অরুণাচল থেকে গুজরাট পর্যন্ত কংগ্রেসের দ্বিতীয় ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’
কংগ্রেস সম্প্রতি দক্ষিণের তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে উত্তরের কাশ্মীরের শ্রীনগর পর্যন্ত দীর্ঘ ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ (পদযাত্রা) শেষ করেছে। ওই যাত্রা সমাপ্তির কয়েক সপ্তাহ পরে দলটি একটি নতুন পদযাত্রার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে- এবার পূর্ব থেকে পশ্চিমে। ‘ভারত জোড়ো যাত্রার’ গতি বজায় রাখতে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বেই দ্বিতীয় পদযাত্রার পরিকল্পনা করেছে দলটি।
রোববার ভারতের ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে কংগ্রেসের মহাঅধিবেশন এ বার্তা দেওয়া হয়।
দলটির একধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ‘ভারত জোড়ো যাত্রায়’ ব্যাপক সাড়া দেখে পরিকল্পনাটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সূত্র অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহের মধ্যে পদযাত্রার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে দলীয় নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন। পদযাত্রাটি অরুণাচল প্রদেশের পাসিঘাট থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে গুজরাটের পোরবন্দরে শেষ হতে পারে।
পার্টির মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, এবারের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ তেমন জাঁকজমকপূর্ণ হবে না। পদযাত্রাটি জুন বা নভেম্বরের আগে শুরু হতে পারে। আগের পদযাত্রার চেয়ে কম সময় লাগবে। এপ্রিলে কর্ণাটকে নির্বাচন, জুন থেকে বর্ষা এবং নভেম্বরে আবার কিছু রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখেছে দল।
সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে রমেশ আরও বলেছেন, এখনো অনেক উৎসাহ এবং শক্তি আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও মনে করি এ পদযাত্রার প্রয়োজন আছে। কিন্তু পূর্ব-পশ্চিমে পদযাত্রাটি দক্ষিণ-উত্তরের চেয়ে ভিন্নতর হতে পারে। এ পদযাত্রায় আগের মতো বিস্তৃত পরিকাঠামো নাও থাকতে পারে। এখানে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যাও কম হবে।
রমেশ বলেন, এই পথে প্রচুর জঙ্গল এবং নদীর কারণে এটি একটি ‘মাল্টি-মডেল যাত্রা’ হবে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ চলছিল তখন পূর্ব-পশ্চিমের পদযাত্রার বিষয়ে কথা বলা হয়েছিল। দল এ বিষয়ে তখন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিন্তু রাহুল গান্ধী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি কর্মসূচিটি চালিয়ে যেতে চান।
পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে রাহুল গান্ধী বলেন, কংগ্রেস ‘ত্যাগের দল’, ‘ত্যাগ’ এবং ‘কাজ’ চালিয়ে যেতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ঘাম ও রক্ত দিয়ে একটি কর্মসূচি তৈরি করুন। পুরো দেশ আমাদের সঙ্গে থাকবে।’
রাহুল বলেন, চার মাস ধরে আমরা ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ করেছি। চরম আবহাওয়া সত্ত্বেও লক্ষাধিক মানুষ পদযাত্রায় অংশ নেন এবং আমরা সবাই অনেক কিছু শিখেছি।
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বলেন, দীর্ঘ ও কষ্টকর ১ হাজার ৭৬০ কিলোমিটার পদযাত্রার সময় রাহুলের দায়িত্বের বিষয়টি তার মন দখল করেছিল।
রাহুল বলেন, ‘পদযাত্রা শুরু করার পর আমাদের মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। আমরা রাজনীতির কথা বলিনি… তবে মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভিন্নতা এসেছে…। ‘ভারত মাতা’ সব অহংকার ঝেড়ে ফেলার বার্তা দিয়েছেন আমাকে… এবং মানুষের প্রতিনিয়ত সাক্ষাৎ করতাম আমি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জম্মু-কাশ্মীরে পৌঁছে চুপচাপ হয়ে গেলাম। সেখানে আমার কোনো বাড়ি ছিল না। ধনী-গরিব, বৃদ্ধ-যুবক, যেকোনো ধর্মেরই হোক, তারা নিশ্চয়ই জানে আমি তাদের বাড়িতে এসেছি।’
দল এবং সমর্থকদের অনেকেই ৫২ বছর বয়সি রাহুলের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে টুইট করেছেন। তারা বলেন, কেরালায় সর্প নামে একটি নৌকা চালানোর সময় রাহুল পায়ে অনেক ব্যথা পেয়েছিলেন।
‘আমি সকালে উঠতাম এবং প্রতিদিন আশ্চর্য হতাম- আমি কিভাবে এত পথ হাঁটব’ যোগ করেন গান্ধী।
কংগ্রেস ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জোটের নেতৃত্ব চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে দলটি।
রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র বলেন, ‘আমরা চাই সমস্ত রাজনৈতিক দল ঐক্য গড়ে তুলুক এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একসঙ্গে কাজ করুক।’
প্রাদেশিক এবং সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্র এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের ওপর বিশেষ দৃষ্টি রেখে গণসংযোগ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে দলটি।