আতঙ্কে ঢাকামুখী হচ্ছে না মানুষ
ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন রাজধানীর প্রধান প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে পুলিশ। সন্দেহ হলেই ব্যাগ-লাগেজ তল্লাশির পাশাপাশি মোবাইল ফোনের এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে একজন নিহতের ঘটনার পর কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সড়কগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
এ পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাহারায় থাকার ঘোষণায় ঢাকায় সংঘাতের আশঙ্কা করছে মানুষ। ফলে বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আতঙ্কে মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে না।
আমাদের বগুড়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, যাত্রীসংকটের কারণে শিডিউল বিপর্যয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী বাসগুলো। প্রতিদিন গড়ে যেখানে দেড় হাজার যাত্রীবাহী বাস উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় যেত; গত দুই দিন ধরে এর পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। বগুড়ার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, যেসব পরিবহন ঢাকায় যাচ্ছে তার বেশিসংখ্যক আসনই ফাঁকা।
একটি পরিবহনের তত্ত্বাবধায়ক আলম হোসেন জানান, গত বুধবার রাত থেকে যাত্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার টার্মিনালে বা কাউন্টারে তেমন যাত্রীই আসছে না।
আরেক পরিবহনের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান জানান, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের কারণে অজানা আতঙ্কে কদিন হলো বগুড়া থেকে যাত্রীরা একান্ত জরুরি ছাড়া ঢাকায় যাচ্ছে না।
বগুড়া জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, দুই দিন হলো চরম যাত্রীসংকট দেখা দিয়েছে।
রংপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে উত্তরের জেলাগুলো থেকে ঢাকায় বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। আজ ভোর থেকে দু-একটি বাস ছেড়ে গেলেও বিকেল গড়াতেই দূরপাল্লার বাস চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আতঙ্কে মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছে না। এতে যাত্রীর সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় বাস চলাচল কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কগুলোতে আন্তজেলার বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে। কিন্তু ঢাকাগামী বাসের সংখ্যা কমে গেছে। এক ঘণ্টা পরপর ঢাকাগামী বাস ছাড়লেও এখন চার ঘণ্টা পর পর ছাড়ছে। কাউন্টারগুলো ফাঁকা, অলস সময় পার করছেন পরিবহন শ্রমিকেরা।
রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আফতাবুজ্জামান বলেন, ‘দুই-তিন দিন ধরে ঢাকাগামী বাসের যাত্রী কমে গেছে। মালিকদের লোকজন দিয়ে বাস ঢাকায় যাতায়াত করছে। তার ওপর আগামীকাল ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ। ভোগান্তির কথা চিন্তা করে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঢাকায় যাচ্ছে না। আজ একেবারেই যাত্রী নেই বললেই চলে।’
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহনগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করছে। তবে অন্যান্য ছুটির দিনের তুলনায় যাত্রীদের চাপও কম লক্ষ করা গেছে। যাত্রীর অভাবে বিভিন্ন যানবাহনকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। টিকিট কাউন্টারগুলোতেও যাত্রীদের ভিড় দেখা করা যায়নি। অনেকটা অলস সময় পার করছেন টিকিট কাউন্টারের লোকেরা।
আজ শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে এমনই চিত্র চোখে পড়ে। অন্যদিকে গত দুই দিন ধরেই মহাসড়কের পয়েন্টে পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনগুলোতে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। কিন্তু আজ সকাল থেকেই মহাসড়কে পুলিশের উপস্থিতি কম লক্ষ করা গেছে। তবে দুপুরের দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে কয়েকজন পুলিশকে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে।
পরিবহনচালক আব্দুর রহিম বলেন, ‘মোঘরাপাড়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে ২০ মিনিট ধরে শিমরাইল মোড়ে অবস্থান করছি। যাত্রী না থাকায় বাস ছাড়তে পারছি না।’
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) এ কে এম শরফুদ্দীন জানান, নাশকতার উদ্দেশ্যে কোনো ব্যক্তি যানবাহনে বিস্ফোরক দ্রব্য বহন করে কি না, সেদিকে পুলিশ সতর্ক নজর রাখছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই তল্লাশি চলবে। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম বলেন, ‘গত দুই দিনের মতোই আমাদের পক্ষ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা এলাকার ঢাকামুখী লেনে একটি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত আমরা কিছু পাইনি।’