করোনাভাইরাসে ভারতে ১ দিনে মারা গেছে ৩৫ জন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃত্যু ১৬৪।
আক্রান্ত প্রায় ৬ হাজার। দেশটিতে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় চলমান লকডাউন বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে আসছিল বিভিন্ন রাজ্য সরকার।
বুধবার দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তাতে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আদৌ লকডাউন প্রত্যাহার করা সম্ভব নয় এবং তা যুক্তিসঙ্গতও হবে না। বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য দলের নেতারাও একই মত দেন।
ভারতে করোনাভাইরাসের সামাজিক সংক্রমণ রুখতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৪ মার্চ দেশব্যাপী ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন, যা ১৪ এপ্রিল শেষ হবে।
কিন্তু ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় বেশ কয়েকটি রাজ্যের অনুরোধে সরকার লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে।
বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর পক্ষে মত দেয়। তেলেঙ্গানা রাজ্য এক জরিপ সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে লকডাউন ৩ জুন পর্যন্ত বাড়াতে বলে।
রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী কেটি রামা রাও মঙ্গলবার এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, ওই জরিপে রাজ্যটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ১ জুন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে।
শুধু রাজ্যগুলোই নয় একাধিক বিশেষজ্ঞ কেন্দ্রীয় সরকারকে একই পরামর্শ দিয়েছেন। নরেন্দ্র মোদিও তৈরি ১১ জনের বিশেষ কমিটিকে সেসব পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যেখানে বেশির ভাগেরই মত লকডাউন বাড়ানোর দিকে।
বুধবার ভিডিও কনফারেন্সে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এতে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন তারা।
বৈঠকে সব জাতীয় ও আঞ্চলিক দলের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত জানানোর পর মোদি মত দেন। তিনি বলেন, লকডাউন তুলে নেওয়া মোটেই সহজ ব্যাপার নয়, বরং লকডাউন এবং সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংই একমাত্র পথ যা দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলা করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, গোটা বিশ্বের প্রায় সব দেশই লকডাউন এবং সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংয়ের পথে হাঁটছে। আপনারাও (অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা) পরামর্শ দিয়েছেন লকডাউন তুলে নেওয়া ঠিক হবে না। ধাপে ধাপে এর থেকে বেরতে হবে।
তাছাড়া জেলা প্রশাসকদের থেকে সরকার যে রিপোর্ট পাচ্ছে, তাতেও বোঝা যাচ্ছে এখনই লকডাউন তুলে নেওয়া উচিত নয়। মোদি জানান, শনিবার এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি আবার কথা বলবেন।
সরকারের মধ্যেও উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে আলোচনা হবে। তারপর সরকার জানাবে যে আগামী দিনে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভারতের আসাম ও ছত্তিশগড়ও সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই চলাকালে তাদের রাজ্য সীমান্ত বন্ধ রাখতে চায় বলে জানিয়েছে। মঙ্গলবার কয়েকজন মন্ত্রী নিজেরা আলোচনা করার পর ভারতজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরও ৪ সপ্তাহ বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছেন। পাশাপাশি ধর্মীয় জমায়েত ও সব ধরনের সভার ওপরও নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৯১ হয়েছে। সেখানে ৭টি হটস্পট ঘোষণা করা হয়েছে। পুনেতে বুধবার দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
সেখানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০। মুম্বাইয়ের ধারাভি বস্তিতে নতুন করে আরও দুজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯। মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার। দিল্লি পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কাশ্মীরে নতুন করে ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৫।
ভারতে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমন্বয়কের ভূমিকা পালনকারী সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের (আইসিএমআর) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি সামজিক দূরত্ব বজায় রেখে রীতি মেনে চললেও তাকে যদি কোয়ারেন্টিন করা না হয়, তাহলে ৩০ দিনে তার মাধ্যমে আরও ৪০৬ জন আক্রান্ত হতে পারেন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতজুড়ে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ৭০ শতাংশের রোগ লক্ষণ মাঝারি থেকে মৃদু এবং তাদের কোভিড-১৯-এর চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া দরকার হবে না।◉