জলবায়ু পরিবর্তনে ৫০ বছরে ২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু : জাতিসংঘ
চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া গত অর্ধশতাব্দীতে ২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু এবং ৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়েছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও) থেকে সোমবার প্রকাশিত নতুন পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৭০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১১ হাজার ৭৭৮টি আবহাওয়া সম্পর্কিত বিপর্যয় ঘটেছে।
এসব দুর্যোগে ৯০ শতাংশেরও বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।
এক বিবৃতিতে ডাব্লিউএমও প্রধান পিটারি তালাস বলেন, দুর্ভাগ্যবশত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলো আবহাওয়া, জলবায়ু ও পানি সম্পর্কিত বিপর্যয়ের ধাক্কা সহ্য করে।
তিনি বলেন, গেল সপ্তাহে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের ওপর আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় মোখা এই বাস্তবতার উদাহরণ। তীব্র এই ঝড় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে… এতে ক্ষতি হয়েছে দরিদ্রতম মানুষদের। তবে ডাব্লিউএমও বলছে যে প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থার উন্নতি এবং সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ফলে হতাহতের সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমেছে।
তালাস বলেন, অতীতে মোখার মতো এ রকম ঘূর্ণিঝড়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে বহু মানুষের মৃত্যু হতো। মিয়ানমারের জান্তা সরকার অবশ্য বলেছে, সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি হয়েছে ১৪৫ জনের। তবে এই সংখ্যা আরো বেশি বলে শঙ্কা রয়েছে।
দুর্যোগজনিত কারণে ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরা ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি দেখায় যে শুরুর দিকে বিশ্ব প্রতিবছর ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি দেখেছে।
২০১০-এর দশকে দুর্যোগে প্রতিবছর প্রাণহানি ২০ হাজারের নিচে নেমে যায়।
সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে ডাব্লিউএমও বলেছে, ২০২০ ও ২০২১- এই দুই বছরে বিশ্বজুড়ে দুর্যোগজনিত প্রাণহানি হয়েছে ২২ হাজার ৬০৮টি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক সতর্কতা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে ধন্যবাদ। বিপর্যয়মূলক মৃত্যুহার এখন ইতিহাস। প্রাথমিক সতর্কতা জীবন বাঁচায়।
২০২৭ সালের শেষদিকের আগেই সব দেশকে প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থায় আনা নিশ্চিতে জাতিসংঘ একটি পরিকল্পনা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র অর্ধেক দেশেই এ ধরনের ব্যবস্থা চালু আছে।
ডাব্লিউএমও সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যেখানে প্রাণহানির সংখ্যা কমতির দিকে, সেখানে আবহাওয়াজনিত দুর্যোগে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। সংস্থাটির রেকর্ড করা তথ্য বলছে, ১৯৭০ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সাত গুণ বেড়েছে। প্রথম দশকে দিনে যেখানে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪৯ ডলার, শেষ দশকে সেখানে প্রতিদিনকার ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮৩ ডলারে।