করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস
৪ জুলাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এ জন্মদিনটি উদযাপন করেন আমেরিকানরা।
স্বাধীনতা দিবস উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় বিশাল জনসমাবেশ, কুচকাওয়াজ এবং কনসার্ট। চোখ ধাঁধানো আতশবাজি আর সমুদ্র তীরে থাকে লক্ষ জনতার ভীড়। ঘরে ঘরে চলে বারবিকিউ আর আনন্দ আয়োজন।
কিন্তু এবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে করোনা মহামারী। এ মুহুর্তে স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ে দেশটি। তাই এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন। করোনার ভয়াল থাবায় ম্লান হয়েছে উৎসবের সব আয়োজন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবারের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন।
গত কয়েক সপ্তাহে দেশটিতে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে হু হু করে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে কয়েকটি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি। এ অবস্থায় চরম উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এরমধ্যে এবারের স্বাধীনতা দিবস সীমিত পরিসরে উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে এ বছরে স্বাধীনতা দিবস উৎসবের বিভিন্ন আয়োজন আগের মতো হচ্ছে না।
প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনে স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে সাজানো হয়েছে রঙিন সাজে। এই ভাস্কর্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রর প্রতীক। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে যে স্ট্যাচু অব লিবার্টি উঁচু করে মশাল ধরে আছে তার নকশা, পরিকল্পনা এমনকি অর্থ সংগ্রহও হয়েছে ফ্রান্সে। আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক পুরনো মিত্র ফ্রান্স। ফ্রান্স বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে উপহার দিয়েছে এই ভাস্কর্যটি।
বাংলাদেশ স্বাধীন করতে যেমন ৩০ লক্ষ বীর তাদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন ঠিক তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ। দেশটির স্বাধীনতার জন্য জীবন দেন ২৫ হাজার আমেরিকান এবং ২৭ হাজার ব্রিটিশ ও জার্মান সেনা।
আবার বাংলাদেশের বিজয় ও স্বাধীনতা দিবসের মতোই আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসটিও যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দিবসটি উদযাপন করে থাকেন নানা আয়োজনে।
২৪৪ বছর আগে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই ইংল্যান্ডের শাসন থেকে পৃথক হওয়ার জন্য ভোট দেন আমেরিকার দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস। এর দুইদিন পর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় কংগ্রেস। কিন্তু পৃথক হতে ব্রিটেনের সঙ্গে চূড়ান্ত স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত ২ আগস্ট হলেও প্রতি বছর ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে যুক্তরাষ্ট্র।
স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৩টি উপনিবেশ একসঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। ভার্জিনিয়া উপনিবেশের জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন প্রধান সেনাপতি। এরই মধ্যে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ।
আর সেই যুদ্ধে উপনিবেশগুলোর বিজয়ের প্রাক্কালে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পর পাঁচজনের একটি কমিটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করেন।
এ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন টমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস ও বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। তবে টমাস জেফারসন ছিলেন মূল লেখক। কংগ্রেসে বিতর্ক শেষে ঘোষণাপত্রটি চূড়ান্ত করা হয়। ঘোষণাপত্রটি কংগ্রেসের অনুমোদন পায় ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই।
ব্রিটিশ অরাজকতা থেকে মুক্ত হতে ‘প্রতিটি মানুষই সমান এবং একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি’এই বাণীকে সামনে রেখে থমাস জেফারসন লিখলেন স্বাধীনতার অমর বাণী। আমেরিকার স্বাধীনতা লাভের যুদ্ধ মুলত: শুরু হয় ১৭৭৫ সালে। আর তা চলে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত।
বিপ্লবী যুদ্ধের শুরুটা ব্রিটিশ বাহিনী ও উপনিবেশের স্থানীয় সশস্ত্র বাসিন্দাদের মধ্যে একটি ছোট খণ্ডযুদ্ধের মাধ্যমে। খণ্ডযুদ্ধটি সংঘটিত হয় ১৭৭৫ সালের ১৯ এপ্রিল। এই যুদ্ধের ফলে অন্যান্য স্থানেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এই যুদ্ধে ২৫০ জনের বেশি ব্রিটিশ সেনা হতাহত হয়। নিহত হয় ৯৩ জন বিপ্লবী আমেরিকান। বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশরা সেনা জমায়েত করে।
মার্কিন বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে তারা বিজয় অর্জন করে। স্বাধীনতা দিবস জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব নাগরিকরাই এ দিবসটি গভীর আবেগ ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদ্যাপন করে থাকেন। করোনা তাণ্ডবে লণ্ড ভণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা এবার মুক্ত আকাশে তাদের স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ প্রকাশ সীমিত করলেও নেই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কোনও সীমাবদ্ধতা।⛘