Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
April 25, 2024
Homeবাংলাদেশখুন করে আয়াতের লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয় সাগরে

খুন করে আয়াতের লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয় সাগরে

খুন করে আয়াতের লাশ ভাসিয়ে দেয়া হয় সাগরে

চট্টগ্রামে আলিনা ইসলাম আয়াতকে হত্যার পর লাশ ছয় টুকরা করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১০ দিন আগে থেকে নিখোঁজ থাকা এই শিশুকে খুঁজতে গিয়ে সন্দেহভাজন খুনির সন্ধান পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সেই সন্দেহভাজনই জানান, শিশুকে অপহরণ, হত্যা ও লাশ কেটে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার তথ্য। তার তথ্যের ভিত্তিতে পিবিআই শিশুটির জুতা, লাশ কাটায় ব্যবহৃত বটি, এন্টিকাটার ও গামছা উদ্ধার করেছে।

চাঞ্চল্যকর এই খুনের ঘটনা ঘটেছে ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকার নয়াহাট বিদ্যুৎ অফিসের অদূরের আয়াস মুন্সির বাড়ির একটি ভবনের নিচ তলায়। হত্যার অভিযোগে আবির আলী (১৯) নামের এক যুবককে আটক করার পর হত্যারহস্য উম্মোচিত হয়েছে।

হত্যার শিকার আলিনা ইসলামের বাবা সোহেল রানা নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার উলপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে পরিবার নিয়ে মহানগরীর নয়ারহাট এলাকায় বাস করেন।

গ্রেপ্তার আসামি মো. আবির আলীর বাবার নাম মো. আজহারুল ইসলাম। তিনি রংপুরের তারাগঞ্জ থানার হরিরামপুর জুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা। আবির মায়ের সঙ্গে নেভী হাসপাতাল এলাকার ভাড়া বাসায় বাস করেন। এই ভাড়া বাসার মালিক আয়াতের বাবা সোহেল রানা।

এই বিষয়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, গত ১৫ নভেম্বর ইপিজেড থানার বন্দরটিলার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় জিডি করেন তার বাবা সোহেল রানা। সেই জিডির সূত্র ধরে পিবিআই অনুসন্ধান করছিল। নিখোঁজ আয়াতের সন্ধান করতে গিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে আবির আলীকে আটক করে পিবিআই।

পরে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে আয়াতকে হত্যা করে লাশ ছয় টুকরো করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা জানায় আবির। আবিরের দেওয়া তথ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে এই হত্যায় ব্যবহৃত গামছা, লাশ কাটায় ব্যবহৃত বটি, এন্টিকাটার ও আয়াতের জুতো উদ্ধার করে পিবিআই। এছাড়াও লাশ কাটার পর গন্ধ দূর করতে ব্যবহার করা পাউডার ও পারফিউমও জব্দ করা হয়েছে। তবে লাশের খণ্ডিত কোন অংশ এখনো পাওয়া যায়নি। পিবিআই মরদেহের খণ্ডিতাংশ পাওয়ার জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

এই বিষয়ে পিবিআইয়ের পরিদর্শক ইলিয়াস খান বলেন, ‘আয়াতদের বাড়ির নিচতলায় ভাড়াটিয়া ছিল আবিরের পরিবার। মাস তিনেক আগে আবিরের বাবা-মা আলাদা হয়ে যান। এরপর আবির মা ও বোনসহ নতুন বাসায় গিয়ে উঠে। কিন্তু আবিরের বাবা আগের বাসায় বাস করছিলেন। আবির বাবার বাসা থেকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন মালামাল নতুন বাসায় নিয়ে যায়।’

আবিরকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আবির এখন কর্মহীন। তার টাকার দরকার। এই কারণে আয়াতকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতে চেয়েছিল। গত ১৫ নভেম্বর বিকেল ৩টায় আয়াতকে তার বাড়ির সামনে থেকে ধরে মুখ চেপে নিয়ে যায় বাবার বাসায়। এসময় কান্নাকাটি করায় গামছা দিয়ে মুখ চেপে তাকে হত্যা করে। এরপর দুটি ট্রলি ব্যাগের একটিতে কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে আয়াতের লাশ ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় আবির। ওই সময় সে আয়াতের মাকে বলে যায়, এই বাসা থেকে তার মালামাল নেয়া শেষ। সেখান থেকে এক বন্ধুকে ডেকে একটি ব্যাগ রিকশায় তুলতে সাহায্য করতে বলে আবির। যে ব্যাগে আয়াতের লাশ ছিল, সেটি সে নিজেই রিকশায় তুলে। যাওয়ার পথে আকমল আলী রোডের কাঁচা বাজার থেকে স্কচ টেপ, পলিথিন, এন্টিকাটার কিনে। বাসায় গিয়ে সানসেটে ব্যাগটি রেখে সে আবার ফিরে আসে আয়াতদের বাড়িতে। সেখানে আয়াতের জুতো ভুলে ফেলে রেখে যায় সে। সেই জুতোগুলো আয়াতদের বাসার পাশের কবরস্থানে ফেলে দিয়ে আয়াতকে খোঁজায় তার স্বজনদের সঙ্গে অংশ নেয় আবির।’

ইলিয়াস খান বলেন, ওই দিন রাতে সাড়ে ১০টার দিকে আয়াতের পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আবিরের মা ও বোনকে আয়াতদের বাসায় পাঠায়। ওই সময়েই ফাঁকা বাসায় টয়লেটে আয়াতের লাশকে বটি দিয়ে কেটে ছয় টুকরো করে। টুকরোগুলো স্কচটেপ দিয়ে আলাদা আলাদা প্যাকেট করে পুনরায় সানসেটে রাখে। পরদিন সকাল ১০টার দিকে একটি হাতব্যাগে তিনটি খণ্ডিত দেহাংশ নিয়ে সাগর পাড়ে ভাটার পানিতে ফেলে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিনটি অংশ আকমল আলী রোডের স্লুইচগেট এলাকায় ফেলে।

এই ঘটনায় আয়াতদের পরিবার ইপিজেড থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে। ডায়েরির সূত্র ধরে শিশুর অনুসন্ধান চালাচ্ছিল পিবিআই। একপর্যায়ে সন্দেহের আওতায় আসে আবির। তাকে আটকের পর খুনের তথ্য পায় পুলিশ। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জুতো, গামছা, নেভী গেইটের নতুন বাসার সামনে একটি ডোবার মত জায়গা থেকে লাশ কাটায় ব্যবহৃত এন্টিকাটার উদ্ধার করা হয়। লাশের সন্ধানে সুইচগেট এলাকায় অভিযান চালালেও কিছু পাওয়া যায়নি। তবে বাসার ভেতরের সানসেট থেকে সোয়াপ সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই সোয়াপগুলো থেকে গন্ধ যাতে না ছড়ায় সেজন্য সেখানে পাউডার আর পারফিউমও ছিটিয়েছিল আবির। সেগুলোও জব্দ করা হয়েছে।

আবিরকে সন্দেহ করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইলিয়াস খান বলেন, ‘আয়াতের সন্ধানে কাজ শুরু করার পর আয়াতের সমবয়সী দুজন শিশু আমাদের জানিয়েছিলো ‘সর্বশেষ আয়াতকে কোলে নিয়েছিলো আবির। ওই কথাকেই সূত্র ধরেই তদন্ত এগিয়ে যায়। পরে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে আবিরকে দুটো ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখে তার বাসায় গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেই দুটা ব্যাগ কোথায় দেখতে চাইলে সে একটি ব্যাগ দেখাতে পারেনি। তারপরেই তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।’

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment