ইউরোপে দাবানল এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দাবানল এখনো অব্যাহত রয়েছে। প্রচণ্ড দাবদাহ এসব এলাকার খরা পরিস্থিতিকে তীব্র করে তুলেছে। ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায় তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গ্রিস, স্পেন ও ইতালিতে এখনো ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রচণ্ড দাবদাহে বিপর্যস্ত পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর জনগণের জন্য আরও দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে জাতিসংঘের নতুন ঘোষণা। জাতিসংঘ গত মঙ্গলবার দাবদাহ নিয়ে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে বলেছে, ইউরোপে এখন যে দাবদাহ চলছে, তা আরও নিয়মিত আর স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। এ প্রবণতা চলবে অন্তত ২০৬০-এর দশক পর্যন্ত। বিবিসির
বিবিসি জানিয়েছে, ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়াবহ দাবানল নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। তবে দাবদাহ উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জার্মানির নদীগুলোতে পানির স্তর নামতে শুরু করেছে। এতে সেখানে জলপথ ব্যবহারে সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্রিসে দাবদাহ অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী এথেন্সের উত্তর-পূর্বে মাউন্ট পেন্টেলিতে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ শতাধিক কর্মী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবানল নিয়ন্ত্রণে তিনটি উড়োজাহাজ ও চারটি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, ওই এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের যত গাড়ি ছিল, সব দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ওই এলাকা থেকে শত শত লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গেরাকাস এলাকার ৩০ হাজারের বেশি লোকজন রয়েছেন। সেখানকার হাসপাতালও খালি করা হয়েছে।
ফ্রান্সে দাবানল কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো পরিস্থিতি ভয়াবহ। দেশটির জিরোন্ড এলাকায় সৃষ্ট দাবানল নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। তবে সেখানে দাবানল কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। জিরোন্ডের লা তেস্তে-দা-বুচ শহরের মেয়র বলেন, দাবানল নিয়ন্ত্রণে পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে। কিন্তু পরিস্থিতি আবার বদলেও যেতে পারে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর গতকাল বুধবার ওই এলাকা সফর করার কথা।
স্পেনও একাধিক দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। জামোরা প্রদেশের একটি দাবানল নিয়ন্ত্রণে এলেও উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলের গ্যালিসিয়া এলাকার দুটি বড় দাবানল এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গ্রেডোস পর্বতমালার একটি দাবানল মাদ্রিদ অঞ্চলের দিকেও ছড়িয়ে পড়ছে। অ্যারাগন অঞ্চলে ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর বনভূমি পুড়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ গতকাল ওই অঞ্চল সফর করেছেন।
এদিকে গত কয়েক দিনে ইতালিতেও দাবানল ছড়িয়েছে। এতে রোম ও ফ্লোরেন্স শহরের মধ্যে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়েছিল। জার্মানির দিকে দাবদাহ ধেয়ে যাওয়ার ফলে সেখানে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যাবে বলে সতর্ক করেছে দেশটির আবহাওয়া অফিস। দেশটিতে গরম আবহাওয়ার কারণে যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। রাইন ও দানিয়ুব নদীতে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কার্গো চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বেলজিয়ামে বজ্র ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) বলছে, বায়ুমণ্ডলে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে, এমন দেশগুলোর জন্য বর্তমান তাপপ্রবাহটি একটি সতর্কসংকেত। ডব্লিউএমওর প্রধান পেত্তেরি তালাস জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটা (দাবদাহ) আরও বেশি স্বাভাবিক ও নিয়মিত হয়ে উঠবে এবং নেতিবাচক এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। অন্তত ২০৬০-এর দশক পর্যন্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা তাপমাত্রার একের পর এক রেকর্ড ভাঙছি। ভবিষ্যতে এমন দাবদাহ স্বাভাবিক হতে যাচ্ছে। এমনকি এর চেয়ে আরও বেশি দাবদাহ দেখতে হতে পারে আমাদের।’
পেত্তেরি তালাস আরও বলেছেন, ‘কার্বন নিঃসরণ এখনো বাড়ছে। আমরা যদি কার্বন নিঃসরণকে একটা সীমার মধ্যে নিয়ে আসতে না পারি, তাহলে ২০৬০-এর দশকে তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকতে পারে। বিশেষ করে এশিয়ার বড় দেশগুলোকে তাদের কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। কারণ, এসব দেশ বড় কার্বন নিঃসরণকারী।’
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে চলমান প্রচণ্ড দাবদাহ নিয়ে জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সঙ্গে যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে ডব্লিউএমও। ডব্লিউএইচওর স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক পরিচালক মারিয়া নেইরা বলেন, ইউরোপে ২০০৩ সালের দাবদাহে ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।
মারিয়া নেইরা বলেন, ‘আমাদের শরীরে তাপমাত্রা ঠিক রাখার যে সক্ষমতা, এই তাপ শরীরের সেই সক্ষমতা কমিয়ে দেবে। এতে নানা রোগে আক্রান্ত হবে মানুষ।’