চাঁদের দূরতম প্রান্তের উদ্দেশে চীনা রকেটের যাত্রা
চাঁদের দূরতম প্রান্ত থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য যাত্রা করেছে চীনের রকেট। চাঁদের ওই প্রান্তে যাওয়ার জন্য বিশ্বের প্রথম অভিযান বলা হচ্ছে এটিকে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।
এই মিশনেই পাকিস্তানের মহাকাশ কর্মসূচি প্রথম কোনো স্যাটেলাইট মহাকাশে যাত্রা করেছে। চাঁদের কক্ষ পরিভ্রমণের উদ্দেশ্যে স্যাটেলাইটটি চীনের হেনান মহাকাশ উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করেছে।
পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্পেস টেকনোলজির (আইএসটি) ওয়েবসাইট থেকে আইকিউব–কামার নামের স্যাটেলাইটটির উৎক্ষেপণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
চাঁদের কক্ষপথে স্যাটেলাইট পাঠানোর এই প্রকল্প পাকিস্তান শুরু করে ২০২২ সালে। ওই সময় চায়না ন্যাশনাল স্পেস এজেন্সি, এশিয়া প্যাসিফিক স্পেস কো–অপারেশন অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোকে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদে শিক্ষার্থীদের নির্মিত স্যাটেলাইট পাঠানোর সুযোগ করে দেয়। চীনের চ্যাংই ৬ মিশনের মাধ্যমে এই সুযোগ করে দিয়েছে চীন। পাকিস্তানের এই স্যাটেলাইট নির্দিষ্ট কক্ষপথে থেকে কিছু ছবি তুলবে, এটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করবে না।
চাং’ই–৬ মনুষ্যবিহীন রকেটটি আজ দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশের ওয়েনচাং স্পেস লঞ্চ সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। ৫৩ দিনের এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে, চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য প্রায় দুই কিলোগ্রাম নমুনা পৃথিবীতে আনা।
চাঁদের ওই অংশকে চাঁদের অন্ধকার দিক হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। কারণ, অংশটি পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান নয়। সেখানে সূর্যরশ্মি পৌঁছায় না। অংশটির ভূত্বক অপেক্ষাকৃত পুরু। সেখানে গর্তের সংখ্যা বেশি। পৃথিবী থেকে চাঁদের যে অংশটি কাছে, তার চেয়ে অন্ধকার অংশে লাভা প্রবাহও কম।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, লাভা প্রবাহ কম থাকায় এ অংশ থেকে এমন উপাদান সংগ্রহ করা সম্ভব যা দিয়ে চাঁদের গঠন সম্পর্কে জানা যাবে।
চীনের লুনার এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড স্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারের উপপরিচালক জি পিং উৎক্ষেপণের আগে সাংবাদিকদের বলেন, চাং’ই-৬ প্রথমবারের মতো চাঁদের দূরতম প্রান্ত থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে।
রকেটটির নামকরণ করা হয়েছে চাঁদের দেবী এবং চীনা পৌরাণিক কাহিনির অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের নামে। এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু-আইটকেন বেসিনে অবতরণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে—যা প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার (১,৫৫৩ মাইল) প্রশস্ত এবং ৮ কিলোমিটার (৫ মাইল) পর্যন্ত গভীর।
অবতরণের পর চীনা রকেট চাঁদের মাটি ও শিলা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালাবে।
এই দশকে চীন চাঁদে তিনটি মনুষ্যবিহীন অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছে। তার প্রথম ধাপ হচ্ছে চাং’ই-৬ প্রোবকে চাঁদে পাঠানো। চীনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, চাং’ই-৭ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পানি অনুসন্ধান করবে এবং চাং’ই-৮ আন্তর্জাতিক চন্দ্র গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা যাচাই করবে।
এর আগে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ফিরে আসার সময় চাঁদ থেকে নতুন সৃষ্ট লাভা উদ্ধার করেছিল চাং’ই-৫।
চীনের মহাকাশ অনুসন্ধান কর্মসূচির সর্বশেষ এই পর্যায়কে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হিসেবেও ধরা হচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে চীন চাঁদে প্রথম নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। সে সঙ্গে, মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য নভোযান পাঠানোর লক্ষ্যও আছে চীনের।