Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
December 21, 2024
হেডলাইন
Homeআন্তর্জাতিকক্ষমতা ভাগাভাগিই লেবাননের দুর্ভোগের একমাত্র সমাধান

ক্ষমতা ভাগাভাগিই লেবাননের দুর্ভোগের একমাত্র সমাধান

ক্ষমতা ভাগাভাগিই লেবাননের দুর্ভোগের একমাত্র সমাধান

খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেনে লেবাননের নাম আছে মোট ৭১ বার। লেবাননের বর্তমান ভূসীমা ১৯২০ সালে ফ্রান্সের হাতে তৈরি হলেও ঐতিহাসিক বিবেচনায় এই ভূমি অনেক পুরনো।

গত এক শতকে লেবাননের জনগণ দুটি গৃহযুদ্ধ, দুবার বিদেশি আগ্রাসন ও বহু প্রাকৃতিক দুর্যোগময় পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে। এছাড়া দুর্নীতি ও স্বাধীনতা খর্ব করার মতো অনেক ঘটনা তো আছেই। দেশটির শাসকরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফর্মুলায় দেশ চালাতে চেয়েছেন।

লেবাননে একদিকে যেমন লেবানিজদের বসবাস। তেমনি খ্রিস্টান, দুর্জে, সুন্নি ও শিয়া মুসলিমদের বাস রয়েছে। সরকারিভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলা হলেও দেশটিতে জাতিতে জাতিতে রয়েছে ব্যাপক বিভেদ।

১৯২০ সালে ফরাসি জেনারেল হেনরি গৌরাদ, ক্যাথলিক প্যাট্রিয়াচ ইলিয়াস হোয়ায়েক ও সুন্নি গ্রান্ড মুফতি মুস্তফা নাজা মিলিতভাবে বর্তমান লেবাননের ভৌগোলিক সীমা নির্ধারণ করেন। এর আগ পর্যন্ত ওই অঞ্চলটি মূলত খ্রিস্টান শাসিতই ছিল।

নতুন ভৌগোলিক সীমারেখার পরও খ্রিস্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠই ছিল। কিন্তু তাদের শতাংশ ৮০ থেকে কমে ৫৫-তে দাঁড়ায়। ১৯৪৩ সালে লেবানন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা পায়। দেশটির পার্লামেন্ট শিয়াদের দখলে, প্রশাসন চালায় সুন্নিরা। সম্প্রদায়ভিত্তিক ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্রে কোনও লিখিত দলিল না থাকায় লেবানন শুরু থেকেই খেসারত দিয়ে আসছে।

ফ্রান্স মনে করে, তিনটি শীর্ষস্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে দেওয়াই লেবাননের জন্য নিরাপদ। এই তিন সম্প্রদায় থেকে মোট ১৮ জনকে বিশেষ কিছু পদে বসিয়ে দেশের গণতন্ত্র নিশ্চিত করার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু কোনও সম্প্রদায়ই অতটা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় যে অন্য সম্প্রদায়ের ওপর আধিপত্য করবে। ফলে এদের মধ্যে ঠোকাঠুকি লেগেই থাকে ক্ষমতা নিয়ে। তারপরও দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেন মূলত খ্রিস্টান ও মুসলিম অভিজাতরা।

খ্রিস্টানরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পশ্চিমা রক্ষকদের দূরে রাখার। আর মুসলিমরা প্রতিশ্রুতি করেছিলেন সিরিয়া থেকে দূরে থাকার। কিন্তু ১৯৮৯ সালে সৌদি আরব তায়েফ চুক্তি ভঙ্গ করে। এর ফলে সিরিয়া ও ইসরায়েল আগ্রাসন শুরু করে লেবাননের ওপর। এরপর থেকেই মূলত লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল ও সাউদ লেবানিজ আর্মি ও মিত্ররা।

প্রায় চার দশকের বেশি সময় লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা ছিল দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে। ২০০৫ সালে লেবানন থেকে সিরিয়ার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর তারা বৈরুতের রাজনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে পেছনের দরজা দিয়ে। লেবাননের ব্যবসায়ী-রাজনীতিক ওয়ালিদ জুম্বলাত ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিব্রান বাসিলের মতো ব্যক্তিরা সিরিয়ায় নিজেদের ব্যবসায়িক মুনাফা দেখতে পান।

যদিও তখন দেশে হিজবুল্লারা ইরানের নির্দেশ পালন করতে শুরু করেছে এবং সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে শুরু করে। এসবের ফলে ধীরে ধীরে লেবাননের তৃণমূলে দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও হতাশা বাড়তে থাকে। সাম্প্রদায়িক দুর্নীতিগুলোকে সরকার ধামাচাপা দিতে শুরু করে। পঞ্জি স্কিমের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে বের হয়ে যায়।

২০১৮ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর মিলিশিয়া ও অউনের মধ্যে চুক্তি হয়। আর এই চুক্তি হয় ২০১৭ সালের নতুন ইলেক্টোরাল আইনের অধীনে। এই আইনে হিজবুল্লাহর জন্য যথেষ্ট জায়গা রাখা হয়। ফলে দেশে শিয়া আধিপত্য বাড়তে থাকে, যা অন্য সম্প্রদায়গুলো মানতে বাধ্য হয়। এতে দীর্ঘ সময় ধরে লেবাননে সব সম্প্রদায়কে নিয়ে দেশ গঠনের যে চিন্তা ছিল তাতে ছেদ পড়ে।

সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদেশি প্রভাব বাড়তে শুরু করে। সম্প্রতি বৈরুত বিস্ফোরণের পর তো নাগরিকদের একাংশ সরাসরিই ফ্রান্স সরকারের কাছে দাবি জানায় লেবাননের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। সামগ্রিক জনসংখ্যার তুলনায় এই দাবী জানানো মানুষের সংখ্যা কম হলেও তাদের কণ্ঠস্বরকে অবহেলা করা যাচ্ছে না।❐

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment