর্থিক অনিয়ম করেছে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে।

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভালো-মন্দ সব ক্ষেত্রেই আছে। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুর্নীতি করেন না। ব্যবসায়ী নামধারী ব্যক্তিরাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক অনিয়ম করে থাকেন। তারাই প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে ওসাকা স্টিল লিমিটেড (১৬-কাস্ট-পিবিডব্লিউ-২০০১, সার্কেল ৪১), সিওয়েভ একসেসরিজ লিমিটেড (লাইসেন্স ৯৬৩-কাস্ট-পিবিডব্লিউ ২০১৪, সার্কেল ২), নিকিতা করপোরেশন লিমিটেড (৩৯৯-কাস্ট-এসডব্লিউবি ৯৬), টিজেএন্ডকো (১০৮-কাস্ট-এসবিডব্লিউ ৯১, সার্র্কেল ২৭), শামসুল আলামিন কটন মিল লিমিটেড (১২৮/কাস্ট-এসবিডব্লিউ ২০০১, সার্র্কেল ৪০), আদনান সোয়েটার লিমিটেড (২২২/ কাস্ট-এসবিডব্লিউ-২০০২, সার্কেল ১৬), ইউলি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (১৭৬৮/ কাস্ট-এসবিডব্লিউ-৯৩, সার্কেল ৬), ভেনাস অ্যাপারেল লিমিটেড (৩২৫/ কাস্ট-এসবিডব্লিউ-২০০৩, সার্কেল ৬), উইনস গামেন্টস লিমিটেডসহ (১৬৩৬/কাস্ট-এসবিডব্লিউ-৯৩, সার্কেল ২৭) ৬০৩ প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ আছে।

এনবিআরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বলা যায়, আশির দশকে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা গতিশীল করতে বিনা শুল্কে কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দেয় এনবিআর, যা বন্ড সুবিধা নামে পরিচিত। এই সুবিধা পাওয়ার শর্ত থাকে আমদানিকৃত পণ্যের সবটাই রপ্তানিকৃত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করা যাবে না। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আমদানিকারকের বিরুদ্ধে এনবিআর প্রয়োজনে ফৌজদরি মামলা করতে পারবে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স এবং বন্ড সুবিধা বাতিল করা হবে। কাঁচামালের ৮০৬ প্রতিষ্ঠানই এনবিআরের বন্ড সুবিধাপ্রাপ্তির তালিকায় আছে। এনবিআরের তদন্তে ধরা পড়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি এবং তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী দেশ রূপান্তরকে বলেন, রপ্তানি খাতকে গতিশীল করতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য আমদানির সুবিধা দিয়েছে সরকার। কিছু প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা নিয়েও আর্থিক অনিয়ম করেছে বলে অভিযোগ আছে। তবে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে অর্থ পাচার করা সম্ভব নয়। অবশ্যই এ কাজে এনবিআর ও ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা জড়িত। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অসাধু কর্মকর্তাদেরও দুষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এনবিআরের তদন্ত কর্মকর্তারা সরেজমিনে ৮০৬ প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে দেখতে পেয়েছেন, কারখানার অবকাঠামো থাকলেও ২১৯টি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং ১১৭টি শুধু গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রধান ফটকে নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। তারা জানে না এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক কারা। মাস গেলে তাদের কাছে বেতন পৌঁছে যায়। বাকি ২৬৭টির ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, দোকানপাট ও ঘরবাড়ি করে ভোগদখল করে আছে। মাস গেলে কেউ এসে ভাড়া নিয়ে যায়। এনবিআরের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব প্রতিষ্ঠানের জমির মালিকের সন্ধান করা হলে প্রত্যেকেই বলেছেন, একসময়ে উৎপাদনে থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে কারখানা বন্ধ রেখেছেন। তারা জানেন না কে বা কারা তাদের কারখানার ঠিকানা ব্যবহার করে অনৈতিক কাজ করেছেন। ৮০৬ কারখানার প্রতিনিধিরা রপ্তানিকৃত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করার কথা জানিয়ে এনবিআর থেকে কাঁচামালের পরিমাণ উল্লেখ করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির অনুমতি নিয়েছে।

যে কাঁচামালের নাম উল্লেখ করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে আনা হয়েছে তার চেয়ে নিম্নমানের কম দামি পণ্য। বিনিময়ে ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে পণ্যের দাম হিসেবে বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে পাঠানো হয়েছে কয়েক গুণ বেশি পরিমাণ অর্থ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমদানিকারকরা বিদেশে নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে বছরের পর বছর এই প্রক্রিয়ায় অর্থ পাচার করে এসেছেন। ব্যবসায়ী নামধারী অসাধু ব্যক্তিরা আমদানিকৃত নি¤œমানের পণ্য বন্দর থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি পাঠিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। এভাবেও তারা বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

সারা দেশে প্রায় ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির সরকারি সুবিধা পেয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় আছে প্রায় ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোকবলের অভাবে এনবিআর কর্মকর্তারা সরেজমিনে কারখানার অস্তিত্ব আছে কি না, তা যাচাই করতে পারেন না। তবে আগের ধারা থেকে বের হয়ে এনবিআর কাজ করছে। ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ অটোমেশনে যাচ্ছে এনবিআর। এতে আমদানি-রপ্তানিতে স্বচ্ছতা আসবে। অর্থ পাচারও কমবে।

এর আগে এনবিআরের তদন্তে দেখা গেছে, দেশ থেকে পাচারকৃত মোট অর্থের প্রায় ৮০ ভাগই আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাণিজ্যের আড়ালে পাচার হয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত তথ্যের পরিসংখ্যান প্রকাশ পেয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে শুধু বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে ৫ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে। আর সুইস ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সেখানে বাংলাদেশিদের জমা আছে প্রায় ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বলেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মোট ৮ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

দেশ রূপান্তরের সৌজন্যে

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment