গৃহযুদ্ধের এক বছর: সুদানের কোথাও ‘আলো’ নেই
সুদানে গৃহযুদ্ধ এক বছর পার করল। দীর্ঘ সহিংসতার কারণে অব্যাহত মানবিক সংকট এখন আরও তীব্র। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, সুদানের লাখ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং সেখানে যে বিশাল মানবিক সহায়তা দরকার তা ক্রমাগত উপেক্ষা করছে বিশ্ববাসী। আরও বলা হচ্ছে, বিশে^র অন্যতম মারাত্মক মানবসৃষ্ট সংকট বিরাজ করছে এখানে। মোদ্দাকথা, এখনো এই সংকট সমাধানের কোনো আশার আলো নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলে, এ যুদ্ধে একটি অবিশ্বাস্যরকম জীবনের মূল্য দিতে হয়েছে। এতে ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এবং আনুমানিক ৩৩ হাজার জন আহত হয়েছে।
ডব্লিউএইচওর মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার গত শুক্রবার বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি বাস্তুচ্যুতি, রোগের প্রাদুর্ভাব ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের চাহিদা এবং খাদ্য ও পানির অভাবের কারণে গোটা জনগোষ্ঠীতে আরও বেশি লোকের মৃত্যু আসন্ন।
সুদানের জাতীয় সেনাবাহিনী এবং আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় নেমে গত বছর একে অপরের ওপর আক্রমণ শুরু করে। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, খুন, লুটপাট আর ধর্ষণের ঘটনা এখন লাগামছাড়া। হত্যা সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান এবং আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালোর অনুসারীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতিগোষ্ঠীগুলোকেও সম্পৃক্ত করেছে। এখন দুই জেনারেলের দ্বন্দ্ব জাতিগত সহিংসতার রূপ পেয়েছে।
হতাহতের বিপুলসংখ্যক ভুক্তভোগী পরিসংখ্যানের বাইরেই রয়েছে বলে মনে করে অনেক সংস্থা। গতকাল সোমবার এক বছর পূর্ণ করা এই সংকট অনেকটা মনোযোগের বাইরেও চলে গেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সংবাদে বলা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানবসৃষ্ট বিপর্যয়গুলোর মধ্যে একটি সৃষ্টি করেছে সুদানের যুদ্ধ।
ডব্লিউএইচওর ওই কর্মকর্তা জানান, ‘অনেক জায়গায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার বিশেষভাবে সীমাবদ্ধ। দারফুর এবং কর্দোফান দুর্গম। এই দুই জায়গা মানবিক সাহায্যের নাগাল থেকে বিচ্ছিন্ন।’
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, সুদানে প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এসব মানুষের অর্ধেকই শিশু। এক বছর আগে ১৫ এপ্রিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৮৬ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সুদানের অভ্যন্তরে ৬৬ লাখ মানুষ এবং ১৮ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় নিয়েছে।