ট্রাম্প ও প্রশাসনের অবহেলাতেই যুক্তরাষ্ট্রে করোনা দ্রুতগতিতে ছড়িয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের মহামারী খুব দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু গুরুত্ব দেননি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সরকার।
দেখেছেন গুরুত্বহীনভাবে। পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও নেন নি কোনও প্রস্তুতি। গড়িমসি করে শুধু সময়ক্ষেপণ করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা ও সরকার-প্রশাসনের অবহেলাই দায়ী। তাদের গুরুত্বহীনতার কারণেই ভাইরাসটির আক্রমণে বর্তমান অবস্থা। মাত্র দু মাস সময়ের মধ্যে করোনা সংক্রমণে বিশ্বের শীর্ষে পৌঁছে গেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এএফপির রিপোর্ট মতে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনার প্রথম রোগী ধরা পড়ে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর বিস্ফোরণ ঘটেছে। ছড়াচ্ছে বুলেটের গতিতে। ৬০ দিনের ব্যবধানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যায় বিশ্বের সবদেশেকে ছাড়িয়ে গিয়েছে দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম দেশ যেখানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ২৫৬ জন। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। মারা গেছে ২৩ হাজার ৭৫০ জন। মৃত্যুহার এখনও ইতালি ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের চেয়ে কম।
আক্রান্তের হার ও রোগের উপশম দেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, মৃত্যুর মিছিলেও তারা খুব দ্রুতই সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথম দিকে করোনাকে আমলে নেন নি ট্রাম্প। অপরদিকে করোনার ভয়াবহতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাবধানতাকে অবমূল্যায়ন করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। শীর্ষ নেতৃত্বে এই উদাসীনতায় গা ছাড়া ভাব দেখা যায় সরকার ও প্রশাসনের মধ্যেও।
রাষ্ট্রীয় রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিভাগ সেন্টার্স ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশ (সিডিসি) ভাইরাসকে যথাযথ গুরুত্ব দেয় নি। মহামারী রুখতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে সে বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে লেজেগোবরে করে ফেলে তারা।
করোনা প্রথমে ওয়াশিংটন ও ক্যালিফোর্নিয়ার মতো উপকূলীয় রাজ্যগুলোয় শিকড় গাড়তে শুরু করে। কিন্তু ভাইরাস প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
সংক্রমণ ঠেকাতে বেশি বেশি টেস্ট করার তাগিদ আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু এক্ষেত্রেও বড় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রশাসন। ডব্লিউএইচওর নির্দেশনা মেনে নিজেরাই টেস্টিং কিট উৎপাদন করতে চাইলেও রাজ্য ও স্থানীয় স্বাস্থ্যবিভাগকে সেই সময়মতো অনুমোদন দেয় নি সিডিসি।
সন্দেহজনক রোগীদের পরীক্ষা করতে নমুনা পাঠানো হচ্ছিল আটলান্টায় সিডিসির প্রধান কার্যালয়ে। প্রায় এক মাস সময়ক্ষেপণের পর রাজ্যগুলোতে শেষ পর্যন্ত টেস্টিং কিট পাঠালেও তা ছিল ত্রুটিপূর্ণ; ঠিকমতো কাজ করে নি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনভেস্টিগেটিভ সাংবাদিকদের সংগঠন প্রপাপলিকা কয়েক শ’ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছে। যেখানে উঠে এসেছে করোনাভাইরাস নিয়ে দেশটির শীর্ষ পাবলিক হেলথ এজেন্সি সিডিসির এই তাচ্ছিল্যের চিত্র।
অবহেলার পাশাপাশি রয়েছে সমন্বয়হীনতা। জাতীয়ভাবে করোনা মোকাবেলায় কোনও পরিকল্পনাই নেই সরকারের। ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্কের পর এখন অন্য রাজ্যগুলোর দিকে এগিয়ে চলেছে মহামারী।
কিন্তু এখনও পুরো দেশ লকডাউন করা হয় নি। দেশের ৪০ শতাংশ অঞ্চলই এখনও কার্যত উন্মুক্ত। ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এসব অঞ্চল। ♦