‘আন্তর্জাতিক বলয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন’ নিয়ে বিশ্বজিত সাহা
বইমেলার মূলমঞ্চে গতকাল ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ‘আন্তর্জাতিক বলয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক, সাংবাদিক ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নিউ ইয়র্ক প্রবাসী। নিউ ইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বাংলা ভাষা নিয়ে কাজ করায় তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন।
বাংলাদেশের গৌরবময় অমর একুশে ১৯৯৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। এরপর ২০০১ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির অনুমােদন করা হয়। একুশের আন্তর্জাতিকীকরণের সর্বশেষ স্বীকৃতি ২০২০ সালে বিশ্বজিত সাহার আবেদনে নিউ ইয়র্ক স্টেট সিনেটে জেসিকা রামােস কর্তৃক উত্থাপিত একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে রেজুলেশন পাশ করেন।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়ে বাংলাকে নিয়ে গেছেন বিশ্ব পরিমণ্ডলে। আর সেই দিনটিকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০১৯ সাল থেকে নিউ ইয়র্ক স্টেট কর্তৃক পালিত হয়ে আসছে বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে হিসাবে। বিশ্বজিত সাহার আবেদনে নিউ ইয়র্ক স্টেট স্যানেটর স্ট্যাভেস্কি কর্তৃক উথাপিত রেজুলেশনটি নিউ ইয়র্ক আইন পরিষদে অন্তর্ভুক্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক স্টেটের সিনেটে বিশ্বজিত সাহার প্রস্তাবে সিনেটর হােজে পেরাল্টা কর্তৃক আনীত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটিকে আইন পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করে বিল পাস করা হয়। এটি ছিল নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
উপস্থাপিত ‘আন্তর্জাতিক বলয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন’ প্রবন্ধে বিশ্বজিত সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির পেছনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালামের গড়া মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড এর অবদানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাঙালিদের অহঙ্কারের একটি বিষয়ও আজ সারা বিশ্বে সমাদৃত। তা হলাে জাতিসংঘের সামনে একুশের অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালিরা ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাত ১২-০১ মিনিটে জাতিসংঘের সামনে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে ১৯৯২ সাল থেকে।
উপস্থাপিত প্রবন্ধে বিশ্বজিত সাহা আরও বলেন, ৩০ বছর আগে ১৯৯২ সালের শুরুতে ২৫/২৬ বছরের কয়েকজন তরুণ উডসাইডে একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আন্তর্জাতিক বলয়ে একুশ উদযাপন করবে। সেই থেকে শুরু জাতিসংঘের সামনে একুশ উদযাপনের প্রথম প্রহর৷ মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক ও বাঙালির চেতনা মঞ্চ আয়ােজক হিসেবে থাকবে।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠের শুরুতে জাতিসংঘের সামনে একুশ উদ্যাপন শীর্ষক এক তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। প্রবন্ধ পাঠ শেষে আলোচনায় অংশ নেন ইকবাল হাসান, তাজুল ইমাম এবং ইউসুফ রেজা। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দে।