Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
December 21, 2024
হেডলাইন
Homeপ্রধান সংবাদআওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতৃত্বে রাজাকারের উত্তরসূরিরা

আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতৃত্বে রাজাকারের উত্তরসূরিরা

আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতৃত্বে রাজাকারের উত্তরসূরিরা

আওয়ামী লীগে ‘অনুপ্রবেশের’ বিষয়টি এখন দেশময় আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের উত্তরসূরিরা এখন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শাখার পদ-পদবি কিনেছেন তারা। হয়ে উঠেছেন বড়ো নেতাদের ঘনিষ্ঠ। একই সঙ্গে এসব পদবি ব্যবহার করে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে নিয়োগসহ ব্যবসা, বাণিজ্য, ঠিকাদারিসহ সবকিছু নিজেদের আয়ত্বে নিয়েছেন। এমনকি মাদক ব্যবসায় জড়িত তাদেরই সিন্ডিকেট।
এসব বিরোধী মতাদর্শীরা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে দুর্নীতি, চোরাচালান, জমি দখল, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টিআর-কাবিখা প্রকল্পে লুটপাটসহ নানা কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তাদের দাপটে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা ও ত্যাগী নেতারা হয়ে পড়েছেন একলা। দলীয় ফোরামের একাধিক বৈঠকে ত্যাগী নেতারা এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে নানা তথ্য তুলে ধরেন। কিন্তু কোনও প্রতিকার হয় নি। বরং যারা তাদের এসব পদ-পদবি দিয়েছেন তারাই তাদের রক্ষা করেন। বিষয়গুলো দলীয় হাইকমান্ডের নজরের বাইরে নয়।
 
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলে এই অনুপ্রবেশের ঘটনা হঠাৎ করে ঘটে নি; শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে, ঢালাওভাবে হয়েছে ২০১৪ সালের পর এবং সব অনুপ্রবেশই ঘটেছে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের হাত ধরেই। দলে বিরোধী মতাদর্শীদের এ ধরনের ঢালাও অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকবারই দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১১ বছরে ৫৫ হাজার বিরোধী মতাদর্শী আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোতে অনুপ্রবেশ করেছেন। বিষয়টি দলের জন্য অশনিসংকেত—সাংগঠনিক ও গোয়েন্দা রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে আসায় বিতর্কিত অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে। চলছে শুদ্ধি অভিযান।
 
সূত্র জানায়, অনুপ্রবেশকারীদের একটি তালিকা হাতে পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অপরাধ যে করবে, অন্যায় যে করবে; সে কোন্‌ দল করে, কী করে তা আমি কখনও দেখব না। আমার দৃষ্টিতে যে অপরাধী সে অপরাধীই। দলের লেবাস লাগিয়ে দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীরা পার পাবে না।’
 
এদিকে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে মহানগর, জেলা ও উপজেলা কমিটিতে যাতে কোনও অনুপ্রবেশকারী না ঢুকতে পারে সেজন্য নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। আগামীতে কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়া অন্য দল থেকে কাউকে দলে না ভেড়াতে তৃণমূলে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অনুপ্রবেশকারী এবং যাদের হাত ধরে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তাদের তালিকা করার কাজ শুরু হচ্ছে শিগগিরই। এছাড়া সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমে যাতে বিতর্কিত কেউ দলে ঢুকতে না পারে—এমন বার্তাও পাঠানো হয়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে।
 
রাজাকার ও পাকবাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত শান্তি কমিটির প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন—এমন ব্যক্তি ও তাদের সন্তান-স্বজনদের কেউ কেউ নানা কৌশলে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোতে ঢুকে পড়েছেন। তবে জামায়াত তাদের আদিপিতা। জামায়াতের জন্মলগ্ন থেকেই দলটিতে তারা আছেন এবং থাকবেন। ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন করে সংঘবদ্ধ হয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেওয়া বিরোধী মতাদর্শীর এই নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকেই হত্যা-সন্ত্রাস-নাশকতা মামলার আসামি—এমন তথ্য সাংগঠনিক ও গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে।
জানা গেছে, এক সময় যারা ফ্রিডম পার্টি, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ২০০৯ সালের পর তারা দলে দলে সরকারি দলে যোগদান করা শুরু করেন। সংঘবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যেই স্বাধীনতাবিরোধী আদর্শের মানুষরা অর্থের বিনিময়ে ও নানা কৌশলে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ছত্রছায়ায় আছেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও পেয়েছেন। একই সঙ্গে অতীত অপকর্ম থেকে রেহাই পাওয়া, দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার টার্গেট নিয়েও তারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েছেন। আর কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের আলাদা বলয় সৃষ্টি করতে শান্তি কমিটির সদস্যদের সন্তান-স্বজনদের থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন। এতে দলের ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হয়েছেন।
 
জানা গেছে, অনুপ্রবেশকারী সবাইকেই নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে যারা অপরাধী একে একে তাদের সবাইকে ধরা হবে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মাঠ থেকে হঠাৎ করেই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকরা উধাও হয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের সন্দেহ হয়। গোপনে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় এ ভয়াবহ চিত্র। অনেকেই মিলেমিশে একাকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। আবার কেউ কেউ নিজেরাই আওয়ামী লীগ কর্মী সেজে ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানামুখী কর্মকান্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজেদের সরকার সমর্থক হিসেবে জাহির করছেন। তবে অতি ভক্তি যে চোরের লক্ষণ এটা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বুঝে গেছেন। এই কারণে গোপনে তাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেন। আওয়ামী লীগের একটি বিশেষ টিমকে তিনি এক্ষেত্রে কাজে লাগান এক বছর ধরে। এছাড়া একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও রিপোর্ট দেয়। দুইটি মিলিয়ে অর্ধ লক্ষাধিক বিরোধী মতাদর্শীর অনুপ্রবেশের চিত্র উঠে আসে। সেখান থেকে ১৫০০ বিতর্কিত বিরোধী মতাদর্শীর তালিকা তৃণমূলে পাঠানো হয়েছে। তাদের দল থেকে বাদ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
জানা গেছে, অতীতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ পদ পান বিরোধী মতাদর্শীরা। উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে পদ বেচা-কেনার ঘটনা ছিল অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। অর্থের বিনিময়ে এসব পদে এসেছেন তারা। প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় ফোরামের প্রায় ১০টি কর্মসূচিতে অনুপ্রবেশকারীদের দলে না নেওয়ার বিরুদ্ধে সতর্কও করে দিয়েছেন। দলীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, এই দলে পরগাছাদের কোনও জায়গা নেই।
 
আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জানান, অনুপ্রবেশকারীরাই আওয়ামী লীগের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা যে দলের ক্ষতি করতে এসেছিল তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে দলটি। অনুপ্রবেশকারীদের হাতে সংঘটিত বেশ কিছু বিতর্কিত ঘটনায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। সরকার ও দলকে বারবার বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার নতুন কৌশল বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই তারা আওয়ামী লীগে এসেছে—এ বিষয়টি দলের হাইকমান্ড আঁচ করতে পেরেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এ নিয়ে চরম বিরক্ত। ইতোমধ্যে তিনি অনুপ্রবেশকারীদের একটি দীর্ঘ তালিকা দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েছেন।
 
ঢাকা মহানগরে ১১ বছরে ১ হাজারেরও বেশি বিরোধী মতাদর্শী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় ১০ বছরে প্রায় ৭ হাজার বিভিন্ন দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে এসেছেন। রংপুর বিভাগের সাত জেলায় প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে নতুন করে আওয়ামী লীগার হয়েছেন বিভিন্ন দলের কমপক্ষে ১৮ হাজার নেতাকর্মী। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় প্রায় ৭ হাজার এবং সিলেট বিভাগের চার জেলায় ২ হাজার নেতাকর্মী বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। বরিশাল বিভাগে প্রায় ৪ হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন দল থেকে এসেছেন। ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলা—জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহে বিরোধী মতাদর্শী ১ হাজার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment