Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
November 22, 2024
হেডলাইন
Homeপ্রধান সংবাদআমেরিকার হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র কোনটি?

আমেরিকার হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র কোনটি?

আমেরিকার হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র কোনটি?

আমেরিকার হাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র কি? ক্রুজ মিসাইল? ড্রোন? পারমাণবিক বোমা? মোটেও না। আমেরিকার হাতে সত্যিকার অর্থে যে মারাত্মক অস্ত্রটি রয়েছে সেটি হলো তার ডলার।
 
যেহেতু বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই ডলারের কেনাবেচা করে থাকে। তাই অন্যান্য সকল দেশের ওপরই অর্থনৈতিক আধিপত্য করছে আমেরিকা। চাইলেই কোনও দেশের ওপর সে চাপিয়ে দিচ্ছে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। এটি আমেরিকার অর্থনৈতিক যুদ্ধের হাতিয়ার, যার মাধ্যমে সে তার অপছন্দের দেশকে পঙ্গু বানিয়ে রাখে। পারস্যের দেশ ইরান এই নিষেধাজ্ঞার সর্বশেষ শিকার।
 
এই যুদ্ধে আমেরিকার আরও একটি সুবিধা হলো সুইফট (SWIFT) নেটওয়ার্ক। বিশ্বের বেশিরভাগ বাণিজ্যিক লেনদেন নিউইয়র্ক থেকে চালিত হয় এই সুইফটের মাধ্যমে। ফলে কোনও দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলে, সেই দেশ আর এই সুইফট ব্যবহার করতে পারে না। ফলে তার বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য থেমে যায়।
 
আমেরিকার এই খামখেয়ালী সর্বগ্রাসী ক্ষমতার বিরুদ্ধে এখন সোচ্চার হচ্ছে বিভিন্ন দেশ। তারা এই একচ্ছত্র ব্যবস্থার বাইরে চলে যাবার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ তারা ডলার ছেড়ে অন্যান্য মুদ্রায় বাণিজ্য করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তৈরি করেছে সুইফটের মতো বিকল্প লেনদেন নেটওয়ার্ক।
 
নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অন্যের ওপর যে চাপ তৈরি করে আমেরিকা তার একটা বড় উদাহরণ হচ্ছে ২০১৮ সালে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দেয় রাশিয়ান অ্যালুমনিয়াম কোম্পানি রুসালের (RUSAL) ওপর। ফলে রাতারাতি কোম্পানিটির আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়ে যায়। ধ্বস নামে তার বন্ডের মূল্যে।
 
এই মুহূর্তে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ওপর ৩০ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে আমেরিকা। ইরানের ওপর জানুয়ারি ১০ তারিখে একটি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে, যা ইরানকে কয়েক বিলিয়ন ডলার থেকে বঞ্চিত করবে। মাত্র কয়েকদিন আগে ইরাককে হুমকি দিয়েছে যে, ইরাক আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে ডলার জমা রেখেছে তা সে ব্যবহার করতে পারবে না। অর্থাৎ তা ফ্রিজ করে দেবে। এর ফলে ইরাক তার তেল বিক্রির টাকা ব্যবহার করতে পারবে না।
 
বাণিজ্যে লেনদেন ক্লিয়ারিং নেটওয়ার্ক ‘চিপস’ (CHIPS) যার পুরোটাই আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে। এর মাধ্যমে প্রতিদিন ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের লেনদেন নিষ্পত্তি হয়। কোনও দেশ বা কোম্পানিকে এই নেটওয়ার্কের বাইরে পাঠিয়ে দিলে তাদের আর লেনদেন করার উপায় থাকে না।
 
এইসব শক্তিশালী অস্ত্রকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর থেকে জোরেশোরে ব্যবহার শুরু করেছে। ইরান, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, ভেনেজুয়েলাসহ বহু দেশের ওপর প্রয়োগ করেছে এই অস্ত্র।
 
নিষেধাজ্ঞা অস্ত্র যে দেশের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হয়, শুধু তারাই ভোগান্তির শিকার হয় তা নয়, এর ফল অন্যরাও ভোগ করে। যেমন ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার ফলে ইউরোপের দেশগুলোও ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারছে না।
 
আর এসব কারণেই অনেক দেশ এই ডলার ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। জুন মাসে চীন এবং রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে তারা তাদের নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য করবে। ইরান, মালয়েশিয়া, তুরস্ক এবং কাতার বলেছে তারা ডিজিটাল মুদ্রায় ব্যবসা করবে।
 
রাশিয়া আরও এক ধাপ এগিয়েছে। সে তার আর্থিক ব্যবস্থাকে ডি-ডলারাইজেশন বা ডলার ব্যবস্থা থেকে বের করে আনার চেষ্টা করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ডলারের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। আমেরিকান ট্রেজারি বিল কেনা কমিয়েছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার থেকে মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলারে।
 
ব্রিটেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ বলেছে, ডলার কেন্দ্রিক মুদ্রা ব্যবস্থা টিকবে না। রাশিয়া তার দেনাগুলোকে ডলার থেকে বের করে এনে অন্য মুদ্রায় রূপান্তরিত করছে। চীনের মুদ্রা ইউয়ানে বন্ড ছাড়ার চিন্তা করছে।
 
২০১৯ সালে রাশিয়া তার রপ্তানির ৬২ শতাংশ লেনদেন সুরাহা করে ডলারে। অথচ মাত্র ছয় বছর আগে তার ৮০ শতাংশ লেনদেন ডলারে নিষ্পত্তি হতো।
 
রাশিয়ার বড় তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রশনেফ তার সকল কাজ ইউরোতে দরপত্র ডাকা শুরু করেছে। রাশিয়ার সবচেয়ে বড় গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম ইউরোপে তার একটা গ্যাস চালান নিজস্ব মুদ্রা রুবলে পাঠিয়েছে।
 
চায়নাও এখন রাশিয়ার পথে হাঁটার চিন্তা করছে। আমেরিকার সঙ্গে তার বেশ কয়েকটি তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। টেলিফোন কোম্পানি হুয়াওয়ে নিয়ে যে নিষেধাজ্ঞা তা চায়নাকে যথেষ্ট ভুগিয়েছে। গত অক্টোবর থেকে চীনের আইটি টেকনোলজি কোম্পানির ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা আছে। চীনের কোম্পানিগুলোকে নিউইয়র্ক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত করতে দেবে না বলে হুমকি দিয়েছে আমেরিকা।
 
চীন নিজের মুদ্রা ইউয়ানকে বিশ্ব বাণিজ্যের মুদ্রায় উন্নত করার প্রথম চেষ্টা নেয় ২০০৭-০৯ অর্থনৈতিক মন্দার পর। বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে তার মুদ্রা বিনিময়ের চুক্তি করে। কিন্তু বাণিজ্যে ইউয়ানের ব্যবহার তেমন জমেনি। বিশ্ব বাণিজ্যের মাত্র দুই শতাংশ হয় ইউয়ানের মাধ্যমে। কিন্তু থেমে থাকেনি চীন। সে তার নিজস্ব পেমেন্ট ব্যবস্থা তৈরি করেছে। ভারত ও চীন এখন সুইফটের বিকল্প খুঁজছে।
 
বিশ্বের অনেক লেনদেনই এখন চীনের আলিপের (Alipay) মাধ্যমে হচ্ছে। ৫৬টি দেশে আলিপে চালু আছে। চীন এখন তার দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোকে নিউইয়র্কে স্টক এক্সচেঞ্জে নয় বরং সাংহাই এবং হংকং এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহ দিচ্ছে।
 
চায়নার কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা চালু করতে চাইছে। এমনকি ব্রিকস-এর (BRICS) বা (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা) এখন অভিন্ন ডিজিটাল মুদ্রা চালুর কথা ভাবছে।
 
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও ডলার থেকে বের হওয়ার কথা বলছে। এর পেছনে একটি বড় যুক্তি হলো- ইইউ’র মাত্র দুই শতাংশ আমদানি হয় আমেরিকা থেকে।
 
আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পরেও ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যের চেষ্টা করছে ইউরোপ। আর এই উদ্দেশ্যে ইন্সটেক্স (Instex) নামে নিজস্ব ক্লিয়ারিং হাউজ তৈরি করেছে। এর ফলে ডলার এবং সুইফট সিস্টেমের বাইরে থেকেই বাণিজ্য করা সম্ভব। বর্তমানে ব্রিটেন, ফ্রান্স আর জার্মানি আছে ইন্সটেক্সে। কিন্তু গত নভেম্বরে আরও ছয়টি ইউরোপীয় দেশ এতে যোগ দেবার ঘোষণা দিয়েছে।
 
এবাবেই আমেরিকার স্বৈরাচারী আচরণের ফলে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা।
Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment