টোঙ্গার অগ্ন্যুৎপাত হিরোশিমা বোমার চেয়ে কয়েকশ গুণ শক্তিশালী: নাসা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সময় জাপানের হিরোশিমায় যুক্তরাষ্ট্র যে পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, তার চেয়ে টোঙ্গায় গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া অগ্ন্যুৎপাত কয়েকশ’ গুণ বেশি শক্তিশালী বলে জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটিতে সেদিন আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে সুনামির পাশাপাশি ‘নিশ্চিহ্ন’ হয়ে যায় গোটা একটি দ্বীপ।
এটিকে তিন দশকের মধ্যে ‘সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত’ উল্লেখ করে টোঙ্গা সরকার জানিয়েছে, সেখানে পাঁচ ভাগের চার ভাগ মানুষ সুনামি ও আকাশ থেকে পড়া আগ্নেয় ছাইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছেন অন্তত তিনজন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ জানুয়ারি হাঙ্গা টোঙ্গা হাঙ্গা হা’পাই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে আশপাশের দ্বীপগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একটি দ্বীপের সব বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং আরেকটি দ্বীপের মাত্র দুটি অবশিষ্ট রয়েছে।
অগ্ন্যুৎপাতের আগে হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হা’পাই ছিল দুটি পৃথক দ্বীপ, যার সঙ্গে ২০১৫ সালে নতুন ভূমি যোগ হয়। নাসা জানিয়েছে, অগ্ন্যুৎপাত এতটাই শক্তিশালী ছিল যে নতুন ভূমি পুরোপুরি গায়েব হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে পুরোনো দুই দ্বীপের বিশাল অংশও।
আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ছাই, গ্যাস ও বিষাক্তকণা মোকাবিলা টোঙ্গা সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। অগ্ন্যুৎপাত ও সুনামির পরপরই ধারণা করা হচ্ছিল, ছাইয়ের পাতলা আস্তরণ পড়ায় সেখানে পানি দূষিত হয়ে গেছে। এতে ডায়রিয়া-কলেরার মতো পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। তবে টোঙ্গার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক পরীক্ষায় ভূগর্ভস্থ ও বৃষ্টির পানি পানযোগ্য প্রমাণিত হয়েছে। তবুও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে রয়েছে আগ্নেয় ছাই। এতে শ্বাসকষ্টসহ হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, চোখ ও ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
অগ্ন্যুৎপাত-সুনামিতে ওই এলাকার একমাত্র ক্লিনিক ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অস্থায়ী হাসপাতাল বানিয়ে চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের। ধ্বংসলীলার পরপরই টোঙ্গার দিকে সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দেয় প্রতিবেশী দেশগুলো। বিমান ও নৌবাহিনী ব্যবহার করে টোঙ্গায় খাবার, পানি, ওষুধ, তাবুসহ ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।
অগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের পর টানা পাঁচদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল টোঙ্গা। বাকি বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করা ফাইবার-অপটিক ক্যাবল ছিঁড়ে যাওয়ায় কোনো ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ নেই দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। টেলিফোন লাইন মেরামত করে কোনোরকমে যোগাযোগের কাজ চালাতে হচ্ছে।
টোঙ্গা সরকার জানিয়েছে, ইন্টারনেট ক্যাবল সারাতে চলতি সপ্তাহে একটি জাহাজ পৌঁছানোর কথা। তবে সেটি পুরোপুরি সারাতে চার সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, অগ্ন্যুৎপাতে টোঙ্গার দ্বীপগুলোর ভয়াবহ অবস্থার দৃশ্য ফুটে উঠেছে স্যাটেলাইটের ছবিতে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির রাজধানী নুকু’আলোফাও। গত ১৮ জানুয়ারি মহাকাশপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টোঙ্গা দ্বীপপুঞ্জের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। এর কয়েকটি তোলা হয়েছে ২০২১ সালের এপ্রিলে এবং বাকিগুলো অগ্ন্যুৎপাতের পরে।
ছবিতে দেখা যায়, আগ্নেয়গিরি থেকে প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টোঙ্গার রাজধানী শহর পুরোপুরি ছাইয়ের চাদরে ঢাকা। আর অগ্ন্যুৎপাতের কেন্দ্রে থাকা দ্বীপটি এখন প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। এর মাত্র কয়েকটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অংশ পানির ওপরে দেখা যাচ্ছে।
অগ্ন্যুৎপাতে শক্তিশালী বিস্ফোরণে সৃষ্ট ছাইয়ের মেঘ ৬৩ হাজার ফুট পর্যন্ত ওপরে উঠেছিল, এর শকওয়েভ টের পাওয়া গেছে সুদূর আলাস্কাতেও।