অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপন: ব্রিটেনে নাইজেরিয়ার সিনেটর দোষী সাব্যস্ত
কিডনি প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তিকে ব্রিটেনে পাচার করার দায়ে নাইজেরিয়ার একজন সিনেটর এবং তার স্ত্রীকে লন্ডনে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সিনেটর আইক একওয়েরেমাডু এবং তার স্ত্রী বিয়েট্রিস ওই ব্যক্তির কিডনি তাদের মেয়ে সোনিয়াকে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, যিনি কিডনি রোগে ভুগছেন।
ব্রিটিশ সরকারি কৌঁসুলিরা বলছেন, লেগোসের ২১ বছর বয়সী হকার এই ভুক্তভোগীকে আট হাজার ডলার এবং ব্রিটেনে সুন্দর জীবনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ওই ব্যক্তি বলছেন, হাসপাতালে ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে কী ঘটতে চলেছে।
ব্রিটেনের আধুনিক দাসত্ববিরোধী আইনের আওতায় একওয়েরেমাডু দম্পতি এবং একজন ডাক্তার, যিনি তাদের সাহায্য করেছিলেন, তারাই প্রথম ব্যক্তি যারা অঙ্গ পাচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত হলেন। আগামী মে মাসে তাদের সাজা ঘোষণা করা হবে।
অসুস্থ মেয়ের জন্য কিডনি
একওয়েরেমাডু ২০০৩ সাল থেকে নাইজেরিয়ায় একজন নির্বাচিত সিনেটর ছিলেন। তিনি একটি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
লন্ডনে ওল্ড বেইলি আদালতের শুনানি থেকে জানা যায়, ওই কিডনি একওয়েরেমাডু দম্পতির মেয়ে সোনিয়ার জন্য জোগাড় করা হচ্ছিল। কিন্তু তাকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
শুনানি থেকে আরো জানা যায়, লন্ডনের রয়্যাল ফ্রি হাসপাতালে ৮০ হাজার পাউন্ড ব্যয়ে প্রাইভেট ট্রান্সপ্লান্টের জন্য ভুক্তভোগীকে গত বছর ব্রিটেনে নেওয়া হয়। কৌঁসুলিরা বলছেন, তাকে সাত হাজার পাউন্ড পর্যন্ত নগদ অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। অভিযোগ, মামলার আসামীরা কোনো পারিবারিক সম্পর্ক না থাকলেও রয়্যাল ফ্রি হাসপাতালের ডাক্তারদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে ওই ব্যক্তি সোনিয়ার চাচাতো ভাই।
কিডনি জটিলতার জন্য সোনিয়াকে প্রতি সপ্তাহে হাসপাতালে ডায়ালাইসিস নিতে হয়। ব্রিটেনে কিডনি দান বৈধ হলেও কোনো অর্থ বা অন্যান্য বৈষয়িক সুবিধা দেওয়া হলে সেটা অপরাধের তালিকায় পড়ে।
কিডনিদাতা ‘উপযুক্ত নয়’
কয়েকটি কারণে রয়্যাল ফ্রি হাসপাতালের চিকিৎসক ড. পিটার ডুপন্ট সিদ্ধান্ত নেন, কিডনিদাতা ওই প্রতিস্থাপনের জন্য অনুপযুক্ত। কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল, অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি সম্পর্কে ভুক্তভোগী কোনো কাউন্সেলিং বা পরামর্শ পাননি এবং আজীবন সেবা ও যত্নের জন্য তার কাছে প্রয়োজনীয় অর্থ নেই।
আদালতের শুনানি থেকে জানা যায়, এরপর একওয়েরেমাডু দম্পতি তুরস্কে গিয়ে এই অস্ত্রোপচারের জন্য অন্য একজন কিডনিদাতা খুঁজে বের করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কিডনিদাতা যুবকটি লন্ডন থেকে পালিয়ে গিয়ে সারে কাউন্টির শহর স্টেইনসের থানায় গিয়ে এ ব্যাপারে কান্নাকাটি করার পর এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু হয়।
লেগোসের স্ট্রিট মার্কেট থেকে লন্ডন
২০২১ সালে একওয়েরেমাডু তার মেয়ের জন্য একজন কিডনিদাতা খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেন তার ভাই ডিওয়ে একওয়ারেমাডুকে। কারণ তার মেডিক্যাল প্রশিক্ষণ রয়েছে।
ডিওয়ে একওয়ারেমাডু নাইজেরিয়াতে থাকেন। তিনি দক্ষিণ লন্ডনের সাদার্কে তার একজন প্রাক্তন সহপাঠী ডা. ওবেটার কাছে যান, যিনি সম্প্রতি একজন নাইজেরিয়ান দাতার কাছ থেকে রয়্যাল ফ্রি হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছিলেন।
ডা. ওবেটা এরপর মেডিক্যাল ট্যুরিজম কম্পানি ভিনটেজ হেলথ গ্রুপের চিকিৎসক ক্রিস অ্যাগবো এবং অন্য একজন এজেন্টের মাধ্যমে কিডনিদাতার জন্য ভিসার ব্যবস্থা করেন বলে আদালতকে জানানো হয়।
ডা. ওবেটাকে যিনি কিডনি দিয়েছিলেন ওই ব্যক্তিকে ভুক্তভোগী চিনতেন। এই ব্যক্তি লেগোসের একটি স্ট্রিট মার্কেটে মোবাইল ফোনের সামগ্রী বিক্রি করতেন। সেখান থেকে এই কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
একওয়েরেমাডু দম্পতি এবং ডা. ওবেটা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সূত্র: বিবিসি