কয়েক দশকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক তলানিতে
বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯ বিশ্বের ২১০ টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার মানুষের। করোনা মোকাবেলায় দুই বৃহৎ পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে এমন প্রত্যাশা ছিল বিশ্ববাসীর। কিন্তু এই ইস্যুতে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি সুরক্ষার জন্য যখন দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে সহযোগিতা অনেক বেশি প্রয়োজন তখন তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটল।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসের বিস্তার।করোনার আঁতুরঘর চীনে এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে এলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মহামারী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানে যুক্তরাষ্ট্রের আশপাশেও নেই কোনও দেশ।রোজ মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছেন হাজারো মানুষ।আক্রান্ত হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ।
করোনাভাইরাসে প্রাণহানি ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান রাখা আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াল্ড-ও-মিটারের তথ্যানুযায়ী, সোমবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত করোনাভাইরাসে ৮০ হাজার ৭৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৬৩৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ১ হাজার ৮১৬ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৬ জন।আক্রান্তদের মধ্যে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১২৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩৩৬ জন চিকিৎসাধীন।
এমতাবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনার বিস্তারের জন্য চীনকে দায়ী করেছেন।তার দাবি, চীনের ল্যাব থেকেই করোনার বিস্তার। তিনি করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চীনের ব্যর্থতাকে ক্রমাগত দায়ী করে আসছেন। তবে চীন বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করছে।
এদিকে নির্বাচনী বছরে মার্কিন অর্থনীতিতে বড় রকমের মন্দা দেখা দেয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দায়ভার চীনের উপর চাপানো চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ খোদ মার্কিন বুদ্ধিজীবিদের। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য চীনকে তিনি দায়ী করছেন। করোনাভাইরাসের মহামারীতে এরইমধ্যে কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এজন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছেন। এছাড়া, চীনের সঙ্গে কঠোর বাণিজ্য নীতি গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন তিনি। শুধু তাই নয় মার্কিন মিত্রদেরকেও চীনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণের জন্য উৎসাহিত বা চাপ সৃষ্টি করছেন।
প্রথম দিকে করোনাভাইরাসকে গুরুত্ব না দেয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করছেন দেশটির রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা।সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ট্রাম্পের করোনা নীতিকে চরম বিশৃংখল বলে মন্তব্য করেছেন।
অন্যদিকে মহামারী কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতাকে সামনে এনে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা রাজনীতি বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রথম দিকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা অস্বীকার করে মার্কিন নাগরিকদের পিঠে ছুরি মেরেছেন।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজের এমন মনোভাবের কথা জানান চমস্কি। সোমবার এটি প্রকাশিত হয়েছে।
খ্যাতনামা এ ভাষাতাত্ত্বিক বলেন, আগামী নির্বাচনে নিজের জয়ের সম্ভাবনা বাড়াতে এবং বড় ধরনের ব্যবসা ধরতে করোনাভাইরাস মহামারীকে ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প। এজন্য তিনি হাজার হাজার মার্কিনির মৃত্যুর জন্য দায়ী।
যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে কমপক্ষে গত এক শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন চমস্কি। বলেন, এ সময়ে দেশের ত্রাণকর্তা হওয়ার ভান করে সাধারণ মার্কিনিদের পিঠে ছুরি মেরেছেন ট্রাম্প।
চলতি বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবেন ট্রাম্প। নোয়াম চমস্কির অভিযোগ, সম্পদশালী কর্পোরেশনগুলোর সুবিধার জন্য সংক্রামক রোগের স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণার জন্য সরকারি অর্থ ব্যয় হ্রাস করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
‘ট্রাম্প তার মেয়াদের প্রত্যেক বছরই স্বাস্থ্যসেবার খাতের বাজেট আরও কমিয়েছেন। সুতরাং তার পরিকল্পনা হচ্ছে, এ খাতের তহবিল আরও কর্তনের মাধ্যমে জনগণকে যতটা সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত করা। যেন এতে করে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাইমারি বা প্রাথমিক বাছাইয়ে সম্পদ ও কর্পোরেট শক্তির দিক থেকে নিজের সংগঠকদের আরও লাভবান করে তোলা যায়।’
মানবতার পক্ষের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত এ দার্শনিক বলেন, বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নরদের করোনা মোকাবেলার দায়িত্ব নিতে বাধ্য করে ট্রাম্প তার নিজের দায়িত্ব পরিত্যাগ করেছেন। এটি বিপুল সংখ্যক মানুষকে খুন করা এবং নিজের নির্বাচনী রাজনীতিতে সুবিধা পাওয়ার জন্য একটি দুর্দান্ত কৌশল।
করোনাভাইরাসে হাজার হাজার আমেরিকানদের মৃত্যুর জন্য ট্রাম্প দায়ী কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে চমস্কি বলেন, ‘হ্যাঁ! তবে বাস্তবতা এর চেয়েও খারাপ। কারণ এটি আন্তর্জাতিকভাবেও প্রযোজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের বিরুদ্ধে নিজের অপরাধ ঢাকতে তিনি বলির পাঁঠা খোঁজার চেষ্টা করছেন।◉