জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ঐতিহাসিক চুক্তি
কানাডার মন্ট্রিয়ল শহরে আয়োজিত জাতিসংঘের জীববৈচিত্র্য সম্মেলনে পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান সুরক্ষায় সোমবার ঐতিহাসিক চুক্তি হয়েছে। চীনের পরিবেশমন্ত্রী হুয়াং রুনকিউয়ের সভাপতিত্বে এই চুক্তিতে চীন ছাড়াও বিশ্বের ১৯০টি দেশ স্বাক্ষর করেছে।
প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনফারেন্স অব পার্টিজের (কপ) ১৫তম এ সম্মেলনে গৃহীত চুক্তিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে পরিবেশ ধ্বংসের বিপরীতে বড় ঐতিহাসিক অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
‘প্রকৃতির সঙ্গে শান্তিচুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত হওয়া চুক্তিটির চারটি দিক বিশ্লেষণ করেছে ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এএফপি।
ত্রিশের মধ্যে ত্রিশ : সম্পাদিত চুক্তিটির মূলভিত্তি হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ভূমি ও সমুদ্রের ৩০ শতাংশ রক্ষা করা। এই লক্ষ্যমাত্রা ‘ত্রিশের মধ্যে ত্রিশ’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ১৭ শতাংশ ভূমি এবং ৭ শতাংশ সমুদ্র সুরক্ষিত। গতকালের চুক্তিকে বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরা হলেও অনেক বিশেষজ্ঞ এতে সন্তুষ্ট নন। তাঁরা বলছেন, এসংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত ৫০ শতাংশ।
আদিবাসীদের অধিকার : পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকা জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চলের ৮০ শতাংশই আদিবাসী জনগোষ্ঠী দ্বারা অধ্যুষিত ও নিয়ন্ত্রিত। বিশ্বব্যাপী এ ধারণাটি স্বীকৃত যে আদিবাসী এলাকাতেই জীববৈচিত্র্য বেশি সুরক্ষিত থাকে। পরিবেশবাদী আন্দোলনকর্মীরা দাবি করে আসছিলেন যে সংরক্ষণের নামে আদিবাসীদের অধিকার বিনষ্ট করা যাবে না। কারণ এসব কর্মকাণ্ড তাদের প্রান্তিক ও বাস্তুচ্যুত করে। একে ‘সবুজ উপনিবেশবাদ’ আখ্যা দিয়ে আসছেন আন্দোলনকর্মীরা। আদিবাসীদের অধিকারকে গুরুত্ব দেওয়ায় জীববৈচিত্র্যসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদিবাসী ফোরাম চুক্তিপত্রের অঙ্গীকারকে স্বাগত জানিয়েছে।
অর্থায়নের ব্যবস্থা : দরিদ্র দেশগুলো বারবার বলছে, ধনী দেশগুলো তাদের শোষণ করার মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করেছে। সুতরাং তাদের উচিত হচ্ছে, দক্ষিণ গোলার্ধে থাকা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোকে বাস্তুসংস্থান সুরক্ষায় অর্থ দেওয়া। চূড়ান্তভাবে গৃহীত চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ধনী দেশগুলো জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিবছর দুই হাজার কোটি ডলার অর্থ দেবে। এ অর্থ বর্তমানে দেওয়া জীববৈচিত্র্যসংক্রান্ত সহায়তার দ্বিগুণ। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর কমপক্ষে তিন হাজার কোটি ডলার দিতে হবে, যা এসংক্রান্ত বৈশ্বিক সহায়তার তিন গুণ হবে। যুক্তরাষ্ট্র জীববৈচিত্র্যসংক্রান্ত কনভেনশনের সদস্য না হলেও চুক্তিপত্রের অঙ্গীকারে সমর্থন প্রকাশ করেছে। এই চুক্তিতে এমন ভাষা যুক্ত করা হয়েছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও এতে যুক্ত হতে পারে।
চুক্তিতে যা অনুপস্থিত : চুক্তিটিকে ঐতিহাসিক বলা হলেও পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ রয়ে গেছে। আশা করা হয়েছিল, ২০৫০ সালের আগে দেশগুলোর অর্জনের পরিসংখ্যানগত লক্ষ্যমাত্রা থাকবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চুক্তিতে মনুষ্যপ্রভাবিত নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতির বিলুপ্তি বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রজাতিগুলোর বিলুপ্তি ও ঝুঁঁকি ১০ গুণ হ্রাসের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এর আগের বছরগুলোতে দেশগুলোর জন্য কোনো লক্ষ্য স্থির করা হয়নি। এ ছাড়া জীববৈচিত্র্যসংক্রান্ত মূল্যায়ন ও প্রতিবেদন নিয়েও কোনো অঙ্গীকার রাখা হয়নি, শুধু ‘উত্সাহিত’ করা হয়েছে।